নিজামের যোগসূত্র সবখানে by কাফি কামাল

একরাম হত্যা ঘটনায় পদে পদে বেরিয়ে আসছে সদর আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারীর যোগসূত্র। প্রথম থেকেই নিহতের পরিবার, নানা সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ভুক্তভোগী এবং ফেনীর সাধারণ মানুষ নিজাম হাজারীর দিকেই সন্দেহের আঙুল তোলেন। তবে কখনও বিএনপির মিনার চৌধুরীকে কখনও জয়নাল হাজারীকে দায়ী করেছেন নিজাম হাজারী। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে ততই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে সামনে আসছে তার নাম। ঢাকা ও ফেনীতে গ্রেপ্তারকৃতদের প্রত্যেকেই নিজাম হাজারী অনুগত ক্যাডার। র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, নিজাম হাজারীর অপারেশনের কথা বলেই কিলিং মিশনে সহায়তাকারীদের স্পটে জড়ো করেছিলেন কমিশনার শিবলু ও আবিদ। গ্রেপ্তারকৃত অন্যতম কিলার আবিদ সম্পর্কে এমপি নিজাম হাজারীর মামাতো ভাই। আবিদের মা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। হত্যাকাণ্ডের দিন সন্ধ্যায় পৌর ভবনে গিয়ে নিজাম হাজারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল আবিদসহ কিলারদের কয়েকজন। সে সময় তোলা একটি ছবিতে দেখা গেছে নিজাম হাজারী ও আবিদের হাস্যোজ্জ্বল মুখ। আবিদ ছাত্রদল কর্মী বলে প্রচার করা হলেও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর ছেলে কিভাবে ছাত্রদল কর্মী হয় এবং ছাত্রদলের রাজনীতি করলে সে কিভাবে ঘটনার দিন এমপির সঙ্গে পৌরভবনে গিয়ে বৈঠক করে এ প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে। হত্যাকাণ্ডের পর এমপির সঙ্গে খুনিদের বৈঠক ও শহরে প্রকাশ্যে তাদের ঘুরে বেড়ানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিহতের স্বজনরাও। কিলিং মিশনের ছক যিনি কেটেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সেই যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আদেল এমপি নিজামের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত। হত্যাকাণ্ডের আগের রাতে সর্বশেষ বৈঠকটি তার বাসায় হওয়ার কথা প্রকাশিত হয়েছে। তারপরও ঘটনার দু’দিন পর নিজাম হাজারীর উপস্থিতিতে জেলা আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে সক্রিয় ভূমিকা দেখা গেছে আদেলকে। হত্যাকাণ্ডের মূল বাস্তবায়নকারী জেহাদ চৌধুরীকে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদ থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছেন নিজাম হাজারী। গ্রেপ্তারকৃত কমিশনার শিবলু আওয়ামী লীগ নেতা এবং নিজাম হাজারীর অনুগত। গ্রেপ্তারের দিন সকালবেলা তিনি ছিলেন এমপির বাড়িতে। পুলিশ তাকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করতে চাইলে সে আত্মসমর্পণ করবে বলে পুলিশকে ফিরিয়ে দেন এমপি। এ ঘটনা সেখানে উপস্থিত সবাই দেখেছেন। গ্রেপ্তারকৃত সিপাত, সৈকত ও শিপনসহ অভিযুক্তদের বেশির ভাগই নিজাম হাজারীর মিছিল-মিটিংয়ের সক্রিয় মুখ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে শিপনকে এমপি নিজামের বডিগার্ডের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে। পুলিশের কাছে দেয়া ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে গ্রেপ্তারকৃত আবিদ জানায়, ‘নিজাম হাজারীর অপারেশন’-এর কথা বলে সহযোগীদের সেখানে জড়ো করা হয়। সহযোগীরা জানতেন, নিজাম হাজারীর অপারেশন হলে প্রশাসনের তরফে কোন বিপদ হবে না। জিজ্ঞাসাবাদের সময় একরামের পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া ছবি দেখানো হলে আবিদ অনুশোচনা করে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় নিজাম হাজারী ঢাকায় অবস্থান করলেও তার সঙ্গে