কাশ্মীরে সেনা 'হত্যা'-কড়া জবাব দেবে ভারত, পাল্টা চ্যালেঞ্জ পাকিস্তানের

কাশ্মীরের বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় দুই ভারতীয় সেনা হত্যার 'তীব্র প্রতিবাদ' জানিয়েছে ভারত। নয়াদিল্লিতে নিয়োজিত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত সালমান বশিরকে তলব করে গতকাল বুধবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় 'বর্বরোচিত ও নৃশংস' এ হত্যাকাণ্ডের কঠোর নিন্দা জানায়।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি বলেন, 'পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এ আচরণ চূড়ান্তভাবে উস্কানিমূলক।'
এর আগে মঙ্গলবার রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ পাকিস্তানকে 'সমুচিত' জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন। তাঁর দাবি, 'সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়ের লক্ষ্যে শুরু হওয়া শান্তি আলোচনা ব্যাহত করার স্পষ্ট ইঙ্গিত এ হত্যাকাণ্ড।' তবে দুই দেশকে বিভক্তকারী নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) পার হয়ে ভারত নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে সেনা হত্যার অভিযোগ গতকালও দ্বিতীয় দফা নাকচ করেছে পাকিস্তান। ভারতের অভিযোগের পরপরই গত মঙ্গলবার অভিযোগ অস্বীকার করে তারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার গতকাল বলেন, '২০০৩ সালের অস্ত্রবিরতি মেনে চলার প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। ফলে এ ধরনের (ভারতের) অভিযোগ একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা তদন্ত করে দেখেছি, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি- এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।' তিনি ভারতের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, জাতিসংঘের মতো তৃতীয় কোনো সংস্থাকে ঘটনার তদন্তে নিয়োগ দিতেও তাদের আপত্তি নেই। ভারতকে 'পরিণত চিন্তা' করারও পরামর্শ দেন তিনি।
ভারতের দাবি, গত মঙ্গলবার দুপুরে জম্মু থেকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার উত্তরে মেন্ধার সেক্টরে নিয়মিত টহলের সময় ভারতীয় সেনাদের ওপর হামলা চালায় পাকিস্তানি সেনারা। এতে দুই ভারতীয় সেনা মারা যায়। মরদেহগুলো ব্যাপক 'ক্ষতবিক্ষত' করা হয়েছে বলেও তাদের দাবি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যান্টনিও মরদেহের অঙ্গবিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারটিকে 'অমানুষিক' বলে নিন্দা জানান।
পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি অনুসারে তাঁরা সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে 'ঘটনার সত্যতা' পাননি। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, দুদিন আগে গত রবিবারের ঘটনা থেকে দৃষ্টি ফেরাতে ভারতীয় সেনাবাহিনী এ 'রটনা' ছড়াচ্ছে। পাকিস্তানের দাবি, রবিবার ভারতীয় সেনারা সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানি অংশে ঢুকে গুলি চালায়। এতে এক পাকিস্তানি সেনা মারা যায়। যদিও ভারত ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গতকাল নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত বশিরের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব রঞ্জন মাথাই। ৩০ মিনিটের এ বৈঠককে 'পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ভারতীয় সেনা হত্যার তীব্র প্রতিবাদ' জানান রঞ্জন। তিনি এ ঘটনাকে 'সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য' উল্লেখ করে বলেন, 'দুই ভারতীয় সেনাকে হত্যা করা হয়েছে। বর্বরোচিতভাবে মরদেহের অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে। এটা আন্তর্জাতিক রীতিনীতিবিরোধী আচরণ।' এ ব্যাপারে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়াসহ ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর ঘটে- সে ব্যাপারেও পাকিস্তানি সরকারের নিশ্চয়তা দাবি করেন রঞ্জন।
মঙ্গলবার রাতে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ বলেন, 'এটি (সেনা হত্যা) খুবই স্পর্শকাতর ও উদ্বেগের বিষয়। এ ব্যাপারে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ করব। বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে পাকিস্তান সরকারের সামনে তুলব আমরা।' তিনি সতর্ক করে বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের এ আচরণ 'বিরূপ-প্রভাব' ফেলতে পারে।
পাকিস্তানি পত্রিকা ডন গতকাল জানিয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশনস) ভারতীয় ডিজিএমওর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এর আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যান্টনিও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগের কথা জানান। বর্তমান পরিস্থিতির ওপর গভীরভাবে নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সূত্র : বিবিসি, জিনিউজ, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.