ইলিশ আহরণ-ভরা মৌসুমে শূন্য ভাণ্ডার

মেঘনা নদীর ইলিশ আহরণ ক্ষেত্রে ভরা মৌসুমেও জেলেদের প্রায় খালি হাতে ফিরে আসার খবর এমন সময় পাওয়া গেল যখন দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে মৎস্য সপ্তাহ। আমরা বলছি না যে, নদীতে ইলিশের প্রাপ্যতা সরকারি কর্মসূচির ওপর নির্ভর করে। মাছ মিলবে কি-না, তার নেপথ্যে থাকে প্রাকৃতিক-অপ্রাকৃতিক অনেক কারণ।
প্রশ্ন হচ্ছে, মাঠের চিত্র সরকারি নীতি ও কর্মসূচিতে প্রতিফলিত হচ্ছে কি-না। মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে মৎস্য অধিদফতর যে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে, তাতে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত হয়েছে। কিন্তু মাঠের চিত্র যে ভিন্ন, বৃহস্পতিবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনেই তা স্পষ্ট। সেখানে বলা হচ্ছে, এপ্রিল-মে মাসে জেলেরা জাটকা ধরা থেকে বিরত থাকলেও ভরা মৌসুমে ইলিশ মিলছে না। অন্যদিকে ইলিশ পাওয়ার আশায় জেলেরা চড়া সুদে মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে আপদকাল পার করেছে। এখন একদিকে অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে নদীতে গিয়ে ইলিশ মিলছে না; অন্যদিকে কাঁধের ওপর চেপে আছে ঋণের বোঝা। বস্তুত জেলেদের জন্য সংকটজনক এই পরিস্থিতির দায় কেবল প্রাকৃতিক নয়। এটা ঠিক যে, মূলত সামুদ্রিক মাছ ইলিশের উজানযাত্রা অনেকাংশে নির্ভর করে বৃষ্টির পরিমাণ ও নদীর পানির স্বচ্ছতার ওপর। এখনকার ইলিশের আকাল হয়তো দু'এক সপ্তাহ পরে কেটে যাবে। কিন্তু নিষ্ফল অভিযানে গিয়ে জেলেরা যে দাদনের জালে জড়িয়ে পড়ছে, তা থেকে নিষ্কৃতির উপায় কী? আমরা মনে করি, সরকার যদি আপদকালীন সময়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি যথাযথভাবে পরিচালনা করত, জেলেদের মহাজনের দ্বারস্থ হতে হতো না। এখন যদি সরকারিভাবে কম সুদে কিংবা বিনাসুদে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা থাকত, খালি হাতে ফিরে এসেও জেলেরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারত। সবচেয়ে বড় কথা, কেবল জাটকা নিধন বন্ধ করে ইলিশ রক্ষা করা যাবে না। নদীতে যে দূষণ ঘটছে, বিভিন্ন তৎপরতার কারণে ইলিশের প্রজনন ও বৃদ্ধি যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাও রোধ করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বিষয়গুলো ভেবে দেখবেন বলে প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.