ননসিনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি

রাজধানীর অদূরে সাভার পৌরসভার বনপুকুর এলাকার শাহদাত আনোয়ারের ১০ মাসের শিশুকন্যা ননসিন আনোয়ারের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে গতকাল বৃহস্পতিবার চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই তদন্তকাজ শুরু করেছেন।


জানা যায়, প্রথম আলোর প্রতিবেদনের সূত্র ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শামসুজ্জামানকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (মেডিকেল অফিসার) মজিবর রহমান, শিশু বিশেষজ্ঞ ইব্রাহীম খলিল ও ডা. রাকিব বিন কাশেম। এই কমিটি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর খুব শিগগির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে খোঁজখবর নেন। তাঁরা মৃত শিশুটির পরিবার এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। এ ছাড়া ছায়াবীথির নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গত রোববার যেসব শিশুকে ওপিভি ও ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর পাশাপাশি হামের টিকা দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা ওই শিশুদের বাড়িতেও যান। কথা বলেন শিশুদের মা-বাবার সঙ্গে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার জাতীয় টিকা দিবসে ননসিন আনোয়ারকে সাভার বনপুকুর এলাকার চাইল্ড হ্যাভেন স্কুল টিকাদান কেন্দ্রে ভিটামিন ‘এ’ ও ওপিভি খাওয়ানো হয়। নির্ধারিত সময়ে হামের টিকা দেওয়ার জন্য পরের দিন (সোমবার) তাকে সাভারের ছায়াবীথি এলাকার নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে হামের টিকা দেওয়ার পাশাপাশি পুনরায় ওপিভি ও ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বাসায় ফেরার পরই শিশুটির পেটে সমস্যা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে তাঁর পেট ফাঁপতে থাকে এবং একপর্যায়ে সে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। অবস্থার অবনতি হলে শিশু বিশেষজ্ঞ মো. রফিকুল ইসলামের পরামর্শে গত মঙ্গলবার তাকে রাজধানীর শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিনই শিশুটি মারা যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সাড়া পড়ে।
ননসিনের মা জাহিদা আক্তার জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শামসুজ্জামানসহ তদন্ত কমিটির সদস্যরা গতকাল সকালে তাঁদের বাসায় গিয়ে তাঁর সাক্ষ্য নেন।
ননসিনের চাচা শওকত আনোয়ার বলেন, ‘আমরা আশা করি, শুধু তদন্ত করার মধ্য দিয়েই যেন সব শেষ হয়ে না যায়। এ রকম উদাহরণ সৃষ্টি হোক, যাতে শিশুদের নিয়ে কেউ অবহেলা করার সাহস না পায়।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শামসুজ্জামান জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ও নিরপেক্ষ তদন্তের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এরপর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে প্রথম আলোর প্রতিবেদনের সত্যতা পাওয়া গেছে। ননসিনের পরিবার যা বলেছে, তার সঙ্গে প্রতিবেদনে উল্লিখিত তথ্যের মিল রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.