ব্যাপক মতবিনিময়ের ভিত্তিতে হওয়া উচিৎ -খসড়া স্বাস্থ্যনীতি

২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির পর বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৬ সালে স্বাস্থ্যনীতির একটি খসড়া করা হয়। এ দুটি স্বাস্থ্যনীতির হালনাগাদের ভিত্তিতে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আরেকটি খসড়া স্বাস্থ্যনীতি করা হয়। সবশেষে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার একটি নতুন খসড়া স্বাস্থ্যনীতি তৈরি করেছে, যার বক্তব্যের কোনো কেন্দ্রবিন্দু (ফোকাস) খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি করা হচ্ছে, এই খসড়া স্বাস্থ্যনীতিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের অভিযোগ, এই খসড়ায় বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে বেসরকারীকরণের ওপর, যার ফলে ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল-ক্লিনিক-প্যাথোলজি সেন্টার ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে সুযোগ করে দেওয়া হবে। এতে রাষ্ট্রীয় খাতের স্বাস্থ্যসেবার মানের আরও অবনমন ঘটবে। খসড়া স্বাস্থ্যনীতিতে নারীস্বাস্থ্য ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার বিষয়গুলো উপেক্ষিত হয়েছে। উপেক্ষিত হয়েছে চিকিত্সাশিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের বিষয়গুলোও।
যেকোনো বিষয়ে জাতীয় নীতি প্রণীত হয় ওই বিষয় সম্পর্কে সরকারের সার্বিক দর্শন, নীতিগত অবস্থান ও দিকনির্দেশনা লিখিত আকারে জনসমক্ষে উপস্থাপনের লক্ষ্যে। সংশ্লিষ্ট মহলের এক বিরাট অংশ বলছে, এসবের কিছুই এতে পরিষ্কার নয়; প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় নিশ্চয়ই বেশ গলদ ছিল। প্রথমত, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি খসড়াটি কী প্রক্রিয়ায় প্রণীত হয়েছে, এর জন্য কোনো কমিটি গঠন করা হয়েছিল কি না। স্বাস্থ্যনীতির খসড়া প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ, পেশাজীবী বা সচেতন নাগরিকদের অংশগ্রহণ সুগম করার আন্তরিক উদ্যোগ ছিল না। পুরোনো খসড়াগুলো নকল করে, কেটে-জুড়ে নতুন এই খসড়া প্রণয়নের কাজটি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত জাতীয় জনসংখ্যানীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচজন বিশেষজ্ঞ জনসংখ্যানীতির খসড়া তৈরি করেছেন। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের প্রক্রিয়ায়ও এমনটিই হওয়া উচিৎ।
যথাযথ প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ ও সুদক্ষ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে খসড়া প্রণয়নের পর তা নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে আলোচনা-পর্যালোচনা ও মতবিনিময়ের আয়োজন করা উচিৎ। সংবাদমাধ্যমে খসড়ার আধেয় নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিৎ। অর্থাত্ এটি হওয়া উচিৎ ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি শুধু স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসাপেশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয় নয়, নাগরিকদের মৌলিক অধিকারভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, গবেষক, অর্থনীতিবিদ এমনকি রাজনীতিকদেরও এ বিষয়ে মতামত থাকতে পারে। তাই খসড়াটি নতুন করে প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হোক।

No comments

Powered by Blogger.