স্মরণ-বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল by বিশ্বজিৎ পাল বাবু

আজ ১৮ এপ্রিল বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামালের চল্লিশতম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭১ সালের এই দিনে সম্মুখসমরে তিনি দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দেন। মোস্তফা কামাল চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামে। সেখানে নির্মিত হয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন সমাধি।


বিভিন্ন জাতীয় দিবসে প্রশাসন ও সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে ওই সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলার দৌলতখানের পশ্চিম হাজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাবা হাবিবুর রহমানের হাত ধরেই তাঁর যুদ্ধে আসা। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন তিনি যোগ দেন চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। তাঁকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই থেকে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই মোস্তফা কামাল ছিলেন অসীম সাহসী। পড়াশোনা খুব বেশি করেননি। দেশের প্রতি ছিল তাঁর অদম্য ভালোবাসা। যুদ্ধের স্মৃতি আওড়ে মোস্তফা কামালের সহযোদ্ধা আখাউড়ার তারাগন গ্রামের মোখলেসুর রহমান বলেন, 'পাকিস্তানি হানাদাররা সেদিন (১৮ এপ্রিল) চারদিক থেকে আমাদের ঘিরে ফেলে। নির্দেশ মোতাবেক সবাই যুদ্ধস্থান ত্যাগ করেন। পাঁচ গজ দূরত্বে অবস্থিত দুটি পরিখার ভেতর আমি আর মোস্তফা কামাল ছাড়া আর কেউ নেই। আমি তাঁকে পিছিয়ে যাওয়ার কথা বললেই তিনি রেগে বলে ওঠেন, 'আপনি চাইলে চলে যেতে পারেন। শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকতেও আমি গুলি চালানো বন্ধ করব না। হয় মারব, না হয় মরব। প্রাণ থাকতে শত্রুদের ঢুকতে দেব না।' জয় বাংলা বলে আরো দ্রুততার সঙ্গে তিনি শত্রুর মোকাবিলা শুরু করেন। আমাদের অবস্থান ছিল গঙ্গাসাগরের দুই কিলোমিটার উত্তরে দরুইন এলাকার দক্ষিণ-পশ্চিম মুখে। প্রথমে ছয়জন সেনা অবস্থা পর্যবেক্ষণে এলে তাদের কুপোকাত করি আমরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় দুই পক্ষের তুমুল গোলাগুলি। আক্রমণের ব্যাপকতা লক্ষ করে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বাতিল করে মুক্তিবাহিনী আস্তে আস্তে পিছু হটতে থাকে। কিন্তু মোস্তফা কামাল যেন একাই এক শ। তিনি সঙ্গীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এলএমজি চালাতে থাকেন। আমি তখন পিছু হটে একটি পুকুর পার হচ্ছিলাম। পাকিস্তানি বাহিনীর শেলের তোপের মুখে পড়ে একটি ড্রেনে আশ্রয় নিলাম। দেখলাম, পর পর ছয়টি শেল তাঁর পরিখা উড়িয়ে নিয়ে গেল। এর পরপরই আমি কোনো রকমে জীবন বাঁচিয়ে আখাউড়া চলে আসি। ২৩-২৪ বছরের একজন যুবকের যে এত সাহস থাকতে পারে, তা মোস্তফা কামালকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। সামরিক বাহিনী প্রণীত 'সিপাহি মো. মোস্তফা কামাল'-বিষয়ক রচনা থেকে জানা যায়, শত্রুরা তাঁর ৫০ গজ সামনে এসে আত্মসমর্পণের কথা বলে। প্রত্যুত্তরে মোস্তফা কামাল সঙ্গে থাকা দুটি গ্রেনেড ছুড়ে তার জবাব দেন। এর পর তিনি পরিখা থেকে এলএমজিসহ বেরিয়ে এসে জয় বাংলা হুংকারে দাঁড়িয়ে যান শত্রুর সামনে। যুদ্ধ করতে করতেই একসময় শহীদ হন তিনি। ওই দিন কমপক্ষে দেড় শ পাকিস্তানি সেনা তাঁর হাতে প্রাণ হারায় বলে জানা যায়। এই দিনে গভীর শ্রদ্ধায় তাঁকে আমরা স্মরণ করছি।
বিশ্বজিৎ পাল বাবু

No comments

Powered by Blogger.