আমরা কোনো মঞ্চ তৈরি করছি না

বিএনপির সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সমমনা-শুভাকাক্সক্ষী বিশিষ্ট নাগরিকদের সামনে রেখে কোন মঞ্চ তৈরি করছি না। এই ধরনের কোন পরিকল্পনাও আমাদের নেই বলে দাবি করেছেন প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, প্রথম আলোতে এই সংক্রান্ত যে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে এটা ভোগাজ। এর কোন সত্যতা নেই। এই ধরনের কোন কমিটি কিংবা মঞ্চ আমি করছি না। এই ব্যাপারে কোন দায়িত্ব পাইনি। আমাকে কেউ কোন দায়িত্ব দেননিও। আমাকে কে দায়িত্ব দিবেন। তাছাড়া এই দায়িত্ব দিলেই বা আমি নিতে যাবো কেন? এছাড়াও সেখানে মঙ্গলবার বিএনপি-সমর্থক বা সমমনা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বৈঠক হওয়ার কথা বলা হয়েছে এই ধরনের কোন বৈঠকও আমার করার কথা নয়। সেটা আমি করিনিও। গতকাল বিকালে ৫টায় তিনি এই প্রতিবেদককে এই কথা বলেন। এছাড়াও আরো বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। পাশাপাশি বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহও বলেছেন, শত নাগরিকের কমিটি কিংবা মঞ্চ আমি করছি না। এই রকম কোন দায়িত্ব আমি পাইনি। প্রথম আলো এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। কিন্তু এই ধরনের কোন খবর প্রথম আলো আমাকে জানায়নি, আমার কাছে জানতেও চায়নি। এছাড়াও অন্য কেউ আমাকে কিছুই বলেনি। এমাজউদ্দীন স্যারের সঙ্গেও আমার এনিয়ে কোন কথা হয়নি। তার সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগও হয় না। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হয়। সেদিন দেখা হলো। এই রকম আর কি। বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে মঞ্চ তৈরি এবং এর নাম ঠিক করার জন্য দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে প্রথম আলোতে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এর কোন সত্যতা নেই দাবি করেন তারা দুজনই। প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, আপনি নাকি দায়িত্ব পেয়েছেন, বিএনপি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া ও তা সফল করানোর জন্য। বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে একটি মঞ্চও তৈরি করছেন ও এর নাম ঠিক করছেন? তিনি বলেন, এই ব্যাপারে কোন দায়িত্ব পাইনি। আমাকে কেউ কোন দায়িত্ব দেননি। আমাকে কে দায়িত্ব দিবেন। তাছাড়াও এই দায়িত্ব দিলেই বা আমি নিতে যাবো কেন? অন্য কেউ কি করছেন মঞ্চ? তিনি বলেন, এই ধরনের মঞ্চ হচ্ছে না, এটা হবে বলেও আমার জানা নেই। তিনি বলেন, বিএনপির আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। সেই জন্য আমরা বিএনপি চেয়ারপারসনকে অনুরোধ করেছি। আমরা মনে করি তারা নির্বাচনে গেলে ভালো করবে। তার সঙ্গে কথা বলেও আমাদের মনে হয়েছে তিনি নির্বাচনে যেতে চান। এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন এখন প্রার্থী খুঁজছেন। তিনি এমন প্রার্থীকে সমর্থন দিতে চান যিনি জয়ী হয়ে আসতে পারবেন। মাহফুজ উল্লাহ বলেন, বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগবে একদিন। এখনও সময় আছে। মঙ্গলবার তারা বিকালে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে এই সব কথা বলেন। বিএনপি কি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে? প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বিএনপি সরাসরি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিবে না। এই জন্য সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোন ঘোষণাও দল থেকে ও চেয়ারপারসনও দিবেন না। তবে বিএনপির কোন কোন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র