বেঁচে গেল তিতাস by দুলাল ঘোষ

তিতাস নদীর বুকে তৈরি করা বিকল্প রাস্তা গত সোমবার বিকেল থেকে কাটা শুরু হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশবাহী ট্রেইলার চলাচলের জন্য ২০১০ সালের ডিসেম্বরে এ রাস্তা তৈরি করা হয়। নদীর বুকের রাস্তা কাটা শুরু হওয়ায় স্থানীয় লোকজন সন্তোষ প্রকাশ করেছে। রাস্তা কাটা শেষ হলে নদী তার নিজস্ব গতি ফিরে পাবে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে নদীর জলজ প্রাণী ও তিতাসপাড়ের জেলে, মাঝি-মাল্লা, কৃষক ও অন্য লোকজন। তারা নাব্যতা হারানো এই নদী খননের দাবি তুলেছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক জেলার সড়ক, মৎস্য, কৃষি, পরিবেশসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে রাস্তা কাটা পরিদর্শনে আসেন। এ সময় জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব মালামাল ত্রিপুরায় পৌঁছে গেছে। তাই রাস্তা কেটে নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এই বাঁধ তিতাসের কোনো ক্ষতি করেনি। তবে তিতাস খননের দাবি যৌক্তিক।
রাস্তা পরিদর্শনে আসা আখাউড়া পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মন্তাজ মিয়া বলেন, তিতাসের বুকে রাস্তার কারণে নদীর দক্ষিণ পাশে এখন মাছ একেবারেই নেই। পরিবেশের ওপরও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি করেন।
মাঝি হরিপদ দাস (৫৮) বলেন, ‘এক বছর পর আপন গতিতে নৌকা চলবে। পৌঁছাবে বাজারের ঘাটে।’ হরিপদসহ অনেকে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে খননের দাবি জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ বা ওভার ডাইমেনশনাল কারগোজ (ওডিসি) পরিবহনবিষয়ক এক সমঝোতা স্মারক সই হয়। ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রাংশ ৯৬টি কনটেইনারে করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে জলপথে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ নৌবন্দরে আসে। সেখান থেকে সড়কপথে আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে ত্রিপুরায় পৌঁছায়। ভারতীয় কনটেইনারগুলোর সর্বোচ্চ ওজন ছিল ৩২৫ মেট্রিক টন। কিন্তু এই এলাকার সেতু ও কালভার্টগুলো ১৫ টনের বেশি ভার বহনে অক্ষম। তাই নদী ও খালের ওপর বাঁধ দিয়ে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হয়। গত বছর ২৯ মার্চ বিকল্প এ রাস্তা ব্যবহার করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশবাহী ট্রেইলার চলাচল শুরু হয়।
ভারতীয় পরিবহন সংস্থা এবিসির বাংলাদেশি এজেন্ট গালফ ওরিয়েন্ট সিওয়েজের প্রকৌশলী মো. ফারুক আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, সব পণ্যই ত্রিপুরায় পৌঁছে গেছে। আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত যে ১৭টি খাল ও নদীতে বিকল্প রাস্তা রয়েছে; সেগুলো কেটে দেওয়ার কাজ চলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ওই সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। মালামাল আগে চলে যাওয়ায় বাঁধগুলো কাটা শুরু হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যেই নদী স্বাভাবিক গতিতে ফিরে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিতাসের বুকে রাস্তা ও তিতাসপাড়ের মাঝি, মাল্লা, জেলে, কৃষক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে গত শনিবার প্রথম আলোর শনিবারের ক্রোড়পত্র ছুটির দিনে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

No comments

Powered by Blogger.