আজ থেকে আমরণ অনশন- আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় পূর্বঘোষিত শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচির সময় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষকদের দিকে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে শিক্ষকেরা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারেন। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরে শিক্ষকেরা আজ বৃহস্পতিবার থেকে প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে গতকালের কর্মসূচি শেষ করেন। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের ব্যানারে তিন দিন ধরে তাঁরা অবস্থান, মিছিলসহ কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
গতকাল সকাল থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষকেরা। বেলা একটার দিকে তাঁরা মিছিল নিয়ে মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে সচিবালয়ের দিকে রওনা হন। কিন্তু সচিবালয়ের ৫ নম্বর গেটের কাছে রাস্তায় পুলিশের দেওয়া কাঁটাতারের বেড়ায় মিছিলটি আটকে যায়। শিক্ষকেরা বাধা ডিঙিয়ে এগোতে চাইলে পুলিশ তরল কাঁদানে গ্যাস ছিটিয়ে দেয়। তখন পুলিশকে লক্ষ্য করে মিছিলের পেছন দিক থেকে পানির বোতল ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। ক্রমে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের মাত্রা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশও পাল্টা ইট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এতে শিক্ষকেরা পিছু হটে যান। পরে তাঁরা সংঘবদ্ধ হয়ে আবারও পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। পরে শিক্ষকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। ইটের আঘাতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। অনেকে কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁজে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেলা দুইটার দিকে একদল শিক্ষক শিক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা পোড়ান।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘বৃষ্টির মতো’ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। একপর্যায়ে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপে বাধ্য হয়েছে। উপকমিশনার বলেন, শিক্ষকদের আচরণ এমন হতে পারে না। শিক্ষকদের প্রতি পুলিশের যে দুর্বলতা আছে, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জামায়াত এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তাঁরা ধারণা করছেন।
রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমানসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
এদিকে পুলিশের বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার কুণ্ডু বাসদ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, পুলিশ পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। শিক্ষকদের কেউ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেননি। কর্মসূচি পণ্ড করতে পুলিশ ‘টোকাই’ দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় আড়াই শ শিক্ষক-কর্মচারী আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনায় জামায়াতে ইসলামী জড়িত—এ অভিযোগ প্রসঙ্গে তাপস কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘এটা অসম্ভব। আমরা সবাই শিক্ষক। এখানে কারও কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই।’
এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আগের দুই দিনের মতো গতকালও পুলিশ প্রেসক্লাব ও পল্টন এলাকায় সড়কের কিছু অংশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে রাখে। এতে আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

No comments

Powered by Blogger.