বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না

৯১ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। আখতার আহমেদ, বীর প্রতীক আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেন আখতার আহমেদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে চাকরি করতেন। চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন কুমিল্লা সেনানিবাসে। এখানে ছিল চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। মার্চের মাঝামাঝি সম্ভাব্য ভারতীয় হামলা মোকাবিলার কথা বলে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সেনানিবাসের বাইরে পাঠানো হয়। তখন তাঁকেও এই ইউনিটের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।


২৫ মার্চের আগে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একাংশের অবস্থান ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। আখতার আহমেদও ছিলেন সেখানে। ২৭ মার্চ মেজর শাফায়াত জামিলের (বীর বিক্রম, পরে কর্নেল) নেতৃত্বে তাঁরা বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। এই বিদ্রোহে আখতার আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আখতার আহমেদ পরে ২ নম্বর সেক্টরে অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেন। পাশাপাশি প্রত্যক্ষ যুদ্ধেও অংশ নেন। ২ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল) এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যখন আমি যুদ্ধ চালাচ্ছিলাম এবং যুদ্ধ আস্তে আস্তে তীব্রতর হচ্ছিল, তখন আমার সেনাদলে আহত ও নিহতের সংখ্যাও বেড়ে চলছিল। সে সময় আমার সৈনিক এবং গণবাহিনীর জন্য চিকিৎসার বন্দোবস্তু ছিল না। শুধু আমার সঙ্গে একজন ডাক্তার ক্যাপ্টেন আখতার (আখতার আহমেদ) ছিলেন। অফিসারের স্বল্পতায় তাঁকেও আমি একটা কোম্পানির কমান্ডার বানিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়োগ করেছিলাম। যুদ্ধক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন আখতার ডাক্তার হয়েও একজন যোদ্ধা হিসেবে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন।
আমার সেনাদলে আহতের সংখ্যা যখন বেশ বেড়ে যায় এবং অনেক সময় দ্রুত চিকিৎসার অভাবে অনেক সৈনিক বা গণবাহিনীর ছেলেরা রক্তক্ষয় হয়ে মারা যেতে থাকে, তখন আমি বুঝতে পারলাম যে আমার সেক্টরেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য ক্যাপ্টেন আখতারকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ডেকে পাঠাই এবং অতিসত্বর আমার হেডকোয়ার্টারের কাছে একটি চিকিৎসালয় স্থাপন করার জন্য নির্দেশ দিই। ঢাকা থেকে কিছুসংখ্যক ছেলেমেয়ে আমার সেক্টরে এসে আশ্রয় নেয়। এদের মধ্যে দু-একজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকও ছিল। তারাও আমাকে একটি হাসপাতাল গড়ার জন্য অনুরোধ জানায়। এসব ছেলেমেয়ে নিয়ে ক্যাপ্টেন আখতার কয়েকটি তাঁবুতে মতিনগরে আমার হেডকোয়ার্টারের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রথম বাংলাদেশ হাসপাতালের ভিত্তি স্থাপন করেন। একটি সুন্দর বাগানের ভেতর উঁচু ও শান্ত পরিবেশে এ হাসপতালটি অবস্থিত ছিল।’ (বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, নবম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫৬-১৫৭)।
২ নম্বর সেক্টরে স্থাপিত এই হাসপাতালের নাম ছিল ‘বাংলাদেশ হাসপাতাল’। মে মাসে এটি আগরতলার মতিনগরে স্থাপন করা হয়। জুলাই মাসে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে হাসপাতালটি সীমান্ত এলাকা থেকে অপেক্ষাকৃত দূরবর্তী এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। পরে বিশ্রামগঞ্জে আবার স্থানান্তর করে তা আরও প্রসারিত করা হয়। তখন এই হাসপাতালের শয্যা ছিল ২০০। অন্যান্য সেক্টরের চেয়ে ২ নম্বর সেক্টরের বাংলাদেশ হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা ছিল ব্যাপক।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য আখতার আহমেদকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১২।
আখতার আহমেদের পৈতৃক বাড়ি ঢাকা মহানগরের ৬ অভয় দাস লেনে। বর্তমানে বাস করেন পুরোনো ডিওএইচএস (সড়ক: ৬বি, বাসা: ৮৪) বনানীতে। তাঁর বাবার নাম আবদুস সুলতান মল্লিক। মা মনিরুননেছা মল্লিক। স্ত্রী খুকু আহমেদ। তাঁর এক ছেলে। আখতার আহমেদের ছোট ভাই মঞ্জুর আহমেদও মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর প্রতীক খেতাবধারী।
সূত্র: আখতার আহমেদ, বীর প্রতীক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস. সেক্টর ২।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.