ফোনালাপ করেছে খুনিদের কয়েকজন। হত্যাকাণ্ডের দিন একরামের গতিবিধি সম্পর্কে খুনিদের অবগত করেছে একদা তার ঘনিষ্ঠ ফুলগাজীর টুপি বেলাল। জেহাদ চৌধুরীর সঙ্গে মামা-ভাগ্নে সম্পর্কের এ টুপি বেলালের বাড়িতে গতকাল অগ্নিসংযোগ করেছে একরাম সমর্থকরা। অভিযোগ উঠেছে, একরামের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির পর সে নিজাম হাজারীর আশ্রয়ে থাকতে। প্রায়ই তাকে জেহাদ চৌধুরীর সঙ্গে এমপির বাসায় দেখা যেতো। এছাড়া টেন্ডার ও জেলা আওয়ামী লীগের পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব, জেল-জালিয়াতির প্রতিবেদন নিয়ে একরামকে দোষারোপ, ডায়াবেটিস হাসপাতালে একরামের কক্ষে তালা লাগানো, একরামের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ফুলগাজী যুবলীগ নেতা লোকমান হোসেনের ওপর হামলা, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরমানকে বহিষ্কার ও সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত ফুলগাজী সদর ইউপি ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেয়ার সৃষ্ট বিরোধের কারণে হত্যাকাণ্ডে এমপি নিজামের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে এমন সন্দেহ খোদ নিহতের স্বজনদের। হত্যাকাণ্ডে অস্ত্রের যোগানদাতা হিসেবে শিবলু ও জেহাদ চৌধুরীর নাম এলেও একরামের ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, তারা সে অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন জিয়াউল আলম মিস্টার ও শাহেদুল ইসলাম মামুনের কাছ থেকে। এদিকে হত্যা ঘটনায় মূল নির্দেশদাতা হিসেবে নিজাম হাজারী ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে আদেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর বিচারের দাবি এড়িয়ে নিজাম-আদেলকে বাঁচাতে এখন মরিয়া জেলা আওয়ামী লীগ। ফেনী আওয়ামী লীগের মুরব্বি আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমের নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রতিটি উপজেলায় নিজামের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করা হয়। একরামের বিচার দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা ও পোস্টার-ব্যানার সাঁটানোর ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের তরফে কড়া নিষেধ করা হয়েছে দলের নেতাকর্মীদের। নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের মুখে নিজাম হাজারীকে ফুলগাজীতে না পাঠাতে ঢাকায় আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমের কাছে ফোন করেছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম। কিন্তু নিজাম ফুলগাজীতে যাবেন এবং সেখানে তার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব আলিমকেই নিতে হবে বলে নির্দেশ দেন নাসিম। তার সে নির্দেশ পালন করতে গিয়ে ফুলগাজী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের চক্ষুশূল হয়ে পড়েছেন আবদুল আলিম। এছাড়া একরামের মাগফেরাত কামনা করে জেলা আওয়ামী লীগের তরফে একটি মিলাদ না হলেও নিজামের বিপদমুক্তি কামনায় পড়ানো হয়েছে একাধিক মিলাদ। এতে ফেনীবাসীর মনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে, নিজাম হাজারী নির্দোষ হলে নানামুখী এত তৎপরতা চালানোর কারণ কি?
গতকাল দিনভর ফেনীতে নিজাম হাজারীর এমপি পদ বাতিল ও দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হতে পারে এমন গুঞ্জন শোনা গেছে। এদিকে নিজামের জেল-জালিয়াতির যে প্রতিবেদনকে কেন্দ্র হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার অভিযোগ তোলা হয়েছে সেটি এখন ডিপ ফ্রিজে। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ নেয়নি।

অর্থ যোগানদাতা একাধিক!
হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে অর্থের যোগানদাতা হিসেবে প্রথমেই আলোচনায় উঠে আসে একরামের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিএনপি নেতা মাহতাবউদ্দিন মিনার চৌধুরীর নাম। ঘটনার দিন তাকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু দিন দিন বেরিয়ে আসছে নতুন তথ্য। অর্থের যোগানদাতা হিসেবে উঠে এসেছে আরও দু’টি নাম। হ্যাবের সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ ও ফেনী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল। একরামের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন শেখ আবদুল্লাহ। একরাম এমপি নির্বাচন করলে শূন্য আসনে তিনি উপজেলা নির্বাচনের জন্য নানামুখী তদবির-তৎপরতা চালান। এদিকে একরামের মৃত্যুর এক সপ্তাহ না পেরোলেও একরামের শূন্য আসনে উপনির্বাচনে তাকে সমর্থন দেয়ার ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগে আলোচনা হয়েছে। ফেনী সমিতির সভাপতি ও ফেনী-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মোস্তাফিজুর রহমান দুলালের গাড়িবহরে হামলা করেছিল একরাম সমর্থকরা। সে সময় থেকে একরাম-দুলালের মধ্যে তৈরি হয় বিরোধ। অর্থের যোগানদাতা হিসেবে মিনার চৌধুরী বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হলেও একরাম ঘনিষ্ঠরা বলছেন, শেখ আবদুল্লাহ ও মোস্তাফিজুর রহমান দুলালের কথাও তারা নানা সূত্রে জানতে পেরেছেন। এদিকে ঢাকায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন মিনার চৌধুরীর ভাইপো অনিক। তার গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ফের জোরেশোরে আলোচনায় উঠে এসেছে মিনার চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা। সেই সঙ্গে বিএনপি সমর্থিত এক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের ছেলেও গ্রেপ্তার হওয়ায় কেউ কেউ একরাম হত্যাকাণ্ডকে বহুরৈখিক মিশন বলেও মন্তব্য করছেন।
রিমান্ডে জামাই আদর!
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমাণ্ডে নিয়েছে পুলিশ। প্রথম দিন কোন অগ্রগতির কথা প্রকাশ করা হয়নি পুলিশের তরফে। তবে ফেনী পুলিশের অধীনে রিমান্ড এবং মামলার তদন্ত নিয়ে আস্থা নেই বেশির ভাগ মানুষের। সদর আসনের এমপি নিজাম হাজারী, গ্রেপ্তারকৃত কমিশনার শিবলু ও আওয়ামী লীগ নেতা জেহাদ চৌধুরীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের দহরম-মহরম সম্পর্ক রয়েছে ফেনী পুলিশের। এছাড়া থানার ১০০ গজের মধ্যেই নিজের অপকর্মস্থল থেকে মডেল থানা নিয়ন্ত্রণ করতো জেহাদ চৌধুরী। সে সম্পর্ক ভুলে পুলিশের পক্ষে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে তথ্য আদায় কতটুকু সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে সন্দিহান সবাই। অভিযোগ উঠেছে নিজাম হাজারীর কলকাঠিতেই খুনের ব্যাপারে আগাম তথ্য জানতো স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু একরামকে রক্ষায় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। হত্যাকাণ্ডের পর একরামের এলাকা ফুলগাজীর লোকজন যাতে শহরে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে না পারে সে জন্য এমপি নিজামের নির্দেশে সদর হাসপাতাল মোড়ে পাঠানো হয়েছিল পুলিশের একটি দল। তাদের কাছে একরামের গাড়িচালক সাহায্য চাইলেও হত্যাকাণ্ডের সময় তারা স্পটের দিকে আসেনি- এমন অভিযোগ উঠলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি ফেনী পুলিশের বিরুদ্ধে। এদিকে গ্রেপ্তারের প্রথম দিন কমিশনার শিবলুকে ওসির রুমে রাত কাটাতে দেয়া, হোটেল থেকে দামি খাবার এনে দেয়ার ঘটনায় সে সন্দেহ আরও বেড়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে রোববার উপজেলা চেয়ারম্যান ফাউন্ডেশনের নেতারা গ্রেপ্তারকৃতদের অন্য কারাগারে ও মামলার তদন্তভার সিআইডির কাছে স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের একরাম ঘনিষ্ঠ নেতারা জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের রিমাণ্ডে মুখ না খোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে উপর মহল থেকে। পরিকল্পনাকারীদের ব্যাপারে মুখ খুললে ক্রসফায়ারের ভয় ও অন্যথায় দ্রুত জামিনে বের করার টোপ দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা মামলাকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে জোরেশোরে।
