রূপপুরের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ সেপ্টেম্বরে শুরু- মিট দ্য প্রেসে ইয়াফেস ওসমান

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রাথমিক অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শুরু হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরে। তবে বিদ্যুত কেন্দ্রের মূল অবকাঠামো রিয়্যাক্টর বসানোর কাজ শুরু হবে ২০১৫ তে।
জ্বালানি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশের (এফআরবি) উদ্যোগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এ কথা জানান।
এতে জানানো হয়, সরকার সম্প্রতি রাশিয়া থেকে যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে তার সুদের হার সব মিলিয়ে দুই ভাগের কাছাকাছি। এ অর্থ দিয়ে প্রকল্পের নকশা, ৬২ ধরনের বিভিন্ন সমীক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। পরবর্তী অংশের অর্থাৎ মূল অবকাঠামো নির্মাণের ৯০ ভাগ অর্থ দেবে রাশিয়া। তখন সুদের হার দুই দশমিক ২৫ ভাগের বেশি হবে না। ঋণের অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ২৮ বছর সময় পাবে। ডিজাইন শেষ না করা পর্যন্ত বিদ্যুত কেন্দ্রর সকল অবকাঠামে নির্মাণ ব্যয় বলা সম্ভব নয় বলে মিট দ্যা প্রেসে জানানো হয়। তবে রাষ্ট্রভেদে নির্মাণ ব্যয়ের হেরফের হয় জানিয়ে বলা হয়, ৩০ ভাগ কাজ রয়েছে পূর্তকাজ। অন্য দেশের তুলনায় আমাদের এখানে এ ব্যয় কম হবে। সব মিলিয়ে পুরো প্রকল্পের ব্যয় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। বিদ্যুত বিক্রির লভ্যাংশ থেকে ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে। রিয়্যাক্টরের বয়সকাল হিসাব করা হয়েছে ৬০ বছর। কিন্তু ৭২ বছর পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারবে রিয়্যাক্টরগুলো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের চিন্তা থেকে সরে আসার কোন আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন না। রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে হলে প্রযুক্তির সর্বাধুনিক ব্যবহারকে গ্রহণ করতে হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রোসাটমের মহাপরিচালক দেখা করলে তিনি যত দ্রুত সম্ভব কাজটি শুরু করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের প্রেক্ষিতে রোসাটম সম্প্রতি একটি কর্মপরিকল্পনা পাঠিয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সব ঠিক থাকলে ২০১৫ সালের মধ্যে নকশা প্রণয়নসহ অবকাঠামোগত সব কাজ সম্পন্ন করে বিদ্যুত কেন্দ্রের এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটটি স্থাপন শুরু করা সম্ভব হবে। ইয়াফেস ওসমান বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে দুই হাজার মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুত উৎপাদন শুরু করা যাবে।
মিট দ্যা প্রেসে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক মোঃ শওকত আকবর। তিনি জানান, পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংবলিত রাশিয়া থেকে সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি দিয়ে রূপপুরে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে। আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে ও রাশিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। গত নবেম্বরে রাশিয়ার পারমাণবিক জ্বালানি সংস্থা রোসাটমের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করে বাংলাদেশ। ওই চুক্তি অনুয়ায়ী অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে রাশিয়া। প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ ও জ্বালানি বর্জ্য ফেরত নেবে তারা। এখানে পারমাণবিক বিকিরণের কোন সম্ভাবনা নেই। এছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যাতে কেন্দ্রটির কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ খেয়াল রাখা হয়েছে।
এছাড়া অনুষ্ঠানে রিয়্যাক্টর বিষয়ে প্রকৌশলী জুলকার নাইন, আইন এবং রেগুলেশন বিষয়ে রহমান সামিনা এবং নির্মাণ কাজ সম্পর্কে প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, এখন অনেক দেশেই শহরের কাছাকাছি জায়গায় পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। শহরের মধ্যদিয়ে বর্জ্য পরিবহন করা হচ্ছে কিন্তু বিকিরণের মাত্রা শূন্য হওয়ায় মানুষের কোন ক্ষতি হচ্ছে না।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং পরমাণু শক্তি কমিশনের সহায়তায় অনুষ্ঠিত মিট দ্যা প্রেস এর সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক অরুণ কর্মকার। সংগঠনের সভাপতি মোল্লাহ আমজাদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান এএসএম ফিরোজ।
প্রসঙ্গত গত ১০ জানুয়ারি রাশিয়াতে দুই দেশের মধ্যে কেন্দ্রটির প্রাক-নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের ৬২টি সমীক্ষা পরিচালনা ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেবে রাশিয়া।
বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের সমীক্ষা পরিচালনা ও তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সরকার জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া ‘রেডিয়েশন কন্ট্রোল অথরিটি (তেজষ্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ) আইন অনুযায়ী একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.