লি কুয়ান ইউ : একটি আশ্রয়, একটি বুরুজ

আধুনিক আবাসনব্যবস্থা ও সবুজ সিঙ্গাপুরের স্বপ্নদ্রষ্টা লি কুয়ান ইউ গণমানুষের একটি আশ্রয়। তিনি কেবল রূপকার নয়, একজন কর্মকারও। যেন নিজের হাতে পরিশ্রম করে সৃষ্টি করেছেন। সিঙ্গাপুরবাসীর মাথার ওপর ছায়া হয়েছেন। উন্নত বুরুজ (দুর্গ, বুর্জ) হয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন সবসময়।
আধুনিক আবাসনের রাজমিস্ত্রি
গরিব ছিন্নমূল সিঙ্গাপুরবাসীর প্রতিটি নাগরিকের একটি নিজস্ব বাড়ি হোক- এই স্বপ্নটা স্বাধীনতার শুরুতেই দেখেছিলেন লি কুয়ান ইউ। তার ভাষায়, ‘আমি উপলব্ধি করেছিলাম মালিকানার অনুভূতি আমাদের নতুন সমাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কেননা আমাদের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার আলোকে তেমন কোনো গভীর শেকড় ছিল না।’ রাষ্ট্রনায়ক তার জনগণের রাজমিস্ত্রি হয়ে উঠলেন। ১৯৬০ সালে আবাসন উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেন তিনি। ১৬ তলা ভবন দিয়ে শুরু হয় উন্নত আবাসন প্রতিষ্ঠা। গত ৫০ বছরে সরকারি উদ্যোগে ১০ লাখের বেশি ফ্ল্যাটবাড়ি বানানো হয়েছে। সিঙ্গাপুরের ৮৭.২ শতাংশ মানুষ এখন ফ্ল্যাটবাড়ির মালিক।
দক্ষ জাতি গঠনের শিক্ষা-কারিগর
শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী নয়, দক্ষ জনসম্পদ গঠনে কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন লি কুয়ান ইউ। শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে অবকাঠামো ও কারিকুলামের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটান। পড়ালেখাকে সিলেবাসের বোঝা না বানিয়ে একটি ‘মজাদার উপহার’ হিসেবে প্রবর্তন করেন। দ্বিভাষী ব্যবস্থার মাধ্যমে ইংরেজিকে সার্বজনীন করলেও মাতৃভাষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। শিক্ষাব্যবস্থাকে ‘সমাজ-প্রকৌশলের হাতিয়ার’ বানাতে ১৯৭৫ সালে নিজেই চার মাসের জন্য শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। বর্তমানে দেশটির স্বাক্ষরতার হার ৯৭ শতাংশ। স্ট্রেইট টাইমস।
সবুজ সিঙ্গাপুরের প্রধান মালি
স্বাধীনতার পর আমি একটি চমকপ্রদ উপায় খুঁজছিলাম, যাতে তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে সিঙ্গাপুরকে আলাদা করে চেনা যায়। আমার মাথায় ‘পরিচ্ছন্ন ও সবুজ সিঙ্গাপুর’ গড়ার চিন্তা আসল। আমার সবুজায়ন কর্মসূচি সবচেয়ে মূল্যবান ও ফলপ্রসূ প্রজেক্ট।’ নিজের কর্মসূচি নিয়ে আÍজীবনী ‘তৃতীয় বিশ্ব থেকে প্রথম’ বইয়ে এভাবেই লিখেছেন লি কুয়ান ইউ। লি মনে করতেন জাতি গঠনের অবিচ্ছেদ্য অংশ সবুজায়ন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জঙ্গল থেকে বিভিন্ন গাছের চারা এনে লাগিয়েছিলেন তিনি। গড়ে তুললেন গ্রিন সিটি। এখন দেশটির ৫০ শতাংশ ভূমিই সবুজবেষ্টিত। আর বিশ্বের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন দেশ সিঙ্গাপুর।

No comments

Powered by Blogger.