হলে হলে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ

by  হাফিজ মুহাম্মদ/শাহনেওয়াজ বাবলু/মোহাম্মদ ওমর ফারুকঃ
পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে আছে গোটা ক্যাম্পাস। শেষ দিনের প্রচারণায় সরগরম ছিল হলগুলোও। তবে হলে হলে দেখা যায় ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ। হল গেট, ক্যান্টিন, টিভি রুম পর্যন্ত ছাত্রলীগের ব্যানার আর পোস্টারের দখলে। আর হলের বাইরে ছাত্রদল, কোটা সংস্কার আন্দোলন, বামজোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়েছেন নির্বিঘ্নে। শেষদিনের এমন প্রচারণায় ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য প্রার্থীরা সংশয় আর শঙ্কায় রয়েছেন। 
সাজেন্ট জহুরুল হক হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল: প্রচারণার শেষদিনে পুরো ক্যাম্পাস ছিল সরগরম। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, বামসহ বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়েছেন।
তবে হলগুলো ছিল ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে শুধুমাত্র প্রচারণা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। সেখানে নিজ নিজ হলের প্রার্থীরা হলের গেট, ক্যান্টিন এবং টিভি রুমে নিজেদের ব্যানার-পোস্টার টানিয়েছেন। রুমে রুমে গিয়ে বিতরণ করছেন লিফলেট। সরজমিন বিভিন্ন হল ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব প্রার্থীর ছোট-বড় পোস্টার, ব্যানার ও দেয়াল লিখনে হলগুলো ছেয়ে গেছে। কোথাও প্যানেলসহ ব্যানার আবার কোথাও প্রার্থীর একক পোস্টার ও ব্যানার চোখে পড়ছে। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ছাত্রলীগ ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল দুটিতে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের প্যানেল থাকলেও কোটা সংস্কার আন্দোলন, বামজোট ও অন্যান্য স্বতন্ত্র প্যানেলের পক্ষ থেকে ভিপি ও জিএস পদে কোনো প্রার্থী নেই। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন, বামজোট ও অন্যান্য স্বতন্ত্র প্যানেলে হল দুটিতে সদস্য পদে নির্বাচন করছেন কয়েকজন। তাদের কোনো পোস্টার-ব্যানার দেখা যায়নি।
এসএম হলের ছাত্রদল থেকে ভিপি প্রার্থী নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, আমি হলে মোটামুটি প্রচারণা চালিয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটি রুমে গিয়েছি। সব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই আমাকে ভোটের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে। আবার অনেকে ভয়ে কথা বলতে চায়নি। আমি জানি না এটা কিসের ভয়। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি জয়লাভ করবো। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগ মনোনীত ভিপি প্রার্থী সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত বলেন, শেষদিন বলে আমরা সারাদিন পুরো হলে প্রচারণা চালিয়েছি। হলের প্রায় শিক্ষার্থী আমাদের প্যানেলের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। ভোটে জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগের প্যানেল জয়যুক্ত হবে ইন্‌শাআল্লাহ।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ছাত্রলীগ মনোনীত ভিপি প্রার্থী সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত ও জিএস প্রার্থী মো. রিফাত উদ্দিন। এই হলে ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন, জিএস প্রার্থী সৈকত ইসলাম। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থী মুজাহিদ কামাল উদ্দিন, জিএস প্রার্থী জুলিয়ার সিজার তালুকদার। ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী নাহিদুজ্জামান সিপন জিএস প্রার্থী আল আমিন।
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেলের নাম সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ। এ প্যানেলটি ডাকসুতে ২৫টি ও ১৮টি হল সংসদের প্রতিটিতে ১৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পেরেছে। ছাত্রদল, বামপন্থি ছাত্রসংগঠন বা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদসহ কোনো ছাত্রসংগঠনই ডাকসু ও হল সংসদে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পারেনি।
