অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন-ইসির নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব নিশ্চিত হোক

নির্বাচনকালে সরকার ব্যবস্থা যাই থাকুক, নির্বাচন পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব থাকে নির্বাচন কমিশনের ওপর এবং এ কারণে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীন ও শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। গত দুই দশকে বাংলাদেশে যে কয়টি গ্রহণযোগ্য সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার পেছনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও অবদান সবাই স্বীকার করে।


তবে এটাও ঠিক যে সব ক্ষেত্রে কমিশন এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তার মূলে ছিল বিশেষ দলকে নির্বাচনে সুবিধা প্রদানের লক্ষ্য থেকে পক্ষপাতপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন এবং এর কারণে সৃষ্টি হয়েছে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট। এর পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই কাম্য নয়। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের ধারা দেশে চালু রয়েছে এবং তার ধারাবাহিকতা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করা চাই। এ জন্য সব রাজনৈতিক দল এবং সিভিল সোসাইটিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা দরকার। জাতীয় সংসদে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে এবং এ নিয়ে কেউ দ্বিমত করবে না। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা সংবিধানের এ ধরনের সংশোধনের বিরোধিতা করে তার পরিবর্তন দাবি করছে। এ ইস্যুটির নিষ্পত্তির জন্য তারা রাজপথের আন্দোলনের ওপরই জোর দিচ্ছে। তবে এটাও তাদের মনে রাখা চাই, নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই এবং নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব থাকা চাই। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, নির্বাচনের সময় যে পদ্ধতির সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন নির্বাচনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব চায় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের সময় তারা কাজ করবে কমিশনের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী। তিনি কথা বলেছেন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী-উত্তর পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে। আমরা মনে করি, কমিশনের এ মনোভাব সঠিক এবং তা কার্যকর করায় সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে বিশেষ ভূমিকা। যে কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষমতা বর্তমান সংসদের রয়েছে। তবে সেটা করতে হবে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করে এবং বিরোধী দলকেও এ ক্ষেত্রে আস্থায় নিতে হবে। আশার কথা যে, নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য কর্তৃক কমিশনকে শক্তিশালী করার করণীয়গুলো তুলে ধরে রাখা বক্তব্যের পরের দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় বলেছেন, নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবকিছু নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে এবং তারা স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। তিনি এটাও বলেছেন যে, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য যা যা করা দরকার সরকার সবকিছুই করবে। তার এ বক্তব্য নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তবে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিবিধান প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে এবং তা করার প্রক্রিয়ায় একতরফা মনোভাব প্রদর্শন সর্বতোভাবে পরিত্যাজ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রধান বিরোধী দলকেও এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার মনোভাব দেখাতে হবে। নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনকালীন সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সবাই মিলেই এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়।
 

No comments

Powered by Blogger.