তুলবেন, দল থেকে সিগন্যাল পেলে তখন জমা দিবেন। আপনার কি মনে হয় সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপির জন্য পরিবেশ অনুকূলে রয়েছে? তিনি বলেন, পরিবেশ কখনো আগে থেকেই ঠিক থাকে না। পরিবেশ ঠিক করে নিতে হয়। বিএনপি যদি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ও প্রার্থী সমর্থন দেয় তাহলে পরিবেশ তৈরি করার জন্য যা যা করানো দরকার সেটা করাতে হবে। সেটা করানো যাবে। বিএনপি কি এই জন্য নির্বাচন কশিমনের কাছে কোন চিঠি দিবে? তিনি বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং তৈরির জন্য বিএনপি কিংবা তাদের সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিবে। এই জন্য কি কি করতে হবে সেটারও আবেদন জানাবেন। বিএনপি চেয়ারপারসন প্রার্থী খুঁজছেন বলছেন, প্রার্থী এই পর্যন্ত কাউকে কি পাওয়া গেছে? তিনি বলেন, অনেকেই প্রার্থী হতে চাইবেন। এরমধ্যে যারা অভিযুক্ত হননি, পলাতক নন তাদের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হবে। সেই হিসাবে ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল মিন্টু উত্তরে প্রার্থী হতে পারেন। দক্ষিণে এখনও প্রার্থী ঠিক হয়নি। তবে আগে থেকেই ঠিক ছিল বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন। সেখানে পরিবর্তন হবে কিনা জানি না। আর চট্টগ্রামের প্রার্থীতো ঠিকই আছে। সেখানে মনজুর আলমের নামই রয়েছে। পরিবর্তন হলে সেটা পরে দেখা যাবে। শোনা যায় নাগরিক ঐক্য ফোরামের মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বিএনপি সমর্থন দিতে পারে? তিনি বলেন, এটা এখন হবে না। কারণ তিনি যদি দক্ষিণের প্রার্থী হতেন তাহলে সমর্থন দিতো। কিন্তু তিনি সেখানে নন উত্তরে প্রার্থী হচ্ছেন। আর এই কারণে সেটা হবে না। আপনার কি মনে হয় নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলন চালিয়ে রেখে সিটি নির্বাচন করা সম্ভব? তিনি বলেন, অবশ্যই সম্ভব। কারণ সিটি নির্বাচনে সফল হওয়ার জন্য কাজ করবেন ম্যান টু ম্যান। দায়িত্বও সেই রকম হবে। সেখানে সেইভাবে দায়িত্ব দেওয়া হবে। যেহেতু বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রার্থীকে সমর্থন দিবে না, দল থেকে কোন ঘোষণা দিবে না এই কারণে আন্দোলনও চলবে। কোন আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত হবে না। বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বলেন, বিশিষ্ট নাগরিকদের দিয়ে বিএনপি মঞ্চ তৈরি করবে, এই জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে, এই বিষয়টি আমার ঠিক জানা নেই। ফ্রাঙ্কলি স্পিকিং আমি এই ধরনের কোন দায়িত্ব পাইনি। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না বিএনপি কোন মঞ্চ করবে। যদিও বিএনপি নির্বাচন করেও তাহলে মঞ্চ হবে না। সেই ক্ষেত্রে অন্য কোন ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। আপনার কি মনে হয় এই সময়ে সিটি নির্বাচনে বিএনপির আসা উচিত ? তিনি বলেন, এটা এখনই বলা যাবে না। আমরা বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছি। কেন অংশ নেওয়া উচিত সেটাও বলেছি। কিন্তু নির্বাচন করবেন কি করবেন না সেটা বলেননি। আপনার কি মনে হয় বিএনপির পক্ষে এখন নির্বাচনে যাওয়ার পরিবেশ রয়েছে ? তিনি বলেন, এখনই বলা যাবে না। বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশ নিতে চান মনোনয়নপত্র কিনে রাখবেন। এরপর দল সিদ্ধান্ত নিলে তারা জমা দিবেন। তাছাড়া এখন নেতারা অনেকেই আÍগোপনে রয়েছেন। কেউ কেউ কারাগারে রয়েছেন। আবার কেউ কেউ পলাতকও রয়েছেন। এই অবস্থায় কারা কারা প্রার্থী হবেন সেটা দেখতে হবে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার সময়তো আছে আর