খরস্রোতা ডাকাতিয়া এখন মৃত: দুই তীরে দখল by কামরুল ইসলাম

এক সময়ের খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদী বর্তমানে মৃত প্রায়। আর নদীর দুই তীর দখল করে বিল্ডিং নির্মাণ করায় সংকুচিত হয়ে পড়েছে নদী। এক সময় পাল তুলে নৌকা চলত। জেলেরা মাছ ধরত। নদী ছিল এখানকার কৃষি অর্থনীতির প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা। নদীর তীর ও জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা সংকুচিত হচ্ছে নদী। বুড়িগঙ্গা তুরাগ নদী দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করায় গত ২রা মার্চ পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী লাকসাম পৌরসভা ও ইউএনও’র উদ্যোগে ডাকাতিয়া দুই তীর পরিদর্শন করেন। নদীর নাব্যতা ফিরে পেতে ডাকাতিয়া নদী খনন ও  উচ্ছেদ অভিযান শিগগিরই শুরু হবে বলে জানান। এর মধ্যে গত ৬ই মার্চ থেকে নদীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণ শুরু হয়েছে।
নদীর পাড়ে বিভিন্ন রাইস মিল মালিকরা ছাঁই ফেলে নদীর তীর দখল করে নিচ্ছে। এছাড়া মিলের গরম পানি নদীতে ফেলার কারণে দিন দিন মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে ডাকাতিয়া। এসময় নদীর তীরের জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু বর্তমানে নদীতে মাছ না পাওয়ার কারনে জেলেরা অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটাচ্ছে। জেলেরা মাছ না পাওয়ার কারণে তারা বিভিন্ন পেশায় ঝুঁকে পড়ছে।
নদীর দুই তীরের কোনো পাড় নেই। দুই তীরের বাসিন্দারা স্থাপনা নির্মাণ করছে। প্রশাসনের নাকের ডোগায় দৌলতগঞ্জ বাজারে রেলওয়ে থেকে লিজ নিয়ে মার্কেটসহ বিভিন্ন বিল্ডিং নির্মাণ করছে। লাকসাম হাসপাতালের এক সিনিয়র নার্স নদীর পাশে জায়গা ক্রয় করে নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবন। এছাড়াও বাতখালী, শ্রীয়াং এলাকা চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের আবদুর রহিম নামে এক কর্মকর্তা বিল্ডিং নির্মাণ করছেন।
ডাকাতিয়া নদীটির দুই তীর দখল হওয়ার কারণে দিন দিন সংকুচিত হওয়ায় মরা খালে পরিণত হয়েছে। ১৬০ ফুট চওড়া নদীটি বর্তমানে ৬০ ফুটে পরিণত হয়েছে। ডাকাতিয়া নদীটির কারণে লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারটি এক সময় বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বড় বড় নৌকা, স্টিমার চলাচল করতো। তখনকার সময় দৌলতগঞ্জ গোলবাজারে নৌকা ও স্টিমারের ঘাট ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে নদীটি খনন না করায় পল্লী মাটি জমাটের কারনে বর্তমানে নৌকা, স্টিমার চলাচল করে না।
এছাড়াও ডাকাতিয়া নদীটি বিভিন্ন শাখা খালগুলো অস্তিত্ব একবারে বিলীন। ডাকাতিয়া নদীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শাখা খালগুলো দখল করে নিচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা।  এ ব্যাপারে পানি উন্নয়নের বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, আমাদের লোকজন কম। তাই পৌরসভার, এসি ল্যান্ড ও আমাদের সার্ভেয়ার দ্বারা ডাকাতিয়া নদীর সীমানা নির্ধারণ কাজ শুরু হয়েছে। যেসব বিল্ডিং সীমানার মধ্যে পড়বে ওইসব স্থাপনা ভাঙার জন্য নির্দেশ দেয়া হবে। যদি না ভাঙে তাহলে আমরা ওইসব স্থাপনা উচ্ছেদ করব। এরপর শুরু হবে খনন প্রক্রিয়া।

No comments

Powered by Blogger.