শিশু জুঁইয়ের দেখার কেউ নেই: কারাবন্দি স্বামীকে দেখতে এসে লাশ হলেন স্ত্রী by এস আলম তুহিন

বাবা জেলে। মা নিহত। এক বছরের ছোট্ট মেয়ে জুঁই তার মাকে না পেয়ে শুধু কাঁদছে। বুঝতে পারছে না তার মা আর এ দুনিয়াতে নেই। তাকে কেউ সান্ত্বনা দিতে পারছে না। কোনো কিছুই সে খাচ্ছে না। মায়ের মমতা-স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত এ শিশুটির দায়িত্ব নেবে কে। কে তার দুঃখ ঘোচাবে?
মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে মাগুরা-ঝিনাইদহ সড়কের মাগুরা সার্কিট হাউজ এলাকায় ইজিবাইকের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লেগে মেয়েটির মা রেশমা খাতুনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
মাগুরা শহরের পিটিআই পাড়ার বাসিন্দা রেশমা খাতুন মঙ্গলবার বিকালে তার স্বামী মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি রাব্বি হোসেনকে মাগুরা জেলখানায় দেখতে ইজিবাইকে করে  যাচ্ছিলেন। ইজিবাইকটি মাগুরা সার্কিট হাউজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় রেশমার গলার ওড়না চাকার সঙ্গে জড়িয়ে নিচে পড়ে যান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রেশমা খাতুনের এ মর্মান্তিক মৃত্যুতে তার পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বর্তমানে শিশুটির দাদি চম্পা খাতুন জানান, আমার পরিবার খুবই দরিদ্র। দরিদ্রের কারণে আমার ছেলে রাব্বীকে পড়াশুনা করাতে পারি না। ফলে সে ছোট বেলা থেকে সঙ্গদোষে নষ্ট হয়ে গেছে। তার ভালোর জন্য আমি  অনেক চেষ্টা করে গেছি  কিন্তু সে ভালো হয়নি। শহরের অনেক ভালো ভালো দোকানে তাকে রেখেছি কাজ করার জন্য। কিন্তু সে তাও করেনি। পরে অনেকের পরামর্শে তাকে শালিখা উপজেলার আড়পাড়া শলই গ্রামে বিয়ে দিই। বিয়ের কিছুদিন পরই তার ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় ছোট্ট একটি কন্যা শিশু। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে সে। কিন্তু আমার ছেলে রাব্বী জড়িয়ে পড়ে সমাজের নানা অসঙ্গতিতে। মাদকসহ নানা মামলার আসামি হয়ে সে এখন জেলে।
অনেক আক্ষেপ করে তিনি বলেন, শিশু মেয়েটির দায়িত্ব এখন আমার। আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমার স্বামী আমার পরিবার দেখাশুনা করে না। সে অন্যত্র বিয়ে করে বাইরে বসবাস করছে। আর আমি অনেক কষ্ট করে সংসার চালাই। আমার ছোট্ট ৯ বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে। তার নাম রাসেল। তাকে নিয়ে আমি যেমন স্বপ্ন দেখি ঠিক তেমনি এ মা-মরা মেয়েটিকে আমি তার মায়ের স্নেহ দিয়ে মানুষ করার চেষ্টা  চালিয়ে যাচ্ছি।

No comments

Powered by Blogger.