সমকালীন প্রসঙ্গ-মানুষে আস্থা বলেই রবীন্দ্রনাথ আপন by কামাল লোহানী

 ১৯৬১ সাল। রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষ পালনে উদ্যোগী সারা পৃথিবী। কিন্তু তৎকালীন পূর্ব বাংলায় এ তো জন্ম পালনোৎসব নয়, সে ছিল এক মহতী লড়াই। সামরিক চক্রের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রবীন্দ্রশতবর্ষ উদযাপনে জেলায় জেলায় উৎসব কমিটি গঠিত হয়েছিল।
ঢাকায় হয়েছিল তিনটি প্রধান উদযাপন কমিটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক একটি কমিটি, ঢাকা প্রেস ক্লাবকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের একটি কমিটি, আরেকটি কমিটি দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে, যাকে বলা হলো 'ঢাকা পূর্ব কমিটি'। সব জন্মশতবর্ষ কমিটি থেকে এ কমিটির ভিন্ন পরিচিতি রক্ষার জন্যই ঢাকা পূর্ব কথাটি বন্ধনীর মধ্যে ব্যবহার করা হলো।
যাহোক, আইয়ুব খানের সামরিক কর্তৃপক্ষের সব নির্দেশ-নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শতবর্ষ উদযাপন হলো সারাদেশে মহাধুমধামের সঙ্গে।
শিলাইদহে কুঠিবাড়ী, শাহজাদপুরে কাছারিবাড়ী, পতিসরের সমবায়-চিন্তা কিংবা শ্বশুরালয়ের স্মৃতিবাহী দক্ষিণডিহি আজ আমাদের পথের দিশা দিয়েই চলেছে। আজ যে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা নিয়ে গর্ব করছেন অর্থনীতিবিদরা, তা-ও কবিগুরু প্রবর্তিত কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচির অন্তর্গত প্রথম উচ্চারিত। সমরনায়ক শিরোমণি ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান তখন পাকিস্তানের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, একটি সামরিক অভ্যুত্থানের 'মহানায়ক' হিসেবে। তার ক্ষমতার দাপট, ধমক-ধামক, নির্দেশ-নিষেধাজ্ঞা, পূর্ববঙ্গের সম্পদ অপহরণ_ এসবই আমাদের যখন ক্ষোভে-ক্রোধে বিস্ফোরিত করেছিল, তখন ছিলেন কবিগুরু, বিদ্রোহী কবি আর কবি কিশোর, ওদের লেখা সাহসেই আমরা উদ্দীপ্ত হয়েছিলাম প্রতিরোধ থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে।
কিন্তু রবীন্দ্র-বিরোধিতার মৌল দুশমন সাম্প্রদায়িকতা এবং সামরিকতন্ত্র উভয়ই এ দেশের মানুষের সম্পদ ছিনতাই করেও নিরস্ত হয়নি, বরং বাংলার সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য এবং উপেক্ষা-অবহেলার নিরন্তর শিকারে পরিণত করেছিল। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র শতবর্ষ সফল পালনে 'ত্রুক্রদ্ধ' পাকিস্তানি সমরনায়কপ্রধান ১৯৬২-তে সাহসী ছাত্রদের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে ওদের চমকে দিল। দমননীতির স্টিমরোলার নেমে এলো। নির্বাচনের খায়েশ হলো সমরতন্ত্রীদের। 'মৌলিক গণতন্ত্র' বলে অদ্ভুত এক বিধান সৃষ্টি করল নিজেদের সুবিধার কথা মনে রেখে। দেশবাসী ওই স্বৈরশাসককে প্রত্যাখ্যান করল ঘৃণাভরে, কিন্তু সম্মিলিত বিরোধী দল (পড়সনরহবফ ড়ঢ়ঢ়ড়ংরঃরড়হ ঢ়ধৎঃরবং) গঠন করে জনমত সংগঠিত করলেও সামরিক ভীতি সৃষ্টি করে ক্ষমতার দাপট ও ভোটে কারচুপি করে সামরিক শাসনকর্তা নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করল। জনমনে বিক্ষোভ সঞ্চারিত হলো। অবশেষে মানুষের এমন সংহতিকে ভাঙতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ১৯৬৫ সালে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হলো এবং সাম্প্রদায়িকতার ঘৃণ্য চক্রান্ত এঁটে ঈৎঁংয ওহফরধ অভিযান শুরু করল। ভয়ভীতি প্রদর্শন, দেশত্যাগ এবং অশেষ নির্যাতন শুরু হয়ে গেল। যার একটি অভিশপ্ত ক্ষত_ শত্রুসম্পত্তি বলে ঘোষিত অমুসলিম নাগরিকদের দখলকৃত জমিসংক্রান্ত ১৯৬৫ সালের আইন, নানাভাবে এবং ভিন্ন ভিন্ন নামে আজও জমি-সম্পত্তি গ্রাস করে চলেছে।