বিজয় একাত্তর হল: বিজয় একাত্তর হলের সামনের রাস্তটি ছেয়ে আছে লিফলেটে। গাছের মগডালগুলো বাঁধা পড়েছে নির্বাচনী ব্যানারের রশিতে। হলের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল প্যানেলের ব্যানার। দেয়াল ঢেকে আছে বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছবি সংবলিত পোস্টারে। ডাকসুর হল সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি হলে ১৩টি করে আসনের বিপরীতে বিজয় একাত্তর হলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৩০ জন। সজিবুর রহমান সজীবকে ভিপি, নাজমুল হাসান নিশানকে জিএস ও মুহাম্মদ আবু ইউনুসকে এজিএস ঘোষণা করে এই হলে একমাত্র পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রদলের প্যানেল থেকে প্রার্থী তিনজন। সেখানে ভিপি পদপ্রার্থী মো. কাউসার এবং জিএস ও এজিএস পদপ্রার্থী যথাক্রমে বজলুর রহমান বিজয় ও তানজিল হাসান। প্রগতিশীল ছাত্র জোট প্যানেল থেকে লড়ছেন ১১ জন। কোটা আন্দোলনের প্যানেল থেকে শুধু ভিপি পদে লড়ছেন হাসানুল বান্না। এছাড়া স্বতন্ত্র পদপ্রার্থী আছেন দু’জন।
শনিবার প্রচারণার শেষদিনে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন প্রার্থীরা। হলের নির্বাচনী প্রচারণার হালচাল সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের ভিপি পদপ্রার্থী মো. কাউসার বলেন, প্রচারণা যথেষ্ট ভালো চলছে। কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। তবে তার আপত্তি ভোটের সময় নিয়ে। কাউসার বলেন, বিজয় একাত্তর হলে ভোটার শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। প্রশাসন ভোটের জন্য যে সময় নির্ধারণ করেছে তাতে দুই হাজার শিক্ষার্থী ভোট দিতে সক্ষম হবে। এতে সকল শিক্ষার্থীর ভোটাধিকার প্রয়োগ করা সম্ভব না। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে ভোটের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এলেও প্রশাসন তাতে টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিজয় একাত্তর হলে ভোটার সংখ্যা ৩,১৫৫ জন। ভোট গ্রহণের জন্য হলে ১৮টি বুথ স্থাপনের কথা রয়েছে। প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য তিন মিনিট নির্ধারণ করা হলে ৬ ঘণ্টায় ১৮টি বুথে ভোট দিতে পারবেন ২,১৬০ জন ভোটার। দুপুর ২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে পারবে- প্রশাসন থেকে এমন কথা বলা হলেও তাতে আশ্বস্ত নন কাউসার।
ভোটের সময়ের বিষয়ে ছাত্রলীগ প্যানেলের এজিএস পদপ্রার্থী মুহাম্মদ আবু ইউনুস বলেন, তারা প্রশাসনের যেকোনো সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত। ভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব প্রস্তুতি ভালোভাবেই সম্পন্ন করছি। ছাত্রলীগ সব সময় হলের শৃঙ্খলা ও ছাত্রদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে আসছে। আমি মনে করি হলের শিক্ষার্থীরা আমাদের সেই মর্যাদা রক্ষা করবে।’
হল সংসদে স্বতন্ত্র সাহিত্য সম্পাদক পদপ্রার্থী মো. জুবায়ের ইসলাম সানি মনে করেন, বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্রদের মধ্য থেকে যোগ্যরা নির্বাচিত হয়ে একটি সমন্বিত সংসদ গঠিত হলে শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে কল্যাণকর হবে। সেখানে কোনো দলীয় প্রভাব থাকবে না। সকলের সুচিন্তিত মতের ভিত্তিতেই সব সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। দলীয় প্রভাবমুক্ত ছাত্রবান্ধব হল সংসদই প্রত্যাশা করেন সাধারণ ভোটার শিক্ষার্থীরা। হলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শরীফ বলেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করবে, এমন যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হোক, এটাই তার প্রত্যাশা। হল সংসদে সানির বিপরীতে সাহিত্য সম্পাদক পদে লড়ছেন আরো দু’জন। এছাড়া সংস্কৃতি সম্পাদক পদে দু’জন, পাঠকক্ষ সম্পাদক পদে তিনজন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে দু’জন, সদস্য পদে আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে বিকল্প প্রার্থী না থাকায় এই হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত হচ্ছেন অভ্যন্তরীণ ও বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক দুই প্রার্থী।
