প্রগতিশীল-জোট ব্যানারে শিবির ছাত্রদল লাঞ্ছিত করল জবি ভিসি ও শিক্ষকদের

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদসহ ৮ শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোটে অনুপ্রবেশকারী শিবির ও ছাত্রদল ক্যাডাররা।
সাংগঠনিক কার্যক্রমে প্রগতিশীল ছাত্রজোটে ১৫-২০ জনের বেশি কর্মী না পেলেও হল আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উপাচার্য ভবন ঘেরাও কর্মসূচীতে তাদের শতাধিক কর্মী দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন মহল দাবি করেছে ঘেরাও কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারীরা মূলত শিবির ও ছাত্রদল ক্যাডার।
লাঞ্ছিত শিক্ষকরা হলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমদ হালিম, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অশোক কুমার সাহা, বাংলা বিভাগের শিক্ষক সেলিম মোজহার, অরুণ কুমার গোস্বামী, জাকির হোসেন তালুকদার, আলি আশরাফ, (৪ পৃষ্ঠা ৬ কঃ দেখুন) প্রগতিশীল-জোটনুর মোহাম্মাদ ও একেএম মহবুবুল হক। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ব্যানারে ঘেরাও কর্মসূচীর একপর্যায়ে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে তারা।
হল আন্দোলনের দাবিতে পূর্বঘোষিত ঘেরাও কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করতে সকাল থেকেই ভাষ্কর্য চত্বরে জড়ো হতে থাকে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে জড়ো হয় ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডাররা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মিছিল চলাকালে তারাও মিছিল বের করে ক্যাম্পাসে হলের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। ছাত্রলীগ উস্কিয়ে দেয়ার জন্য তারা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সামনে সামনে পুরো ক্যাম্পসে প্রদক্ষিণ করে বলে একাধিক সূত্র জানায়। এর পর বেলা ১২টার দিকে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে ঘেরাও কর্মসূচীর জন্য অবস্থান নেয় তারা। পরবর্তীতে প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এ সময় উপাচার্যের পদত্যাগসহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করতে থাকে তারা। মিছিলের স্লোগানে প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ অবস্থায় প্রায় ২ ঘণ্টা রাখা হয়। অবরুদ্ধ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সংস্কৃতিমনা ও প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন শিক্ষকদের তাঁর ভবনে আসতে বলেন। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে বেলা ২টার দিকে উপাচার্য তাঁর কার্যালয় থেকে বের হতে চাইলে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ব্যানারে থাকা শিবির ও ছাত্রদল ক্যাডাররা তাঁকে ঘিরে ধরে। একপর্যায়ে তারা উপাচার্যকে লক্ষ্য করে কটুবাক্য উচ্চারণ করতে থাকে। এ সময় শিক্ষক ও পুলিশ বেষ্টনী দিয়ে উপাচার্যকে তাঁর গাড়ির কাছে নিয়ে যেতে চাইলে ছাত্রদল ও শিবির ক্যাডাররা শিক্ষকদের শার্ট ধরে টানাটানি শুরু করে। টানাটানির একপর্যায়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম মাটিতে পড়ে যান। এ সময় হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষার্থী রাশেদ ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল-আমিন উপাচার্যের কোট ধরে টানাটানি শুরু করে। শিক্ষকরা উপাচার্যকে রক্ষা করতে চাইলে কয়েক শিক্ষকের ওপর তারা চড়াও হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ আরও ৬ শিক্ষক লাঞ্ছিত হন। এ ঘটনার সত্যতা স^ীকার করে জুনায়েদ আহমদ হালিম বলেন, ‘প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা অনুপ্রবেশকারী শিবির ও ছাত্রদলের ক্যাডারদের নিয়ে হল আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেছে, এটা দুঃখজনক। প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নামে তারা যে নৈরাজ্য করছে তা নীতিবিরোধী।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আবির বলেন, শিক্ষকদের যদি কেউ লাঞ্ছিত করে থাকে তা হলে এটা নিন্দনীয়। আন্দোলন হলেই আমাদের জামায়াত শিবির বলা হয়ে থাকে। তবে উপাচার্যের ওপর হামলাকারী রাশেদ ও আল-আমিনকে আমি চিনি না। এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদের মুঠো ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। ঘটনা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অশোক কুমার শাহা বলেন, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসতে আগ্রহী। শিক্ষক লাঞ্ছিতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.