পশ্চিম তীরকেও ইসরায়েলের মানচিত্রে ঢোকাতে চান নেতানিয়াহু

লাস্ট আপডেট- ৭ এপ্রিল ২০১৯: ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পুননির্বাচিত হলে পশ্চিম তীরের সব ইহুদী বসতিকে ইসরায়েলের অংশ করে নেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার ইসরায়েলে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে মিস্টার নেতানিয়াহুকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে দক্ষিণপন্থী দলগুলোর সঙ্গে - যারা চায় পশ্চিম তীরের অংশবিশেষ ইসরায়েল নিজের সীমানার মধ্যে ঢুকিয়ে নিক।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েল যেসব ইহুদী বসতি গড়ে তুলেছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সেগুলো অবৈধ। তবে ইসরায়েল তা মনে করে না।
ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে সিরিয়ার কাছ থেকে যে গোলান মালভূমি দখল করে নেয়, সেটিকে নিজের সীমানায় ঢুকিয়ে নিয়েছিল আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে। গতমাসে যুক্তরাষ্ট্র গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলের ভূমি বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।
পশ্চিম তীরের ইহুদী বসতিগুলোতে প্রায় চার লাখ ইহুদীকে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে ইসরায়েল। পূর্ব জেরুসালেমেও একই ভাবে ২০ হাজার ইহুদীর জন্য বসতি গড়ে তোলা হয়েছে।
পশ্চিম তীরে থাকে প্রায় ২৫ লাখ ফিলিস্তিনি। যে ভবিষ্যত রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে ফিলিস্তিনিরা, সেটি হওয়ার কথা পশ্চিম তীর এবং গাজা ভূখন্ড নিয়ে। আর তাদের রাজধানী হওয়ার কথা পূর্ব জেরুসালেম।
ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘাত নিরসনে যে কোন শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিতর্কিত একটি ইস্যু হচ্ছে পশ্চিম তীরের এসব বিতর্কিত ইহুদী বসতি।
পশ্চিম তীরে গড়ে তোলা ইহুদী বসতিগুলো আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ।
ফিলিস্তিনিরা মনে করে, এই ইহুদী বসতিগুলো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে অন্যতম বাধা। এগুলো একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারটিকে রীতিমত অসম্ভব করে তুলেছে।

কী বলেছেন নেতানিয়াহু

একটি ইসরায়েলি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে জিজ্ঞেস করা হয় কেন তিনি পশ্চিম তীরের বিরাট ইহুদী বসতির পর্যন্ত ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করছেন না।
জবাবে তিনি বলেন, "আপনি জানতে চাইছেন আমরা পরবর্তী ধাপে যাচ্ছি কীনা। আমার উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ, আমরা পরবর্তী ধাপের দিকে যাবো।আমি ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করবো এবং আমি গুচ্ছ বসতি এবং বিচ্ছিন্ন বসতির মধ্যে কোন তফাৎ করি না। "

ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া কী?

একজন সিনিয়র ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা সায়েব এরেকাত বলেছেন, ইহুদী বসতির প্রশ্নে মিস্টার নেতানিয়াহু যে অবস্থান নিয়েছেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
তিনি বলেন, "যতদিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্টের ট্রাম্প প্রশাসন, ইসরায়েলকে যা খুশি তা করার সুযোগ দিয়ে যাবে, ততদিন তারা নির্লজ্জভাবে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে যাবে। যেভাবে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগণের জাতীয় অধিকার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে, তার জন্য ইসরায়েলকে বরং উল্টো পুরস্কৃত করা হচ্ছে।"
ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, "যে ঘোষণা বা যে পদক্ষেপই নেয়া হোক, তাতে সত্য বদলাবে না। এই ইহুদী বসতিগুলো অবৈধ এবং এগুলো অপসারণ করা হবে।"
'বিস্ফোরক মন্তব্য'
বিবিসির আরব বিষয়ক বিশ্লেষক সেবাস্টিয়ান আশার বলছেন, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইহুদী বসতি সম্পর্কে যা বলেছেন, তা সম্ভাব্য মারাত্মক গণবিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। কারণ বহু বছর ধরে এই ইস্যুতেই শান্তি প্রক্রিয়া বার বার থমকে গেছে।
তিনি বলছেন, মিস্টার নেতানিয়াহু যেসব দলের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করতে চাইছেন, তারা এই কথা শুনে বেশ খুশি হবে। কিন্তু এটি ফিলিস্তিনিদের মারাত্মক বিক্ষুব্ধ করে তুলবে। এটি আন্তর্জাতিকভাবেও নিন্দিত হবে।
সেবাস্টিয়ান আশার বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলের বলে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাতে হয়তো বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে।

এর পেছনে রাজনীতিটা কী?

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দক্ষিণপন্থী লিকুদ পার্টির সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে নীল এবং সাদা জোটের।
কিন্তু অন্য অনেক ছোট ছোট দক্ষিণপন্থী দল আছে, যাদের সমর্থন হয়তো পরবর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। লিকুদ পার্টির ২৯ জন এমপির মধ্যে মিস্টার নেতানিয়াহু ছাড়া আর সবাই চান, ইহুদী বসতিগুলোর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে।
এতদিন পর্যন্ত মিস্টার নেতানিয়াহু ছিলেন একমাত্র ব্যতিক্রম। এখন মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য তিনিও তার অবস্থান বদলাচ্ছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন বেপরোয়া করে তুলেছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে

No comments

Powered by Blogger.