কবি জসীমউদ্‌দীন ও শহীদুল্লাহ হল: ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে সয়লাব পুরো হল। রাস্তাঘাট ও খেলার মাঠ, বাগান সব জায়গায় নির্বাচনী ছাপ। আমেজ ও আনন্দ ছড়িয়ে পড়ছে কেন্দ্র থেকে হল পর্যন্ত। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে প্রার্থীদের একটু পরপর দৌড়ঝাপ। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। প্রচার-প্রচারণার শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। নিজেদের পরিচয় করিয়ে দিতে শেষ সময়ে হলে আসা আগতদের হাতে হ্যান্ডবিল তুলে দিচ্ছেন। যোগ্য প্রার্থী হলে নিজ নিজ ব্যালট নম্বর উল্লেখ করে ভোট প্রদানের জন্য আহ্বান জানান। হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ও ভোটারদের মাঝে রমরমা পরিবেশ। এখনো অনেক হল সংসদ প্রার্থীর পক্ষে ব্যানার, ফেস্টুন টানানো হচ্ছে। গতকাল প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন কবি জসিমউদদীন হল ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল ঘুরে দেখা যায় এ চিত্র। এ হল দুটিতে কেন্দ্রীয় সংসদের মতো বিভিন্ন দলীয় প্যানেল ও স্বতন্ত্র  প্যানেলে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
তবে ছাত্রলীগ মনোনীত সম্মিলিত শিক্ষার্থী সমর্থিত পূর্ণ প্যানেল অংশ নিলেও অন্য প্যানেলগুলো আংশিকভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ছাত্রলীগ প্যানেল ছাড়া অন্য প্যানেলগুলোর মধ্যে রয়েছে ছাত্রদল, কোটা সংস্কারের বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য, প্রগতিশীল ছাত্র জোট, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিভিন্ন পদের প্যানেল। তবে এসব প্যানেলের কোনোটিতে পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী নেই। কোনো প্যানেলে সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী রয়েছে আবার কোনো প্যানেলে সহ-সভাপতি ও আরো কয়েকটি পদসহ সাধারণ সদস্য পদের প্যানেল রয়েছে। কবি জসীমউদদীন হলে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬৮০। এরমধ্যে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন ভোটার হলের বাইরে থাকেন। বাকিরা হলেই অবস্থান করছেন। ছাত্রলীগের প্যানেলে ভিপি পদে লড়ছেন মো. ফরহাদ আলী, জিএস পদে ইমাম হাসান ও এজিএস পদে সাইফুল ইসলাম। এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্যানেলে এ হলে ভিপি পদে লড়ছেন মাহফুজুর রহমান খান, জিএস পদে সোহাগ হোসেন। প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য পরিষদে ভিপি, জিএস পদে তাদের প্রার্থী না থাকলেও এজিএসসহ আরো কয়েকটি পদে তাদের প্রার্থী রয়েছে। এর বাইরে অন্যদলের প্রার্থীদের হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী থাকলেও তাদের ব্যানার ফেস্টুন তেমন চোখে পড়েনি।
এ হলের ছাত্রলীগ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. ফরহাদ আলী বলেন, আমি নির্বাচিত হতে পারলে হলের সাধারণ ছাত্রদের জন্য কাজ করবো। আমাদের হলটি ছোট। সব হলের মতো এ হলেও সিট সংকট, খাবারের মান নিম্নমানের এবং হলে গ্যারেজের কোনো ব্যবস্থা নেই। এসব বিষয়ে কাজ করবো। হলের প্রতি ফ্লোরে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করবো। এছাড়া আমাদের হলেই এক পাশে কর্মচারীরা তাদের পরিবারসহ বাস করে তাদের অন্যত্র ব্যবস্থা করে হলের শিক্ষার্থীদের জন্য ঐ সিটগুলো বরাদ্দের জন্য ভূমিকা রাখবো। এ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সায়েদুল হকও হলের খাবারের মানের কথা বলেন। যে প্রার্থী ভালো নেতৃত্ব দিতে পারবে তাকেই তিনি ভোট দিবেন। এ হলের নবীন শিক্ষার্থী মো. মেসবাহুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল মুজাহিদ। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এ শিক্ষার্থীদ্বয় এখন গণরুমে উঠছেন। এক রুমে ২০/২২ জন শিক্ষার্থীর যাতে এক সঙ্গে থাকতে না হয় সে বিষয়ে যারা অবদান রাখবে তাদেরকেই ভোট দিবেন বলে জানান হলের নীবন এ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া হলের নিজস্ব একটি খেলার মাঠ চান তারা।
