পবিত্র কোরআনের আলো-মুনাফিকদের স্বরূপ ও চরিত্র

৮। ওয়ামিনান নাছি মাইয়াকুলু আমান্না বিল্লাহি ওয়াবিল ইয়াওমিল আখিরি, ওয়ামাহুম বিমু'মিনিন।
৯। ইউখাদিউনাল্লাহা ওয়াল্লাজিনা আমানু, ওয়ামা ইয়াখদাউনা ইল্লা আনফুসাহুম ওয়ামা ইয়াশউরুনা।
১০। ফি কুলুবিহিম মারাদ্বুন, ফাযাদাহুমুল্লাহু মারাদ্বা, ওয়ালাহুম আজাবুন আলিমুম বিমা কানু ইয়াকজিবুন।
১১। ওয়াইজা কি্বলা লাহুম লাতুফছিদু ফিল আরদ্বি ক্বালু ইন্নামা নাহনু মুছলিহুনা।
(সুরা বাকারা, আয়াত : ৮-১১)

অনুবাদ
৮। মানুষের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের ওপর ইমান এনেছি; কিন্তু এরা ইমানদার নয়।
৯। এরা আল্লাহ ও তাঁর নেক বান্দাদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে, তারা অন্য কাউকে নয়, নিজেদেরই ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে। যদিও তাদের এ ব্যাপারে কোনো প্রকারের চৈতন্য নেই।
১০। এদের মনের ভেতরে রয়েছে ব্যাধি। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা এদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পীড়াদায়ক শাস্তি। কেননা তারা মিথ্যা বলেছিল।
১১। তাদের যখন বলা হয়, পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরাই তো হচ্ছি বরং সংশোধনকারী।

ব্যাখ্যা
উপরোক্ত আয়াতে কারিমাগুলো নাজিল হয়েছে মুনাফিকদের লক্ষ্য করে। এ সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। রাসুলে করিম (সা.) নবুয়তপ্রাপ্ত হয়ে যখন মুশরিক কোরাইশ সম্প্রদায়কে এক আল্লাহর প্রতি ইমান আনার আহ্বান জানালেন এবং তাঁর নবুয়তপ্রাপ্তির সংবাদ প্রচার করলেন, তখন কুরাইশরা তা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায়ে সত্যান্বেষী কিছু লোক যখন রাসুল (সা.)-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকলেন তখন সুবিধাবাদী কিছু লোক অন্তরে ইসলাম গ্রহণ না করলেও রাসুল (সা.)-এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করেছে বলে দাবি করতে থাকে। এরা আসলে সুবিধাবাদী। এদের অন্তরে ছিল কুফরি। এসব লোক আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করত না এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কেও আল্লাহর রাসুল (সা.) বলে বিশ্বাস করত না। কিন্তু এরা দোদুল্যমান ছিল। এরা মনে করত, যদি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সাফল্য এসেই যায়, তবে তাঁর সঙ্গে মিশে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করব। এরাই হলো মুনাফিক। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুলকে মুনাফিকদের কারসাজি সম্পর্কে অবগত করেছেন।
১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'তাদের অন্তরের মধ্যে ব্যাধি রয়েছে, অতঃপর আল্লাহ তায়ালা এদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন।' মুফাসসিররা এই আয়াতের ওপর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দান করেছেন। আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন মানে তারা যে কুফরিতে লিপ্ত রয়েছে, এর কর্মফল হিসেবে তাদের অন্তরের ব্যাধি বেড়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চান মানুষ হেদায়াতপ্রাপ্ত হোক, তাদের অন্তরের ব্যাধি দূর হোক। কিন্তু যারা তাদের অন্তরের ব্যাধি দূর করতে এবং হেদায়াত গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়, আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দেন। এটা তাদের নিয়তি বা ভাগ্যলিপি নয়, বরং কর্মফল।
১১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'তোমরা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না। তখন তারা বলে, আমরাই তো হচ্ছি বরং সংশোধনকারী।' এখানে বিভ্রান্তদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। বিভ্রান্তরা আসলে জ্ঞানপাপী। মুনাফিকদের সত্যের পথে আহ্বান জানানোর পর তারা কিন্তু সত্যকে বোঝার চেষ্টা করেনি। বরং তারা তাদের বিভ্রান্তিতে আরো অনড় থাকার চেষ্টা করেছে। তারা বলেছে, তারা নিজেরাই সংশোধনকারী। অর্থাৎ তারা সৎ পথ এবং অসৎ পথের পার্থক্য বুঝতে পারেনি। বুঝতে চায়ওনি। নিজেদের সংশোধনকারী বলার মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের ভ্রান্তপথের পথিক বলেই প্রমাণ করেছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.