অবশেষে শ্রম আইনে সংশোধনী আসছে by দীন ইসলাম

আহার ও বিশ্রামের বিরতি ছাড়া শ্রমিকের কর্মঘণ্টা ১০ ঘণ্টার বেশি হতে পারবে না। এ ছাড়া কারখানা ও শিল্পের ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে একদিন এবং দোকান ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেড়দিন ছুটি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিষ্ঠানে  কর্মরত পাইলট, প্রকৌশলী ও কেবিন ক্রুরা ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে পারবে। এসব বিধান রেখে শ্রম আইনে সংশোধনী আনতে যাচ্ছে সরকার।
আগামী সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে শ্রম আইনের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উঠবে। আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে খাবার কক্ষ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২৫ জনের বেশি শ্রমিক নিযুক্ত থাকেন এমন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা যাতে তাদের সঙ্গে আনা খাবার খেতে এবং বিশ্রাম করতে পারেন সেজন্য পানির ব্যবস্থাসহ একটি কক্ষ থাকতে হবে।
এ ছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার কক্ষের ব্যবস্থা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, শ্রমিকরা ইচ্ছা প্রকাশ করলে যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি বা অংশগ্রহণকারী কমিটির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজ করে পরে ওই সাপ্তাহিক ছুটি উৎসব ছুটির সঙ্গে যোগ করে ভোগ করতে পারবে।
সেক্ষেত্রে সাপ্তাহিক ছুটির দিনের কাজের জন্য কোনো বেশি ভাতা দেয়া হবে না। চাকরি থেকে বাদ দিতে কি কি প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে ওই বিষয়টিও সংশোধনীতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো শ্রমিক বিনা নোটিশে বা বিনা অনুমতিতে ১০ দিনের বেশি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে মালিক ওই শ্রমিককে ১০ দিনের সময় দিয়ে এই সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে বলবে এবং চাকরিতে পুনরায় যোগদানের জন্য নোটিশ দেবে।
এমন ক্ষেত্রে ওই শ্রমিক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদান বা চাকরিতে যোগদান না করলে সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আরো সাত দিন সময় দেবে। তাতেও যদি সংশ্লিষ্ট শ্রমিক চাকরিতে যোগদান বা আত্মপক্ষ সমর্থন না করেন তবে ওই শ্রমিক অনুপস্থিতির দিন থেকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছে বলে গণ্য হবে। এর আগে ২০১৬ সালে সরকার নতুন শ্রম আইন পাস করে। তবে এটি শ্রমিকবান্ধব হয়নি বলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো আলোচনা সমালোচনা করতে থাকে। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বিশাল সংখ্যক শ্রমিক হতাহতের পর নতুন করে এটি আলোচনায় আসে।
বিশেষত শ্রমিকের সংঘবদ্ধ হওয়া বা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের বিষয়টি আলোচিত হয়। সমালোচনার মুখে ওই বছরই সরকার আইনটিতে বেশকিছু সংশোধনী আনে। এর পর কারখানার ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে গতি আসলেও শ্রমিকের হয়রানি, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়াগত জটিলতা কমেনি বলে অভিযোগ উঠে। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) পূর্ণাঙ্গ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার বিষয়টি নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে আপত্তি তোলা হয়।
একই সঙ্গে শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ইপিজেড এলাকার কারখানার শ্রমমানকে তাদের পরিদর্শনের আওতায় আনাসহ বেশকিছু ইস্যু সামনে আসে। গত বছর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল লেবার কনফারেন্সে (আইএলসি) এ বিষয়ে অগ্রগতি অর্জনের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বাংলাদেশকে ‘স্পেশাল প্যারাগ্রাফ’-এর আওতায় আনা হয়। এর পর শ্রম আইনের সংশোধনীর বিষয়ে গুরুত্ব বাড়ায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গঠিত কমিটির মতামতের ভিত্তিতে গত মে মাসে তা চূড়ান্ত করা হয়। এটি চূড়ান্ত করার পর ওই মাসেই অনুষ্ঠিত চলতি বছরের আইএলসিতে এ অগ্রগতি তুলে ধরে সরকার। সেই সঙ্গে তা আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ পাস হবে বলেও সরকারের তরফে আশ্বস্ত করা হয়। ফলে বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নেয় আইএলসি। আগামী অধিবেশনেই এর সংশোধনী আসতে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.