র‌্যাবের আর প্রয়োজন নেইঃ খালেদা জিয়া

গুম, খুন ও অপহরণের মতো মারাত্মক অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-এর আর প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, এটি এখন মানুষের দাবি। গত রাতে ঢাকা মহানগর বিএনপির ৩৮নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ নিখোঁজ ৭ জনের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি এ দাবি জানান। খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দেশে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের নিরাপত্তার জন্য প্রশিক্ষিত বাহিনী র‌্যাব গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে র‌্যাব গঠন করা হয়েছিল তারা সে কর্তব্য পালন করতে পারছে না। বর্তমান অবৈধ সরকার র‌্যাবকে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে দমনের জন্য অপহরণ-খুনসহ নৃশংস কাজে ব্যবহার করছে। তারা এখন গুম-খুনে জড়িয়ে পড়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়ির ভেতর থেকে ধরে নিয়ে খুন-গুম করছে। সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অবস্থান দাঁড়িয়ে গেছে। এ কারণে এ বাহিনীর আর প্রয়োজন নেই। তাই অবিলম্বে এ বাহিনী বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেন, আর কত মায়ের বুক খালি করবেন, এবার র‌্যাবকে বিলুপ্ত করুন। দেশে র‌্যাবের কোন প্রয়োজন নেই। খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, সুমনসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের যারা বাড়িতে এসে ধরে নিয়ে গেছে তাদের পরনে ছিল র‌্যাবের কালো পোশাক। এরা র‌্যাব ১-এর লোক। যেভাবে রাতের আঁধারে তাদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা র‌্যাবের লোক ছাড়া আর কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমাদের দেশে পুলিশ বাহিনী রয়েছে। পুলিশকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুশিক্ষিত করতে হবে। মানুষের বন্ধু হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, যারা নিখোঁজ হয়েছে তাদের পরিবার এখনও মনে করেন তারা জীবিত আছেন। তাই সরকারের উচিত তাদের (নিখোঁজদের) পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। ফিরিয়ে দিতে তাদের (র‌্যাবকে) নির্দেশ দেয়া। তা না হলে এ অবৈধ সরকার ও র‌্যাবকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। তাদের বিচার করা হবে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরে খালেদা জিয়া এ সময় হত্যা, গুম ও অপহরণের সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, বিএনপির সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আইনুল ইসলাম চঞ্চল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কুতুব উদ্দিনসহ মহানগর বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গতরাত ৮টায় রাজধানীর নাখালপাড়ার শাহীনবাগে সুমনের বাসায় যান বিএনপি চেয়ারপারসন। খালেদা জিয়াকে কাছে পেয়ে সাজেদুল ইসলাম সুমনের মাসহ কান্নায় ভেঙে পড়েন নিখোঁজ নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যরা। সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সেখানে খালেদা জিয়া নিখোঁজ নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটান এবং তাদের সান্ত্বনা জানান। এ সময় নিখোঁজ সুমন ছাড়াও জাহিদুল করিম তানভীর, কাউসার, আবদুল কাদের ভূঁইয়া মাসুম, মাজহারুল ইসলাম রাসেল, আসাদুজ্জামান রানা, আল আমিন, এএম আদনান চৌধুরীর স্বজনদের সান্ত্বনা দেন তিনি। উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ঠা ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে অপহৃত হন। সুমনকে অপহরণের সময় সঙ্গে থাকা তার খালাতো ভাই জাহেদুল করিম তানভীর, আবদুল কাদের ভূঁঁইয়া, মাজহারুল ইসলাম রাসেল, আসাদুজ্জামান রানা, আল আমিন নামে আরও ৫ জন অপহরণের শিকার হন। এর কয়েক ঘণ্টা পর রাত ২টায় সুমনের শাহিনবাগের বাসা থেকে আদনান চৌধুরী ও কাউসারকে তুলে নেয়া হয়। ওদিকে গুমের পর খুনের শিকার সাতজনের পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে ১৪ই মে’র পরিবর্তে আগামী ১৩ই মে নারায়ণগঞ্জ যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ১৪ই মে নিহতদের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানোর পর পূর্বনির্ধারিত সফরটি একদিন এগিয়ে আনে বিএনপি। নারায়ণগঞ্জ সফর ও সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি জানতে আজ রাতে জেলা বিএনপি নেতাদের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। গত রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এদিকে শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে আজ রাত সাড়ে ৮টায় গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন খালেদা জিয়া।

বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির দাবি বিএনপির
নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনা একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করার প্রস্তাব করছে বিএনপি। সে সঙ্গে নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে খালেদা জিয়ার নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার পূর্বনির্ধারিত দিনে তাদের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানোর সমালোচনা করেন তিনি। গতকাল সকালে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের কারামুক্তি উপলক্ষে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ সমালোচনা করেন। খালেদা জিয়ার নির্ধারিত সফরের দিন নিহতদের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানোর সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, এটাই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। তারা বিরোধী দলকে কর্মকা- করতে দিতে চায় না। বিএনপি চেয়ারপারসনের কর্মসূচি পূর্বনির্ধারিত। একই দিন প্রধানমন্ত্রী নিহতদের স্বজনদের ডেকেছেন। এটি কোন রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে বলে মনে করি না। আসলে আওয়ামী লীগের এ আচরণে সহনশীলতার লেশমাত্র নেই। র‌্যাবের প্রয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা আলমগীর বলেন, দেশে অপহরণ, খুন-গুমে সরকার র‌্যাবকে ব্যবহার করছে। র‌্যাবকে ব্যবহার করে মানুষের জান-মাল রক্ষা না করে জনগণের জীবন হরণ করা হচ্ছে। ফলে এখন আর র‌্যাবের প্রয়োজন আছে কিনা- জনগণের মধ্যে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মির্জা আলমগীর বলেন, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় কারা জড়িত তা এখন পরিষ্কার। সারা দেশে খুন, গুম ও অপহরণ সরকারের প্রশ্রয়ে হচ্ছে। কিন্তু সরকার মূল বিষয় ধামাচাপা দিতে চাইছে। জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা করছে। এদিকে বিএনপি সূত্র জানায়, একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠনের ব্যাপারে বিএনপির প্রস্তাবটি শনিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ একই দাবি জানিয়ে বলেন, সাবেক একজন প্রধান বিচারপতি, সাবেক একজন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও একজন মানবাধিকারকর্মীর সমন্বয়ে তিন সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি করতে হবে। এসময় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক সরাফত আলী সপুসহ সংগঠনের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.