অন্যদিকে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলেও ছাত্রলীগের রয়েছে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল। অন্য প্যানেলগুলোয় দুই একটি পদে লড়লেও অন্য কারো পূর্ণাঙ্গ সদস্যের প্যানেল নেই। এ হলে মোট ভোটার সংখ্যা ২০৫০। এর মধ্যে হলে অবস্থান করছেন এক হাজারের অধিক। অন্যরা বাইরেই থাকেন। ছাত্রলীগের সম্মিলিত শিক্ষার্থী পরিষদে এ হল নির্বাচনে ভিপি পদে লড়ছেন হুসাইন আহমেদ সোহান, জিএস পদে ইরফানুল হাই সৌরভ এবং এজিস পদে সোহেল আহমেদ মিলন। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের এ হলে ভিপি পদে লড়ছেন সাইদুর রহমান রাফসান, জিএস মাহবুব আলম শাহীন এবং এজিএস মো. নূরুল আমিন নূর। ছাত্রদলের মতো অন্যান্য পরিষদেরও দুই একটি পদে প্রার্থী রয়েছে। আবার কেউ কেউ প্যানেলের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই লড়ছেন। তবে প্রথম তিনটি পদে স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থী দেখা যায়নি। এ হলের ছাত্রলীগ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী হুসাইন আহমেদ সোহান বলেন, অন্যসব হলের মতো আমাদের সংকটগুলোও একই ধরনের। তবে হলে ছারপোকার তাণ্ডব থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে ব্যবস্থা নিবো। এ হলটি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের হওয়ায় আমি হলের লাইব্রেরি আধুনিকায়নে ভূমিকা রাখবো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাইব্রেরির বই, গবেষণাপত্র অনলাইনে বসেই যাতে শিক্ষার্থীরা পড়তে পারে।
মৈত্রী হলে ‘ঈদের পরিবেশ’: মূল ফটকে ছোট ছোট দলে দাঁড়িয়ে নারী শিক্ষার্থীরা। হাতে নির্বাচনী প্রচারপত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গত কয়েকদিনে সকাল-সন্ধ্যা এমন চিত্রই দেখা গেছে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের সামনে। হলের ভেতরের পরিবেশ আরো বেশি উৎসবমুখর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ভোটার শিক্ষার্থী রোকসানা আফরিন বলেন, নির্বাচনী আমেজে হলের ভেতরে যেন ‘ঈদের পরিবেশ’ বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ছাত্র সংসদে ১৩ আসনের বিপরীতে মোট প্রার্থী ৩৪ জন। ভিপি ও জিএস পদে চারজন করে এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন দুইজন। কুয়েক মৈত্রী হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে কেবল ছাত্রলীগ। ছাত্রদল, কোটা সংস্কার ও বাম জোট থেকে কোনো প্যানেল নেই এই হলে। তবে রাজনৈতিক দলের বাইরে অপূর্ণাঙ্গ দুটি প্যানেল রয়েছে। ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদপ্রার্থী যথাক্রমে রাজিয়া সুলতানা কথা, শাওলীন জাহান সেঁজুতি ও জান্নাতুল হাওয়া আঁখি।
নুরুন্নাহার পলিকে ভিপি, সাগুপ্তা বুশরা মিশমাকে জিএস ও মুন্নী আক্তারকে সহ-সাধারণ সম্পাদক করে  ‘সাধারণ শিক্ষার্থী স্বতন্ত্র পরিষদ’ নামক প্যানেল থেকে লড়ছেন সাত জন। এছাড়া সুস্মিতা দে’কে ভিপি ও আনতারা লাবীবা প্রত্যাশাকে সাধারণ সম্পাদক করে ‘সচেতন শিক্ষার্থী প্যানেল’ থেকে ১১ জন ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন তিন জন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে রোকসানা আফরিন বলেন, মৈত্রী হল সংসদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ছাত্রলীগ প্যানেল ও সচেতন শিক্ষার্থী প্যানেলের মধ্যে। তবে প্যানেলের তুলনায় এখানে ব্যক্তিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। রোকসানা বলেন, যারা হলের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কাজের মধ্য দিয়ে সুপরিচিত পেয়েছেন, তারাই এগিয়ে থাকবে। এদিকে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী প্রোভা মনে করেন, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে রাজনৈতিক দলের বাইরে সচেতন শিক্ষার্থী প্যানেল ও সাধারণ শিক্ষার্থী স্বতন্ত্র পরিষদের মধ্যে।
নিজের সম্ভাবনার বিষয়ে শিরিন সুলতানা মানবজমিনকে বলেন, হলের শিক্ষার্থীরা ব্যক্তি ও দলের স্বার্থ ত্যাগ করে যদি যোগ্যতা বিচার করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে, তাহলে তিনিই জয় লাভ করবেন। নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে হলের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রার্থী নির্ণয় ও ভোট দেয়ার বিষয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
হল ছাত্রলীগ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী রাজিয়া সুলতানা কথা বলেন, সবাই সমান তালে প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যে কেউ নির্বাচিত হতে পারেন, তবে নিজের প্যানেলকেই এগিয়ে রাখছেন এই ছাত্রলীগ নেত্রী। নির্বাচিত হলে নিজেদের ইশতেহারের কথা তুলে ধরে তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
