হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকের অভাবে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে- বগুড়ার ১৫টি হাসপাতালে ১৯৪ জন চিকিৎসক নেই

বগুড়ার ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও তিনটি বিশেষ হাসপাতালে চিকিৎসকের ২৯৬টি পদের ১৯৪টিই শূন্য। এসব হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাবে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এর মধ্যে ১১টিতে দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নেই। হাসপাতালগুলোয় আসা দরিদ্র মানুষ চিকিৎসক-সংকটের কারণে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বগুড়ার সিভিল সার্জন খলিলুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকদের বদলি করা হলেও, গ্রামে থাকার মানসিকতা না থাকায় অল্প কিছুদিনের মধ্যে তদবির করে তাঁরা বদলি হয়ে শহরের হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যাচ্ছেন। মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর থেকে বদলি করে দিলে স্বাস্থ্য বিভাগের জেলা কার্যালয়ের এ ক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তো দূরের কথা, চিকিৎসা কর্মকর্তরাও গ্রামে থাকতে চান না।’
খলিলুর রহমান জানান, শৈল্য চিকিৎসক ও অবেদনবিদের অভাবে এখন এসব হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আরএমওর পদ শূন্য হয়ে পড়ে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, তিনটি বিশেষ হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় চিকিৎসকের ২৯৬টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে ১০২ জন চিকিৎসক কর্মরত। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ তিনজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চারজন দিয়ে চলছে দুপচাঁচিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ দুটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পদ রয়েছে যথাক্রমে ১৫ ও ২২টি। ছয়জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে গাবতলী, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নন্দীগ্রাম বাদে বাকি ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরএমওর পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। কাহালু ছাড়া অন্য কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নাক-কান-গলা রোগবিশেষজ্ঞ ও দন্ত চিকিৎসক নেই।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বগুড়ার সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আলম জানান, গ্রামের হাসপাতালগুলোয় হাতেকলমে শেখার ও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ খুব কম থাকে। অনেকেই গ্রামের হাসপাতালে গিয়ে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান কাজে লাগানোর সুযোগ পান না। এসব কারণে নবীন চিকিৎসকদের অনেকেই শহরের হাসপাতালে বদলি হতে চান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, ক্লিনিক ও প্যাথলজি ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখার সুযোগ শহরে বেশি। এ কারণে কোনো চিকিৎসককে উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে বদলি করলে বিএমএ, স্বাচিপ ও ড্যাবের মতো সংগঠনের নেতা বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুপারিশ নিয়ে অল্প কিছুদিনের মাথায় তিনি বদলি হয়ে যান।

No comments

Powered by Blogger.