এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা রবিবার শুরু

 বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আগামী রবিবার থেকে দেশব্যাপী ১০ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে শুরু হচ্ছে এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষা। এসএসসি ও সমমানের এ পরীক্ষায় এবার গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ১৬ হাজার ৮৫৪ কম।
৮টি সাধারণ, একটি মাদ্রাসা ও একটি কারিগরি বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষায় অংশ নেবে ১৩ লাখ তিন হাজার ২০৩ শিক্ষার্থী। গত বছর পরীক্ষার্থী ছিল ১৪ লাখ ২০ হাজার ৫৭ হাজার। এদিকে নবম শ্রেণীতে রেজিস্ট্রেশন করলেও এক লাখ ৮৬ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগেই ঝরে পড়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঝরে পড়ার হার গত চার বছরে অনেক কমেছে। ২০০৯ সালে যেখানে এসএসসির আগে হার ছিল ৪৮ শতাংশ এবার সেই হার ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে বুধবার মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, ঢাকা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম, মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুন নূর, কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কাশেম, ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম ওয়াহিদুজ্জামান। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ না নেয়ায় পরীক্ষার্থী সংখ্যা কমেছে। আগে অষ্টম শ্রেণীতে কোন যাচাই-বাছাই ছাড়াই শিক্ষার্থীরা নবম শ্রেণীতে ভর্তি হতো। এখন জেএসসি ও জেডিসিতে বাছাই হওয়ায় পরীক্ষার্থী কমেছে, তবে ধীরে ধীরে তা স্থিতিশীল হয়ে যাবে। মন্ত্রী বলেন, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়ে চলবে ৫ মার্চ পর্যন্ত। ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে ৬ মার্চ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত। মে মাসেই ফল প্রকাশ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বছর এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেয়া ১৩ লাখ ৩ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছয় লাখ ৬৮ হাজার ২৬৮ ছাত্র এবং ছয় লাখ ৩৪ হাজার ৯৩৫ ছাত্রী। ৮টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৮১৭ পরীক্ষার্থীর মধ্যে চার লাখ ৮৮ হাজার ৪৮২ জন ছাত্র এবং পাঁচ লাখ এক হাজার ৩৩৫ ছাত্রী। দাখিলে অংশ নেয়া দুই লাখ ২৫ হাজার ২৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে এক লাখ ১৫ হাজার ৬৬২ ছাত্রী এবং এক লাখ ৯ হাজার ৩৬৪ জন ছাত্রী। কারিগরিতে ৮৮ হাজার ৩৬০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৪ হাজার ১২৪ ছাত্র এবং ২৪ হাজার ২৩৬ ছাত্রী। ৮টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে ছাত্রী সংখ্যা বেশি হলেও মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডে ছাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা কমেছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার সারাদেশের ২৭ হাজার ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। গতবার ২৬ হাজার ৮৫৫টি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা পীরক্ষায় অংশ নেয়। গতবারের চেয়ে এবার ২১৮ বেশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। মোট পরীক্ষার্থী কম হলেও এবার ২৯৪ কেন্দ্র বেড়েছে। এ বছর দুই হাজার ৭৫৮ কেন্দ্রে পরীক্ষা হবে। গত বছর কেন্দ্র ছিল দুই হাজার ৪৬৪। এবার জেদ্দা, রিয়াদ, ত্রিপোলি, দোহা, আবুধাবী, দুবাই ও বাহরাইন কেন্দ্র থেকে ২৯৩ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেবে। বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ইংরেজী প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র, গণিত ও উচ্চতর গণিত ছাড়া এবার অন্য বিষয়ের পরীক্ষা সৃজনশীল প্রশ্নে হবে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী স্ক্রাইব (শ্রতি লেখক) সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে এবং অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জানান, মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার দিন দিন কমছে। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার আগে ঝরে পড়েছে ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, ২০১১ সালে ছিল ২২ শতাংশ, ২০১০ সালে ৩৬ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে এখানে ঝরে পড়ার হার ছিল ৪৮ শতাংশ। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিব এবারের পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আয়োজনের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সর্বাত্মক সহায়তা কামনা করেন।

No comments

Powered by Blogger.