পবিত্র কোরআনের আলো-কাফিররা তখন আক্ষেপ করে বলবে আবার যদি দুনিয়ায় যেতে পারতাম

৪. উনযুর কাইফা কায্যাবূ আ'লা- আনফুছিহিম ওয়া দ্বাল্লা আ'নহুম্ মা কা-নূ ইয়াফ্তারূন। ২৫. ওয়া মিনহুম্ মান ইয়াছতামিউ' ইলাইকা ওয়া জাআ'লনা আ'লা ক্বুলূবিহিম আকিন্নাতান আঁইয়্যাফ্ক্বাহূহু ওয়াফী আ-যা-নিহিম ওয়া ক্বারা; ওয়া ইন ইয়ারাও কুল্লা আয়াতিন লা-ইউ'মিনূ বিহা-; হাত্তা ইযা- জা-ঊকা ইউজা-দিলূনাকা ইয়াক্বূলুল্লাযীনা কাফারূ ইন হা-যা- ইল্লা আছা-ত্বীরুল আউওয়ালীন।


২৬. ওয়া হুম ইয়ানহাওনা আ'নহু ওয়া ইয়ানআওনা আ'নহু ওয়া ইনইঁউহ্লিকূনা ইল্লা- আনফুছাহুম ওয়ামা- ইয়াশ্উ'রূন।
২৭. ওয়ালাও তারা- ইয্ উকি্বফূ আ'লান না-রি ফাক্বা-লূ ইয়া-লাইতানা নুরাদ্দু ওয়ালা-নুকায্যিবা বিআ-ইয়া-তি রাবি্বনা ওয়া নাকূনা মিনাল মু'মিনীন। [সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ২৪-২৭]
অনুবাদ
২৪. (হে নবী) চেয়ে দেখুন, কিভাবে এরা নিজেরাই নিজেদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে। আর তাদের নিজেদের রচনা করা মিথ্যা কিভাবে আজ নিষ্ফল হয়ে যাচ্ছে।
২৫. তাদের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে যারা আপনার কথা কান পেতে শুনছে বলে মনে হবে, কিন্তু আমি তাদের মনের ওপর পর্দা ঢেলে দিয়েছি। ফলে তারা হৃদয় দিয়ে কিছুই উপলব্ধি করতে পারে না; আমি তাদের কানেও ছিপি এঁটে দিয়েছি। তারা যদি আল্লাহর সব নিদর্শন দেখেও নেয়; তবু তারা তাঁর প্রতি ইমান আনবে না। এমনকি তারা যখন আপনার সামনে আসবে তখন আপনার সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হবে। (কোরআন সম্পর্কে) কাফিররা বলবে, এগুলো তো পুরনো দিনের গল্পকথা ছাড়া আর কিছুই নয়।
২৬. তারা এই কোরআন থেকে নিজেদের মুখ ফিরিয়ে রাখে আবার অন্যদেরও তা থেকে দূরে রাখে। এভাবে তারা নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছে, অথচ এদের কোনো চৈতন্যই নেই।
২৭. আপনি যদি সেদিন তাদের দেখতে পেতেন, যখন এদের আগুনের ওপর এনে দাঁড় করানো হবে। তখন তারা চিৎকার করে বলবে, হায়! যদি আমাদের আবার দুনিয়ায় ফেরত পাঠানো হতো, তাহলে আমরা আর কখনো আমাদের প্রতিপালকের আয়াতগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম না। বরং আমরা অবশ্যই ইমানদার লোকদের শামিল থাকতাম।
ব্যাখ্যা
২৪ নম্বর আয়াতটি আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এসেছে। এখানে নবীকে মুশরিক কোরাইশদের শেষ পরিণতির কথাটাই স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুশরিকরা শেষ পরিণতির দিন তাদের মিথ্যা অবস্থানের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হবে এবং প্রাণ ফাটা আফসোসে ভেঙে পড়বে।
২৫ নম্বর আয়াতের শানেনুজুল এ রকম : মক্কার কোরাইশ সর্দাররা রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়ত ও কোরআন নাজিলের বিষয়টিকে প্রথম দিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও একপর্যায়ে তারা বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখতে বাধ্য হয়। তারা রাসুলের কাছ থেকে কোরআন শোনা ও বোঝার চেষ্টা করত। একবার আবু সুফিয়ান, ওতবা, শায়বা, ওলীদ, উবাই ইবনে খালাফ এবং নাযার ইবনে হারেছ প্রমুখ কোরাইশ নেতা কাবা শরিফে একত্র হয়ে রাসুলের কোরআন পাঠ শুনছিলেন। তারা মনোযোগের সঙ্গে কোরআন পাঠ শুনত ঠিকই, কিন্তু এর প্রতি একটা নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে শুনত। নাযার ইবনে হারেছকে কোনো এক অনুপস্থিত কোরাইশ নেতা জিজ্ঞেস করলেন, মুহাম্মদ কী বলে? সে বলল, 'আমি ঠিক জানি না, কী বলে। তবে যত দূর দেখেছি, ঠোঁট নাড়ে এবং প্রাচীন যুগের কাহিনীগুলো পড়ে।' এ প্রসঙ্গেই আয়াতটি নাজিল হয়। এ আয়াতে কোরাইশ নেতাদের কোরআন পাঠ শোনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, আমি তাদের মনের ওপর পর্দা ঢেলে দিয়েছি, এর ফলে তারা হৃদয় দিয়ে কিছু উপলব্ধি করতে পারবে না। এ ছাড়া এদের কানেও ছিপি এঁটে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মানে আল্লাহ তায়ালা এদের কর্ম ও বিশ্বাসের পরিণতি হিসেবেই তাদের এ অবস্থা করে দিয়েছেন। তাদের মূর্খতার অন্ধকারে বন্দি করার জন্য আল্লাহ দায়ী নন, কোরাইশ নেতারা নিজেরা যা অর্জন করেছে এর পরিণতি হিসেবেই তাদের এ অবস্থা। আল্লাহ তায়ালা বলছেন, তারা যদি আল্লাহর সব নিদর্শন দেখে, তবু ইমান আনবে না। তারা কোরআনের আয়াতগুলোকে পুরনো দিনের গল্পকথা বলছে, তারা এর মর্ম উপলব্ধি করতে পারছে না, তারা এর শিক্ষা ও পথনির্দেশ গ্রহণ করতে পারছে না।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.