রোহিঙ্গা জাতি নিধনের তুমুল সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্রের

মিয়ানমারের রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানকে ‘জাতি নিধন’ আখ্যা দিয়ে এর তুমুল সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি মিয়ানমারে সংঘটিত রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানকে- ভয়াবহ নৃশংসতা বলে উল্লেখ করেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করার হুমকিও দিয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিয়ানমারের উত্তর রাখাইনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সেখানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতি নিধনের সপষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা নিধনে সমপৃক্তদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দরকার হলে নির্দিষ্ট অবরোধ আরোপ করা হবে। ভয়াবহ এই নৃশংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার মানবেতর জীবনের মুখে ঠেলে দেয়ার অপরাধে জড়িতরা সহজে পার পাবেন না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। টিলারসনের এমন বক্তব্য গুরুত্ববহ। কারণ, গত সপ্তাহে মিয়ানমার সফরে তিনি
রোহিঙ্গা সংকটকে জাতি নিধন বলে আখ্যায়িত করেন নি। যুক্তরাষ্ট্রের এমন বিবৃতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশটির অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর ফলে গত দুবছর ধরে গণতন্ত্র-উত্তর মিয়ানমারের শাসনে থাকা সেনাবাহিনী এবং বেসামরিক নেতাদের জোটের ওপর চাপ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরেই সে দেশের সেনাবাহিনী ভয়াবহ নৃশংসতা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ তুলছে। ২৫শে আগস্টে মিয়ানমারের পুলিশ এবং আর্মি ব্যারাকে আরাকান সালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার পর থেকেই তাদের দমনের নামে এই প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এতে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং উগ্র জনগোষ্ঠী। চলতে থাকে গণহত্যা, গণধর্ষণ, নিপীড়ন। জ্বালিয়ে দেয়া হয় রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি। ভয়াবহতা সহ্য করতে না পেরে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গাদের ওপর এই সীমাহীন নির্যাতনের তীব্র সমালোচনা করেন টিলারসন। তিনি আরসার হামলার নিন্দা জানান। সেই সঙ্গে বলেন, ওই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে যে ভয়াবহ নৃশংসতা মিয়ানমারের সম্মিলিত বাহিনী এবং উগ্র জনগোষ্ঠী সে দেশের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালিয়েছে, তা কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের নোবেল জয়ী স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির প্রচণ্ড সমালোচনা করে আসছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। বিশ্বনেতারাও এ ঘটনায় তার ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে আসছেন। তবে সে দেশের সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডে যে সুচির খুব একটা নিয়ন্ত্রণ নেই তা উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, যদিও আমরা জানি যে, পরিস্থিতি তার (সুচির) সমপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই, তবুও মিয়ানমারের নেত্রী হিসেবে তার কাছ থেকে আমাদের চাওয়া আরো বেশি। আমরা আশা করি তিনি এ ঘটনার সমাধানে সত্যিকারের নেতা সুলভ ভূমিকা পালন করবেন।

No comments

Powered by Blogger.