তীব্র ক্ষুধার মধ্যে গাজায় হামলা জোরদারের ঘোষণা ইসরাইলের: ভোর থেকে কমপক্ষে ১১৬ হত্যা

তীব্র ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যুর দিন গুনছেন গাজাবাসী। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল পরিচালিত ত্রাণ সহায়তা কেন্দ্রগুলো যেন মৃত্যু ফাঁদ। রোববার স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ত্রাণপ্রার্থী ৩০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তেল আবিব। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে গাজার মধ্যাঞ্চলে হামলা জোরদারের ঘোষণা দিয়েছে দখলদাররা। এদিকে দেইর আল বালাহতে হামলা জোরাদের ঘোষণায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপত্যকাটিতে আটক জিম্মিদের পরিবার। তারা বলছে এতে জিম্মিদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এতে বলা হয়, গাজায় ২১ মাস ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এতে উপত্যকাটির বেশির ভাগই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এছাড়া ইসরাইলি বাহিনীর বাধার মুখে তীব্র ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভুগছে গাজার নিরীহ মানুষ। উত্তরাঞ্চলীয় শহরে অবস্থিত আল শিফা হাসপাতালের চিকিৎসকদের তরফে জানানো হয়েছে,  জাতিসংঘ পরিচালিত একটি ত্রাণ সহায়তা ট্রাকের সামনে ভিড় লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে ৩০ জন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে দাবি করেছে দখলদাররা।

সহায়তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় খাদ্য সংকট তীব্র হয়েছে। এতে শত শত গাজাবাসী মৃত্যুর প্রহর গুনছে বলছে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তারা জানিয়েছে, ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভুগতে থাকা শত শত গাজাবাসীর মৃত্যুর ঝুঁকি সম্পর্কে আমরা সতর্ক করেছি। এক্ষেত্রে গাজার মানুষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো দরকার বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

গাজার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শহর দেইর আল বালাহের মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে দক্ষিণে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়ে আকাশ থেকে লিফলেট ফেলেছে ইসরাইলি বাহিনী। তারা হামাস নির্মুলের নামে সাধারণ মানুষের ওপর ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

গাজায় ভোর থেকে কমপক্ষে ১১৬ হত্যা
রোববার ভোর থেকে দখল করে নেয়া গাজায় অব্যাহতভাবে গুলি চালিয়ে কমপক্ষে ১১৬ জনকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এর মধ্যে নিহত ৩৮ জন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত খাদ্য বিতরণকেন্দ্রে গিয়েছিলেন খাদ্য সংগ্রহে। কিন্তু বিনিময়ে তাদেরকে বুলেটবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, খান ইউনিসের দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং রাফার উত্তর-পশ্চিমে দুটি স্থানে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, মে মাসের শেষ দিকে জিএইচএফ চারটি বিতরণকেন্দ্র চালু করার পর থেকে ইসরাইলি সেনা ও বেসরকারি সামরিক ঠিকাদারদের গুলিতে প্রায় ৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর আগে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতব্য সংস্থা পরিচালিত প্রায় ৪০০ কেন্দ্র প্রতিস্থাপন করে এসব বিতরণকেন্দ্র চালু করা হয়েছিল।

ওদিকে জর্ডানের রাজধানী আম্মানের আল-তাফাইলা জেলায় গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। আল জাজিরা নিশ্চিত করেছে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা গাজার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে স্লোগান দিচ্ছে এবং ইসরাইলের ক্ষুধাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের নীতি ও চলমান আগ্রাসনের নিন্দা করছে।

অন্যদিকে ইসরাইলে বিশাল জনসমাগমে বিক্ষোভকারীরা গাজায় আটক ৫০ জীবিত ও মৃত বন্দির মুক্তি এবং যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি সমন্বিত চুক্তির দাবি তুলেছে। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা জানি চুক্তির খসড়া রয়েছে, যা নেই তা হলো শেষ ধাক্কা। সেই দৃঢ়তা যা কেবল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই আনতে পারেন। আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনুরোধ করছি, এগিয়ে আসুন। আপনার ক্ষমতা ব্যবহার করুন। বিশ্বকে দেখান যে স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ। জিম্মি ইতাই চেনের (যার মৃতদেহ গাজায় আছে) বাবা রুবি চেন এ কথা বলেন। বিক্ষোভকারীরা ‘বড়, সুন্দর চুক্তি’ করার আহ্বান জানিয়ে ট্রাম্পের উদ্দেশে ব্যানারও প্রদর্শন করেন। লিওর রুদায়েফের (যার মৃতদেহ গাজায় আছে) ছেলে নাদাভ রুদায়েফ সরাসরি ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সব পক্ষকে চাপ দিতে আপনি যা পারেন করুন, দয়া করে।

ওদিকে, রামাল্লাহর কাছের আল-মুগাইয়ির গ্রামে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানে ডজনখানেক মানুষ কাঁদানে গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এর আগে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা গ্রামে প্রবেশের চেষ্টা করলে স্থানীয়রা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অন্যদিকে, রামাল্লাহ সংলগ্ন নীলিন গ্রামে এক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। বসতি স্থাপনকারীরা একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে হামলা চালায় এবং প্রতিরোধকারী গ্রামবাসীর দিকে গুলি ছোড়ে, যদিও আর কোনো হতাহতের খবর নেই। গাজার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.