অমর একুশে হল: ডাকসু ও হল নির্বাচন নিয়ে অমর একুশে হলেও জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের মুখে উঠে আসছে নানা দাবি। খাওয়ার মান, হলের সিট অপ্রতুলতা, সাইকেল স্ট্যান্ড, একটি মাত্র খাবারের দোকান, শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত প্রোটিন সেবা, ইন্টারনেট সেবাসহ নানান সংকট রয়েছে এই হলটিতে। এর বাইরে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েও রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া। অন্যদিকে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যসব দলের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় কাজ করছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করছেন নির্বাচিত যেই হোক তাকে হলের অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা চাহিদার কথা মাথায় রাখতে হবে। একুশে হলের শহীদ রফিক ভবনের শিক্ষার্থী শান্ত বাৎশা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ছাত্রলীগের পাশাপাশি ছাত্রদলের বড় ভাইরাও দেখছি হলের প্রতিটি কক্ষে গিয়ে তাদের প্রচারণা চালাচ্ছেন। লিফলেট দিচ্ছেন। এতে মনে হয় সব দলের মধ্যে একটি বন্ধন সৃষ্টি হচ্ছে।
একই ভবনের শিক্ষার্থী তাসনিম আল রিফাত বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠ হওয়া নিয়ে আমার সন্দেহ হয়। নির্বাচনের দিন ভোট কারচুপিও হতে পারে। যেখানে জাতীয় নির্বাচনে কারচুপি হতে পারে, সেই জায়গায় এটাতো মাত্র একটা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা।
সালাম ভবনের নাজমুল ইসলাম নাহিন বলেন, আগে রাজনৈতিক বড় ভাইদের যেমন আচরণ ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি। এখন আর সেটা নেই। সবাই আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছে। আশা করি নির্বাচন শেষ হলেও এটা অব্যাহত থাকবে। একই ভবনের একরাম গাজী হৃদয় বলেন, নির্বাচন নিয়ে সবার মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ কাজ করছে। আমাদের কাছে সবদলের নেতাকর্মীরা আসছেন, ভোট চাইছেন। আমাদের সমস্যার কথা জানতে চাইছেন। এটা খুব ভালো লাগছে।
তবে কোনো কোনো শিক্ষার্থী মনে করছেন ছাত্রলীগের একধরনের আধিপত্য নির্বাচনে প্রভাব পড়বে। এ কারণেই বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রার্থীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্‌ল কাজ করছে। সরজমিন দেখা যায় একুশে হলে প্রচারণা চালাচ্ছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান। তিনি জসীমউদ্‌দীন হলে জিএস পদপ্রার্থী। কেন্দ্রীয় প্যানেলের জন্য তিনি প্রচারণা করতে এসেছেন এই হলে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছি। তবে মাঝে-মধ্যে দেখা যায় আমাদের পোস্টার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনের দিন কী হবে জানি না। বুঝেন-ই তো। কি ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে আমরা আগাচ্ছি।
হলটিতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করতে পারেনি ছাত্রদল। ১৩ জনের প্যানেলে তারা দিতে পেরেছে মাত্র পাঁচজনকে। এর মধ্যে ছাত্রদলের ভিপি পদে মোছাদ্দেক হোসেন সৌরভ, জিএস পদে মো. জসিম খান, এজিএস পদে সাব্বির হোসেন লড়ছেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগ থেকে ভিপি পদে তামিম মৃধা, জিএস পদে আহসান হাবীব এবং এজিএস পদে আলিফ আল আহাম্মেদ লড়ছেন। এর বাইরে স্বতন্ত্রভাবে ভিপি পদে নির্বাচন করছেন ছাত্রলীগের হলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান সুমন। হলটির ১৩শ’ ৪০ জন শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করতে প্রায় ৩৮ জন প্রার্থী বিভিন্ন পদে লড়ছেন। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল এবং স্বতন্ত্র ছাড়া এই হলে অন্যকোনো দল বা সংগঠনের শিক্ষার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। একুশে হলে ছাত্রলীগের এজিএস পদপ্রার্থী আলিফ আল আহাম্মেদ বলছেন, এখানে সবাই প্রচারণা করতে পারছেন, কেউ কোনো বাধার সম্মুখীন হচ্ছে না। এখন সবাই সঠিকভাবে ভোট দিলে ছাত্রলীগ জয়ী হবে এটা আমার বিশ্বাস।

No comments

Powered by Blogger.