আদেলের যত কীর্তি
ফেনী আওয়ামী লীগের বুদ্ধিদাতা হিসেবে খ্যাত জেলা যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আদেল। দুই হাজারীর আমলেই তিনি ছিলেন সেকেন্ড ইন কমান্ড। জয়নাল হাজারীর দোর্দণ্ড প্রতাপের সময় তার পাশে ছিলেন আদেল। পরে নিজামের সঙ্গে ভিড়েন। আদেলের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। জেলার সকল রাজনৈতিক খুন-খারাবির পরিকল্পক হিসেবে রয়েছে তার কুখ্যাতি। রাজাঝির দীঘির উত্তরপাড়ে সড়ক ও জনপথের ডাকবাংলোর একটি কক্ষকে নিজের অফিস বানিয়েছিলেন আদেল। সেখানে বসেই রাজনৈতিক গুটিবাজি, চাঁদাবাজি, জমির দালালি, দখল-বেদখল বাণিজ্য, শালিস বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম চালাতেন। একরাম কিলিং স্পটের কাছেই স্টেডিয়ামে ছিল তার আরেকটি অফিস। সেখানে বসতো সন্ত্রাসীদের মজমা। শহরের পূর্ব উকিলপাড়ায় তার বাড়িটি দখলকৃত। সেটি দাগনভূঁইয়া জনৈক সরকারি কর্মকর্তা মরহুম মোজাম্মেল হকের বাড়ি। মোজাম্মেল হকের ছেলেরা সরকারি চাকরিজীবী ও ঢাকায় অবস্থান করতেন। ফেনীর বাড়িতে থাকতেন এক ছেলে খুরশিদ হাসান ফিস। উচ্চশিক্ষিত চিরকুমার খুরশিদ হাসানকে মানসিকভাবে অসুস্থ প্রতিপন্ন করে তার বাড়িটি দখল করে নেয় আদেল। বাড়ি দখলের পর আবার ভাল মানুষের মতো শহরের একটি হোটেলে খুরশিদকে তিন বেলা ভাল-মন্দ খাবার ব্যবস্থাও করে দেন। ব্যক্তিগতভাবে অবিবাহিত আদেলের লাম্পট্য জীবনাচারের কথা ফেনীবাসীর মুখে মুখে। বিয়ে না করলেও তিনি একাধিক রক্ষিতা রেখেছেন।
ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন
একরাম হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে ফেনী জেলা ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল। সংবাদ সম্মেলনে জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন রিন্টু দাবি করেন গ্রেপ্তারকৃত আবিদ ও অনিক ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অনিক বিএনপি নেতা মিনার চৌধুরী বড় ভাই দিদার চৌধুরীর ছেলে, সৈকত বিএনপি সমর্থিত পরশুরাম উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাছিমার ছেলে এবং কাজী শাহনান যুবদল নেতা কাজী জাহিদের ছোট ভাই। অন্যদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পর্ক নেই। ওদিকে ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলনে একরাম হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে জেলা সভাপতি আমানউদ্দিন কায়সার সাব্বির ও সম্পাদক নঈমউল্লাহ চৌধুরী বরাত বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। জড়িতদের সবাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতি করে। তাদের এখন ছাত্রদল কর্মী বলে প্রচার করে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বেলালের বাড়িতে আগুন, মোমবাতি প্রজ্বলন
এদিকে রোববার রাতে গ্রেপ্তারকৃত কিলিং মিশনের মূল বাস্তবায়নকারী জেহাদ চৌধুরীকে গতকাল ৮ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খায়রুল আমিনের আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করে। ওদিকে আনন্দপুর ইউপি মেম্বার ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বেলালের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে একরাম সমর্থকরা। নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারীসহ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে দাবিতে এখন সোচ্চার ফুলগাজী আওয়ামী লীগ ও সাধারণ মানুষ। এছাড়া একরাম হত্যার বিচার দাবি করে ফুলগাজীতে সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বলন করেছে তার সমর্থকরা।

No comments

Powered by Blogger.