মাত্র তিন কার্যবিদস? এটা কি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময়? তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত নিতে বেশি সময় লাগবে না। বিএনপি চেয়ারপারসন চাইলে একদিনের (বুধবার) মধ্যেই সিদ্ধান্ত হতে পারে। তাছাড়া বুধবার, শনিবার ও ২৮, ২৯ তারিখও নির্বাচন কমিশন খোলা থাকবে। এই সময়ের মধ্যে আগ্রহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে রাখবেন। সিদ্ধান্ত হলে ২৯ মার্চ শেষদিনে জমাও দিতে পারবেন। আগে সিদ্ধান্তটা হতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে নাগরিক হিসাবে দেখা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে বলেছি। তিনি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। তবে বিএনপি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে যাচ্ছে এমন কোন কথা বলেননি। এই কারণে এখনও আমরা বলতে পারবো না বিএনপি সিটি নির্বাচনে যাবে কিনা? অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে মঞ্চ তৈরি করছেন, ওই মঞ্চ তৈরির কাজে আপনি রয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ব্যাপারে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা সেটা এখনও আমাকে কেউ বলেনি। তিনি যে কমিটি করছেন, সেটা নিয়ে আজ (মঙ্গলবার) বিকালে বৈঠক হওয়ার কথা বলে পত্রিকায় দেখেছি। তবে কোন মঞ্চ তৈরি হবে, সেটা আমি তার সঙ্গে করবো এই রকম কোন দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়নি। তাছাড়া দায়িত্ব দেওয়া হলে বলতে সমস্যা কোথায়? মঙ্গলবার যে বৈঠক করেছেন এমাজউদ্দিন আহমেদ আপনি যাননি বৈঠকে? না, আমাকে বলা হয়নি। আপনার সঙ্গে তার এই বিষয়ে কোন কথা হয়েছে? তিনি বলেন, না এই বিষয়ে তার সঙ্গে আমার কোন কথা হয়নি। যদি বিএনপি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে বিএনপির পক্ষে কারা কারা প্রার্থী হতে পারেন সেটা জানেন কি? তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমার জানা নেই। অনেকেই হয়তো মনোনয়নপত্র কিনবেন। দক্ষিণে খন্দকার মাহবুব হোসেন নির্বাচন করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে এটা কি সঠিক? তিনি বলেন, তিনি মুরব্বী মানুষ, তিনি কি নির্বাচন করবেন? আমার মনে হয় তিনি করবেন না। প্রার্থীদের ব্যাপারে আমার ঠিক জানা নেই। এদিকে আমাদের প্রতিবেদক এমিল রুনি গতকাল দুপুরে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত অধ্যাপক এমাজউদ্দীনের নিজ বাসভবনে দেখা করতে গেলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে দুই সিটিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সাময়িকভাবে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন হতে পারে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দলগুলোর মধ্যে যে অনাকাক্সিক্ষত রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা কমে আসবে এবং পরবর্তীতে জাতীয় সমস্যা নিরসনে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরিতে সহজ হবে। আসলে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। এক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের সমান সুযোগ সৃষ্টির ওপরই নির্ভর করবে সবকিছু। তিনি বলেন, যদি এই নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নিজেদের প্রমাণ করতে পারেন তাহলে উভয় দলের জন্যই একটি মর্যাদাপূর্ণ এক্সিট ওয়ে তৈরি হবে যার মাধ্যমে উভয় দলই মর্যাদার সাথে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে আর যদি তা না হয়, তাহলে সংকট আরো ঘনীভূত হবে যা কারোর জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।

No comments

Powered by Blogger.