জমজমাট রোবট রেস্টুরেন্ট by সুদীপ অধিকারী

সাত দিনের মধ্যেই জমজমাট হয়ে উঠেছে ‘রোবট রেস্টুরেন্ট’। ভোজনবিলাসীদের পদচারণায় উৎসবমুখর রাজধানীর নতুন এই রেস্টুরেন্টটি। রোমাঞ্চকর পরিবেশ তৈরি করছে রোবটরা। রোবটের হাত থেকে খাবার গ্রহণ করে কাস্টমার যেমন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন এবং তেমনি নতুন এই খাবারের ঘরে বসে মজা করে খাচ্ছেন তারা। ফলে প্রতিদিনই উৎসুক মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন রোবট রেস্টুরেন্টে। উচ্চবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত সকলেই আসছেন রোবটের সেবা উপভোগ করতে।
আসাদ গেটের কাছে ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় গত ১৫ই নভেম্বর থেকে চালু হয় রেস্টুরেন্টটি। এটি বাংলাদেশের প্রথম ‘রোবট রেস্টুরেন্ট’ এটি। বাংলাদেশ ও চীন যৌথভাবে পরিচালনা করা রেস্টুরেন্টটির মূল আলোচ্য বিষয় বস্তু হচ্ছে দুটি রোবট। যারা খাবার পরিবেশনের কাজ করছে রেস্টুরেন্টিতে। চীনে তৈরি এই রোবট দুটির একটি নারী ও অন্যটি পুরুষের আদলে গড়া। যদিও তাদের দুটোর নামই এক, ‘ইয়োইদং’। যার মানে, চলমান সুখ বা মুভিং হ্যাপিনেস। সাদা-নিল রঙের রোবট দুটো ঘুরছে রেস্টুরেন্ট জুড়ে। কাস্টমারদের সঙ্গে কথা বলছে তারা। আবার কাস্টমাররা রোবটের পেছনে থাকা মনিটরের স্ক্রিনে ভেসে ওঠা বাটন টিপে দিচ্ছেন খাবারের অর্ডার। শক্তিশালী ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে সে অর্ডার স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাচ্ছে রান্নাঘরে থাকা শেফের কাছে। ঝটপট তৈরি হচ্ছে খাবার। দ্রুত সেই খাবার নিয়ে ওই রোবটই হাজির হচ্ছে নির্দিষ্ট টেবিলে। উন্নত দেশগুলোর এ যান্ত্রিক রোবটের কাছ থেকে ‘মানবিক’ সেবা এখন ঢাকাবাসীও উপভোগ করছেন। সরজমিন রেস্টুরেন্টিতে গেলে দেখা যায়, সেখানে বড়দের সঙ্গে শিশুদের সংখ্যাও কম ছিল না। উচ্চবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত সকলেই আসছে এই রোবটের সেবা উপভোগ করতে। এই রেস্টুরেন্টে আসা ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে আসন ব্যবস্থাতেও রয়েছে কিছু ভিন্নতা। পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে খেতে আসা মোহাম্মদপুরের সুমি আক্তার বলেন, এটা আমার এক নতুন অভিজ্ঞতা। মানুষের সামনে এই প্রথম রোবটে খাবার পরিবেশন করছে। বাংলাদেশ এখন আগের তুলনায় অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এই রোবটগুলো কিভাবে খাবার পরিবেশন করে সেটা দেখতেই মূলত আসা এখানে। আমরা এখানে অনেক মজা করেছি। বিশেষ করে আমার বাচ্চাটা অনেক খুশি এই রোবটের সঙ্গে কথা বলে। রেস্টুরেন্টে খেতে আসা সাইদুর রহমান বলেন, এটা সত্যিই একটা চমৎকার বিষয়। ১ দশমিক ৬ মিটার উচ্চতার রোবট দুটি চীনা প্রকৌশলী ম্যাক্স সোয়াজ ও স্টিভেন তৈরি করেছেন। তবে, বর্তমানে রোবট দুটি ক্রেতাদের কাছ থেকে কোনো অর্ডার নেবে না। কেবল রান্নাঘর থেকে তৈরি করা খাবার নির্দিষ্ট টেবিলে পৌঁছে দেবে। প্রতিটি ৩০ কিলোগ্রাম ওজনের রোবট চলাচল করবে নির্দিষ্ট লাইন (ট্র্যাক) ধরে। সামনে বাধা পড়লে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই থেমে যাবে। ইংরেজিতে অনুরোধ করবে পথ ছেড়ে দেয়ার জন্য। একনাগাড়ে এক একটি রোবট ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে সক্ষম। প্রতিটি রোবট বানাতে খরচ হয়েছে প্রায় আট লাখ টাকা। চীনা সংস্থা এইচ জেড এক্স ইলেকট্রনিক টেকনোলজি কোম্পানির অধীনে তৈরি হয়েছে রোবট দুইটি। রেস্টুরেন্টটির পরিচালক রাহিন রাইয়ান নবী বলেন, আমরা শিশু-কিশোরদের বিনোদনের বিষয়টি মাথায় রেখেই এই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। তবে, সব বয়সী মানুষের জন্য এই রোবট একটি রোমাঞ্চকর পরিবেশ তৈরি করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে রোবটের মাধ্যমে খাবার পরিবেশন করা একটা বিশাল মাইলফলক। আমরা দেখেছি, অনেক সময় দেখা যায় ওয়েটাররা কয়েক ঘণ্টা কাজ করার পর ক্লান্ত হয়ে পড়েন। সেই ক্লান্ত অবস্থায়ই তারা কাস্টমারদের খাবার সরবরাহ করতে বাধ্য হন। কিন্তু রোবট কখনোই ক্লান্ত হবে না। তাই যখন রোবট খাবার সরবরাহ করবে তখন এটি কাস্টমারকে আরও ভালো সেবা দিতে পারবে। ধীরে ধীরে অন্যান্য ক্ষেত্রেও রোবটের ব্যবহার বাড়বে বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.