শরণার্থী চুক্তিতে ইউরোপ ব্যর্থ

শরণার্থী বিষয়ে কোনো ঐকমত্য পৌঁছাতে পারেনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ২৮ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সোমবার ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত জরুরি এ বৈঠক ঐকমত্য ছাড়াই শেষ হয়েছে। বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়ে ছিল এক লাখ ২০ হাজার জরুরি আশ্রয়প্রার্থীকে ইইউয়ের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বণ্টন করা। তবে এ ব্যাপারে একমত হতে পারেননি নেতারা। লুক্সেমবার্গ ও জার্মানি বলছে, বণ্টনের পক্ষে নীতিগতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র একমত। কিন্তু এ বিষয়ে বিস্তারিত চুক্তির জন্য সামনের মাসে অনুষ্ঠিতব্য আরেকটি বৈঠক পর্যন্ত সময় প্রয়োজন। এদিকে নমনীয় জার্মানিও হঠাৎ কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছে। দেশটির সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। যদিও জার্মানি বলছে এ ব্যবস্থা সাময়িক। মধ্য ইউরোপের যেসব রাষ্ট্র কোটা পদ্ধতি মানতে চাইছে না, তাদের অমতেই এ পরিকল্পনাটি গ্রহণে অন্য অনেক রাষ্ট্র সম্মত হয়েছে। তবে ইইউ বলছে, ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থেই তারা আবারও বৈঠকে বসবে। কোটা মানতে নারাজ এমন রাষ্ট্রগুলোর যুক্তি হল, কোটা পদ্ধতি চালু হলে আরও অনেক বেশি মানুষ জীবন বিপন্ন করে ইউরোপের দিকে ছুটে আসবে।
শরণার্থী না নিলে শাস্তি : শরণার্থী বণ্টনের প্রশ্নে ঐকমত্যে অনিচ্ছুক সদস্য দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়াতে জার্মানি ইইউ সাহায্য তহবিলে কাটছাঁটের প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। সোমবার ইইউর বৈঠক শেষে এ প্রস্তাব দিয়েছে জার্মানি। এএফপি। নামেই সংহতি, কাজে নয়। ইউরোপীয় পরিবারের দুর্দিনে সব সদস্য দেশ শরণার্থীদের বোঝা ভাগ করে নিতে এখনও প্রস্তুত নয়। সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে এ প্রশ্নে ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো তাদের অবস্থানে অটল রয়েছে। হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া ও রোমানিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে শরণার্থীদের বণ্টনের প্রস্তাব মেনে নিতে একেবারেই প্রস্তুত নয়। এ অবস্থায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার এসব দেশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছেন। জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের এমন প্রস্তাব সমর্থন করেন।
শরণার্থী ইস্যুতে ইইউর বিশেষ সম্মেলন : ইউরোপে জেঁকে বসা শরণার্থী সংকট নিরসনে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইইউ বিশেষ সম্মেলনের প্রস্তাব অস্ট্রিয়া ও জার্মানির। মঙ্গলবার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ইইউ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ককে টেলিফোনে আগামী সপ্তাহে এ সম্মেলনে বসতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ সমস্যা গোটা ইউরোপের। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের এর সমাধান করতে হবে।
সীমান্ত পার হলেই গ্রেফতার
ইউরোপে অভিবাসীপ্রত্যাশীদের ঢল থামাতে এ-সংক্রান্ত একটি কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে হাঙ্গেরি। ইউরোপে অবৈধ অভিবাসীদের যে ঢল নেমেছে তা প্রতিরোধ এ আইন ‘নতুন যুগের সূচনা’ করবে বলে দাবি করেছে দেশটি। সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে প্রতিদিন অসংখ্য লোক ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিস ও ইতালি উপকূলে আসছে। সেখান থেকে এরা সার্বিয়া ও হাঙ্গেরি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পূর্ব জার্মানি ও অস্ট্রিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছেন। হাঙ্গেরি শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে রাজি নয়। এমনকি শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত সপ্তাহে যে বাধ্যতামূলক কোটার ঘোষণা দিয়েছিল, দেশটি তাও মানতে নারাজ। শরণার্থীদের ঢল ঠেকাতে গত মাসে সার্বিয়া সীমান্তজুড়ে ১৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শুরু করে হাঙ্গেরি। গত সপ্তাহেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান জানিয়েছিলেন, শরণার্থীদের প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর আইন করা হবে। মঙ্গলবার থেকে ওই আইন কার্যকর হবে। নতুন আইন মতে, সার্বিয়া বা অন্য কোনো দেশের সীমান্ত দিয়ে হাঙ্গেরিতে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ আটক করতে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.