গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হামলা: পাইপের ফিঙ্গার প্রিন্টের সূত্র ধরে চলছে তদন্ত by জিয়া চৌধুরী

রাজধানীর গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গত ২৯শে এপ্রিল তিন পুলিশ সদস্যের ওপর হামলার ঘটনায় এখনো কোনো ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। কোনো উগ্রবাদী সংগঠন এমন হামলা করে থাকতে পারে বলে ধারণা পুলিশের। তবে, কারা কিংবা কোন সংগঠন এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। ওই রাতে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) সদৃশ বিস্ফোরিত বস্তুটির মূল অংশ ধাতব পাইপে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্টের সূত্র ধরে তদন্ত কাজ এগিয়ে চলছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম(সিটিটিসি) ইউনিট ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই) সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। এদিকে, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া আইইডি সদৃশ বিস্ফোরকের ধাতব পাইপ ও আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে এর আগে বিভিন্ন সময় আইইডিসহ গ্রেপ্তার হওয়া বিভিন্ন জঙ্গি ও উগ্রবাদী সংগঠনের সদস্যদের বিষয়েও নজর রাখা হচ্ছে। ঘটনার রাতে পাশের একটি বিপনি বিতানের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তেমন কাউকে সনাক্ত করা যায়নি।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা ছিলো না। আমরা পাশের একটি মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করেছি।
যাতে কাউকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। তবে আমরা তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। সূত্র জানায়, সেদিন রাতে গুলিস্তান পুলিশ বক্সের উল্টো পাশে সড়ক বিভাজকের ওপরে একটি বেঞ্চে বসেছিলেন পুলিশ সদস্যরা। বিস্ফোরণের সময়কালের সিসিটিভির ফুটেজে রাস্তায় একটি বাস চলে আসায় তেমন কিছু শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস সদৃশ বলে সিটিটিসি ও ডিএমপির মতিঝিল সূত্র নিশ্চিত করেছে। হামলাকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করেই আইইডি সদৃশ বিস্ফোরক ঘটনাস্থলে ফেলে চলে যায় একটি সূত্রের ধারণা। অন্য আরেকটি সূত্রের মতে, বিস্ফোরকটি আগেও পেতে রাখা হতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া আলামত পর্যালোচনা করে সিআইডি ও সিটিটিসি ধারণা করছে টাইমার দেয়া কোন বিস্ফোরক আগে থেকে পেতে রাখতে পারে হামলাকারীরা।
যা নির্ধারিত সময়ে বিস্ফোরণ। তবে স্বশরীরে হামলাকারী এক বা একাধিক ব্যক্তি পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে বিস্ফোরকটি ছুঁড়ে মারতে পারে বলেও জানিয়েছে আরেকটি সূত্র। সেক্ষেত্রে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে এমন মিশন সম্পন্ন করা হয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সিটিটিসি সূত্র জানায়, ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকা বিভিন্ন ভিডিও থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে হামলাকারীরা আইইডি’র মতো বিস্ফোরক বানানোর চেষ্টা করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে তারা খুব একটা সফল হতে পারেনি। হুবহু আইইডির মতো বিস্ফোরক বানাতে সক্ষম হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর এমন বিস্ফোরণের ঘটনায় ভয়াবহতা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হতে পারতো। এদিকে, শ্রীলঙ্কার ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ওপর এমন বিস্ফোরণের ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দায় স্বীকারের বিষয়টিকেও সন্দেজনকভাবে দেখছে পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স’র খবরে বলা হয়, বাংলাদেশে হোলি আর্টিজান হামলার পর গত দুই বছরের মধ্যে প্রথম কোন ঘটনায় দায় স্বীকার করে আইএস।
তবে বাংলাদেশে আইএসের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ কোন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা এমন হামলা করে থাকতে পারে বলেও ধারণা করছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। পুলিশ সদস্যদের ওপর এমন হামলার ঘটনায় পল্টন মডেল থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে ছোট-বড় ১৫ টুকরা ঢালাই লোহা, বৈদ্যুতিক তার, ব্যাটারি, প্লাস্টিকের বোতলের ভাঙ্গা অংশ, লোহার পেরেক ও রেসিডিও পাউডার উদ্ধার করা হয়। পল্টন থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নও (র‌্যাব) বিস্ফোরক আইনে দায়ের হওয়া মামলায় ছায়া তদন্ত করছে।

No comments

Powered by Blogger.