ডেসটিনির ৫ পরিচালকের ব্যাংক হিসাব জব্দ

ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষ পাঁচ ব্যক্তির যাবতীয় ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাঁরা হলেন: ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন, তাঁর স্ত্রী ফারাহ দিবা, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, পরিচালক সাইদ উর রহমান ও পরিচালক মেজবাহ উদ্দীন স্বপন।


গতকাল বুধবার বিকেলে তাঁদের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ইউনিট (সিআইসি) সব ব্যাংককে চিঠি ইস্যু করে। পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব ব্যাংক হিসাবে সব ধরনের লেনদেন স্থগিত থাকবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ডেসটিনির পরিচালক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়কর ফাইল, ব্যাংক হিসাব তল্লাশি করে প্রাথমিকভাবে রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে। তাই সংশ্লিষ্ট পরিচালকদের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে পর্যায়ক্রমে সব পরিচালকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর অংশ হিসেবে ডেসটিনির আরও ছয়জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করে চিঠি দেওয়া হবে বলে এনবিআর সূত্র জানায়।
সূত্র জানায়, ডেসটিনির পরিচালকদের আয় ও ব্যয়ের মধ্যেও গরমিল খুঁজে পেয়েছে এনবিআর। গরমিল রয়েছে আয়কর বিবরণীর সঙ্গে ব্যাংক হিসাবের। এ কারণে আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ডেসটিনির ১১ পরিচালকের জীবনযাত্রার বিবরণী পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আয়কর ফাঁকির চূড়ান্ত তথ্য পাওয়ার পর এনবিআর আয়কর ফাঁকির মামলা করবে।
গতকাল প্রথম পর্যায়ে পাঁচজনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের একক ও যৌথ নামে এবং তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে বা ওই ব্যক্তি বা তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেনসংশ্লিষ্ট সব মেয়াদি স্থায়ী আমানত (এফডিআর), সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন বা স্থানান্তর স্থগিত করার জন্য সব ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, ডেসটিনির এসব শীর্ষ ব্যক্তি যেসব প্রতিষ্ঠানের মালিক, সেগুলোরও লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।
১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১১৭(৪) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে এনবিআরের সিআইসি এই চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে ব্যাংক হিসাবের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করার বিষয়টি সিআইসিকে জানাতে বলা হয়েছে। এতে হিসাবগুলোর সর্বশেষ স্থিতি উল্লেখ করতেও বলা হয়েছে।
ইতিমধ্যে ডেসটিনি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ও শীর্ষ ব্যক্তিদের রাজস্বসংক্রান্ত অনিয়ম তদন্ত করার জন্য এনবিআরের সদস্য (নিরীক্ষা, পরিদর্শন ও তদন্ত) মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে ২০ সদস্যবিশিষ্ট বিশেষ কমিটি গঠন করেছে এনবিআর।
মোহাম্মদ আলাউদ্দিন গতকাল রাতে প্রথম আলোকে জানান, ডেসটিনি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ও পরিচালকদের রাজস্বসংক্রান্ত অনিয়ম তদন্তের প্রতিবেদন তৈরির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ডেসটিনিসংক্রান্ত তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে এনবিআরের কর্মকর্তারা বৈঠক করবেন বলেও জানা গেছে।
৩ এপ্রিল ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সাত পরিচালকের ব্যাংক হিসাব তল্লাশি শুরু করে এনবিআর। এ জন্য ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য দিতে সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি ডেসটিনি গ্রুপের ১০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও জানতে চাওয়া হয়। পরে আরও ছয়জন পরিচালকের ব্যাংক হিসাব তল্লাশি করেছে এনবিআর। এর আগে ১ এপ্রিল ডেসটিনি গ্রুপের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়করসংক্রান্ত নথি মাঠ পর্যায়ের অফিস থেকে বিশেষ কমিটির কাছে তলব করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.