অঞ্জু ঘোষের নাগরিকত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি চরমে

ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেয়া ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ -খ্যাত অঞ্জু ঘোষের নাগরিকত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি চরমে পৌঁছেছে। প্রশ্ন উঠেছে অঞ্জু ঘোষ কি আদৌ ভারতীয় নাগরিক নাকি বাংলাদেশের নাগরিক? বুধবার ভারতীয় জনতা পার্টির পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত দিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ। এরপর থেকেই তার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, দেশের মানুষ আর বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন না। তাই ওপার বাংলা থেকে ওদের লোক নিয়ে আসতে হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। তবে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ বৃহস্পতিবার বারে বারে প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছে যে, অঞ্জু ঘোষ ভারতেরই নাগরিক। এমনকি বার্থ সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, ভোটরকার্ড, আধার কার্ড এই সব প্রমাণ হিসেবে হাজির করা হয়েছে।
কিন্তু এই প্রমাণগুলো খতিয়ে দেখতে গিয়ে বিভ্রান্তি আরো বেড়েছে। অঞ্জু ঘোষ ষে বাংলাদেশের ফরিদপুরের মেয়ে, এটা সকলে জানেন। সেখানেই তার জন্ম একথাও সকলে জানেন।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশে গিয়ে তিনি মিডিয়ার কাছে বলেছিলেন ফরিদপুরেই তার জন্ম। তবে চট্টগ্রামে তার পড়াশোনা। বাংলাদেশি অঞ্জু গত ২০ বছরের বেশি সময় কলকাতায় থাকলেও তিনি কি ভারতের আইনগত নাগরিকত্ব পেয়েছেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। বৃহস্পতিবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তার ফেসবুকে অঞ্জু ঘোষের বার্থ সার্টিফিকেট হাজির করে প্রমাণ করেছেন তার জন্ম ভারতেই। কলকাতা পুরসভার ২০০৩ সালে দেয়া একটি বার্থ সার্টিফিকেটও তিনি পোস্ট করেছেন। তবে তাতে অঞ্জু ঘোষ নাম লেখা রয়েছে। এতদিন জানা ছিল, তার নাম অঞ্জলি ঘোষ। সিনেমা করার সময় নাম সংক্ষেপ হয়ে করা হয়েছিল অঞ্জু ঘোষ। জানা ছিল, তার জন্ম ১৯৫৬ সালে। জন্ম সালের সঙ্গে সার্টিফিকেটের জন্ম সালের কোনো মিল নেই। এখানে বলা হয়েছে, অঞ্জুর জন্ম কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ১৯৬৬ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর। তবে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, শ্রীমতী অঞ্জু ঘোষের বিজেপিতে যোগদানে বহু মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তাদের সন্দেহ অঞ্জু ঘোষ ভারতের নাগরিক কিনা। তার জন্ম প্রমাণপত্রই তার নাগরিকত্বের প্রমাণ। দিলীপ ঘোষের এই প্রমাণ হাজির করার পর থেকে তার ফেসবুকে বহু মানুষ এই বার্থ সার্টিফিকেটের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অঞ্জু ঘোষ অবশ্য তার নাগরিকত্ব নিয়ে স্পষ্ট কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।
শুধু বলেছেন, তার সবকিছুই ভারতে। ভারতেই তার পিতা-মাতা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তবে দিলীপ ঘোষের পাশাপাশি দলের সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার অঞ্জু ঘোষের যে পাসপোর্ট, আধার কার্ড, প্যান কার্ড ও ভোটার কার্ড পেশ করে অঞ্জুর ভারতীয় নাগরিকত্বর পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন, সেগুলোতে রয়েছে প্রবল অসঙ্গতি। নামের পার্থক্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে জন্ম সালেরও পার্থক্য। অঞ্জুর যে পাসপোর্ট দেখানো হয়েছে, সেটির মেয়াদ শুরুর তারিখ ২০১৮ সালে। যে অভিনেত্রী দীর্ঘদিন বাংলাদেশ এবং ভারতে অভিনয় করেছেন, তার পাসপোর্ট ২০১৮ সালের হয় কী করে? বিজেপির দাবি, এটি তার শেষ জারি হওয়া পাসপোর্ট। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে তার প্রথম পাসপোর্টের তথ্য কোথায়? যদি তিনি নাগরিকত্ব বদলে থাকেন, তা হলে কলকাতার জন্মের প্রশংসাপত্র আসে কোথা থেকে? বিজেপি তার যে ভোটার কার্ড দাখিল করেছে, সেটি ইস্যুর তারিখ ২০০২ সাল। অঞ্জু যদি ভারতেরই নাগরিক হবেন, তাহলে ভোটার কার্ড ২০০২ সালের কেন? তার যে প্যান কার্ড দেয়া হয়েছে, সেখানে আবার জন্ম সাল ১৯৬৭। এদিকে, বার্থ সার্টিফিকেট ও পাসপোর্টে একই নাম বলা হলেও প্যান কার্ড, আধার কার্র্ড ও ভোটার কার্ডে অঞ্জুর নাম দেয়া হয়েছে জ্যোৎস্না অঞ্জু ঘোষ। অঞ্জুর বিজেপিতে যোগদানের পর থেকে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোরদার জল্পনা। অঞ্জু ঘোষ কী ভারতীয় নাগরিক, নাকি তিনি বাংলাদেশি, এই নিয়ে বিজেপির উপর চাপ বাড়াতে রাজ্যের শাসকদলও তৎপর হয়ে উঠেছে। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছিল তার ছবি ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’।
ওই ছবিটি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল বাংলাদেশে। ১৯৯১ সালে কলকাতাতে ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’র রিমেক হয়েছিল। ওই ছবিতেও মূল ভূমিকায় ছিলেন অঞ্জু ঘোষ। তবে রিমেকে নায়ক হন চিরঞ্জিৎ। তারপর থেকে কলকাতাতেই থেকে যান অভিনেত্রী। ভারতে থাকলেও অঞ্জুর নাগরিকত্ব নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গিয়েছে। অথচ গত লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে অংশ নেবার জন্য বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস এবং টিভি অভিনেতা নূরকে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল। ফেরদৌসকে কালো তালিকাভুক্তও করা হয়েছে। সে সময় তৃণমূল কংগ্রেস বেশ চাপে পড়ে গিয়েছিল। একইভাবে এবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে বিজেপি।

No comments

Powered by Blogger.