বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক রোধী ব্যাকটেরিয়া: এখনই তৎপর না হলে মানুষ বাঁচানো যাবে না

অ্যান্টিবায়োটিকের মতো শক্তিশালী ওষুধ প্রতিরোধ করছে নানা ব্যাকটেরিয়া। বাংলাদেশের চিকিৎসা জগতে এটি এক মারাত্মক সমস্যা হয়ে দেখা দেবে।
রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ঢাকার তরুণ ডাক্তার রাজীব হোসাইন সরকার। রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথা অনুষ্ঠানের জন্য তিন পর্বের এ সাক্ষাৎকার গ্রহণ এবং অনুষ্ঠানটি তৈরি করেছেন স্বাস্থ্যকথার পরিচালক সৈয়দ মূসা রেজা।
ভবিষ্যতে সর্দি-কাশির মতো সাধারণ রোগও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন ডা. রাজীব। তিনি আরো বলেন,  সামান্য আঘাতও ডেকে আনতে পারে প্রাণঘাতী পরিস্থিতি।
ঘরে আগুন লাগলে মানুষ তা নিভানোর জন্য যেমন শশব্যস্ত হয়ে  ওঠে। তার সাহায্যে ছুটে আসে পাড়া প্রতিবেশী। অ্যান্টি-বায়োটিক রোধী জীবাণু ঠেকানোর কাজ সে ভাবেই জরুরি ভিত্তিতে করা প্রয়োজন। এ নিয়ে সময় নষ্ট করা মোটেও উচিত হবে না।
তিনি আরো জানান যে দু'বছর আগে কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে বন্যা দুর্গতদের মধ্যে কাজ করতে যেয়ে প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক রোধী ব্যাকটেরিয়ার বিষয়টি নজরে আসে। কান পাঁকা বা ত্বকের ছোটখাটো সমস্যা আক্রান্ত এ সব রোগীকে ওষুধ দিয়ে কোনো সুফল পাওয়া যায় নি। এ সব রোগীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পাঠানো হলে দেখা যায় তারা অ্যান্টিবায়োটিক রোধী ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসা বা ওষুধ সহজলভ্য নয় এমন একটি অঞ্চলে মানুষ কি করে অ্যান্টিবায়োটিক রোধী হয়ে উঠল তা কল্পনাতীত ব্যাপার।
পরবর্তীতে ঢাকার শিশু হাসপাতালের তিন বছরের এক রোগীর পরীক্ষা প্রতিবেদন দেখেও চমকে উঠতে হয়। শিশু এ রোগীও প্রচলিত সব অ্যান্টিবায়োটিক রোধী হয়ে গেছে বলে দেখা যায়।
এ সব চিত্র ভয় ধরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। অন্যান্য চিকিৎসকেরও কমবেশি একই অভিজ্ঞতা হচ্ছে বলেও জানান ডা. সরকার। যে কোনো রোগীই দুই থেকে তিনটা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী বলে চিকিৎসকরা দেখতে পাচ্ছেন।
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে যেয়ে তিনি জানান, বিনা ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক বেচাকেনা। সঠিক মাত্রায় বা ডোজে এর ব্যবহার না করা। রোগী একটু সেরে উঠলেই ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া। এতে ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক রোধী হওয়া সহজ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া, মানহীন বা ভেজাল ওষুধের বিক্রি হওয়া।
দেরি না করে অ্যান্টিবায়োটিক রোধী ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঠেকাতে সবার তৎপর হওয়া উচিত বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, সময় নষ্ট করার মতো সময় নেই।
জীবাণুর অ্যান্টি বায়োটিক হওয়া প্রতিরোধ করতে প্রথমেই বিনা ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত  সঠিক মানের অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন এবং বিক্রির নিশ্চয়তা থাকতে হবে।  চিকিৎসকের দেয়া ডোজ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। এ ছাড়া, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিষয়টি পাঠ্য তালিকাভুক্ত করতে হবে। গণ সচেতনতা সৃষ্টিতে সব সংবাদ মাধ্যম এবং টিভি চ্যানেলকে এগিয়ে আসতে হবে।
ডাক্তার রাজীব হোসাইন সরকার

No comments

Powered by Blogger.