পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ হলে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে

সমাজে একজন ‘চেঞ্জমেকার’ তাঁর চারপাশের গড়ে ছয়জন ব্যক্তিকে নারী নির্যাতন বন্ধে প্রভাবিত করতে পারেন। নারী নির্যাতন বন্ধে ধারাবাহিকভাবে তথ্য প্রদান ও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করলে মানুষ এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া শুরু করে।
আর পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ হলে নারী নেতৃত্ব বিকাশ, তাদের শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ হওয়াসহ সমাজে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। ‘আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট’ নামের একটি সংগঠনের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল রোববার রাজধানীর স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গবেষণা প্রতিবেদনের ফল উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি এ নিয়ে আলোচনা হয়।
সভাপতির বক্তৃতায় জোটের চেয়ারপারসন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘পারিবারিক সহিংসতা একটি মানবতাবিরোধী কাজ। তাই এ সহিংসতার মামলাগুলো দ্রুত বিচার আইনে করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।’ তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত নারীর প্রতি সহিংসতাকে সন্ত্রাস হিসেবে বিবেচনা না করা হবে, তত দিন পর্যন্ত নারীর প্রতি সহিংসতা কমবে না।
গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করেন জোটের সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক। মোট ৪২২ জন চেঞ্জমেকারের ওপর পরিচালিত গবেষণার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলা হয়, তাঁদের মতে, নারী নির্যাতনের ৩৬টি ধরন আছে। এগুলোর মধ্যে আছে যৌন হয়রানি, লেখাপড়া করতে না দেওয়া, স্বামী দ্বারা জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক, আঘাত, সবকিছুর জন্য দায়ী করা, গালাগাল, সন্দেহ, খাদ্যে বৈষম্য ও মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়া।
চেঞ্জমেকারদের ৩ শতাংশ মনে করেন, স্বামীরা হঠাৎ করে চড়-থাপ্পড় মারলে তা পারিবারিক নির্যাতন হবে না। ১৯ শতাংশ চেঞ্জমেকার মনে করেন, পুরুষের অধিকার নারীর চেয়ে বেশি। ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ মনে করেন, স্বামী জোর করে স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে পারেন।
উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা প্রশাসন ও পুলিশের কার্যকর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জবাবে সুলতানা কামাল বলেন, ফতোয়াবাজদের চিহ্নিত করতে হবে। নিজ নিজ এলাকায় সাংসদেরা নারী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে তাঁদের ভোট না দেওয়ার জন্য সাধারণ জনগণকে ভাবতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নরওয়ের রাষ্ট্রদূত রেঞ্জ বার্তে লন, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের প্রথম সচিব এলা ডে ভোজড, জোটের কো চেয়ারম্যান এম বি আকতার। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যক্তিরাও এতে অংশ নেন।

No comments

Powered by Blogger.