নির্বাচনে জবরদস্তি বিজয়, যুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ইত্যাদি করেও যখন বাংলার রাজনীতি-সচেতন জনগোষ্ঠীকে শায়েস্তা করা যাচ্ছিল না, তখন তারা সাংস্কৃতিকভাবে আবার নতুন পরিকল্পনায় চক্রান্ত আঁটল। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসকচক্রের তথ্যমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দিন আহমদ ওদের পার্লামেন্টের এক অধিবেশনে মন্তব্য করে বসল : 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতির কেউ নন।' এ খবরটি বেতারে প্রচারিত হতেই পূর্ববঙ্গ প্রতিবাদ করে জানিয়ে দিয়েছিল, 'রবীন্দ্রনাথ আমাদের। রবীন্দ্রনাথ আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির মহান ও অবিচ্ছেদ্য অংশী।'
পূর্ব বাংলার সংস্কৃতি অঙ্গনের বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্যসংশ্লিষ্ট-সচেতন অসাম্প্রদায়িক সজ্জনেরা অবশেষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সম্মিলিত হয়ে সংঘবদ্ধ শক্তিতে 'সাংস্কৃতিক স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা পরিষদ' গড়ে তোলেন। পরিষদ সেদিন প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের সামরিকতন্ত্র সমর্থিত অবস্থানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল একটি মোকাবেলা ফ্রন্টে। সাংস্কৃতিক স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তিন দিনব্যাপী প্রতিবাদী রবীন্দ্র অনুষ্ঠান আয়োজনে। অনুষ্ঠান হবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। অভূতপূর্ব সাড়া সর্বত্র। রাজধানী ঢাকা উদ্বেলিত। বাঙালি মনন ও স্বাজাত্যবোধে উদ্বুদ্ধ মানুষের ঢল নামল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে (যার নাম তখন ছিল ইস্কান্দার মীর্জা হল)। এ অনুষ্ঠান আয়োজনে ছিল ওই পরিষদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো। যার মধ্যে ছিল বুলবুল একাডেমী অব ফাইন আর্টস (বাফা), ছায়ানট, সংস্কৃতি সংসদ, সৃজনী, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ইত্যাদি।
মনে পড়ছে সেদিনের কথা। কী প্রচণ্ড সাহসের সঙ্গেই না মোকাবেলা করতে হয়েছিল ওই সামরিক সরকার প্রেরিত দুই ট্রাক গুণ্ডাবাহিনীকে। অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। সেদিন 'চিত্রাঙ্গদা' নৃত্যনাট্য পরিবেশনকালে হঠাৎ চোখে পড়ল ছাত্রনেতা রাশেদ খান মেনন ও হায়দার আকবর খান রনো দু'জনেই পাজাকোলা করে অনেক হকিস্টিক নিয়ে হলে ঢুকে বলল_ 'এগুলো রেখে দিন, কাজে লাগতে পারে।' কেন বলল, তাৎক্ষণিক বুঝলাম না। গ্রিনরুমে এগুলো রেখে চলে গেল।
মিলনায়তন তো লোকে লোকারণ্য। কী করা যায়! এর মধ্যে আমরা উপস্থিত দর্শকদের দ্বিতীয় শো করার আশ্বাস দিয়ে আশ্বস্ত করলাম। কিন্তু কী হবে, ওদিকে মিরপুর আর মোহাম্মদপুর থেকে দুই ট্রাক গুণ্ডা পাঠিয়েছে গভর্নর মোনেম খাঁ। তা হলে আমাদের করণীয় কী? 'চিত্রাঙ্গদা' করতেই হবে। ইতিমধ্যে দেরি দেখে গুণ্ডা দলের সর্দার এলো আমাদের সঙ্গে কথা বলতে, সঙ্গে জগন্নাথ কলেজের একজন ছাত্র। দেখতে বেশ ভদ্র, কথায় বিনয়ী। বলল, 'ফিকর মাত কিজিয়ে। কই ডর নাহি। আপনারা অনুষ্ঠান চালু করুন।' অনেকভাবে আমাদের বোঝাতে চেষ্টা করল সে। আমরা বললাম, 'গুণ্ডা বাহিনী থাকলে আমরা শুরু করব না।' অতি চালাক সর্দার তার দলবলকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে আমাদের আশ্বাস দিয়ে হুকুমের ঢঙে শুরু করতে বলে চলে গেল। আমরা গোপনে ওদের মুভমেন্ট সম্পর্কে খবর নিয়ে ঠিক করলাম, চিত্রাঙ্গদা শুরু করব। ইতিমধ্যে জানতে পারলাম, গুণ্ডার দল সামনে রমনা রেস্তোরাঁয় বসে মদ্যপান করছে। এত জনসমাগম দেখে ওরা ভয় পেয়েছে। তাদের কাছে নির্দেশ এসেছে_ এই শোতে আক্রমণ না করে দ্বিতীয় শোতেই হামলা চালাবে। ততক্ষণ ওরা রমনা রেস্তোরাঁয় বসে তাড়ি টানবে। গোপনে খবরটা এসে আমাদের কাছে পেঁৗছায়। আমরা ঠিক করলাম, দ্বিতীয় শো করব না। পরে করার আশ্বাস দিয়ে দর্শকদের বুঝিয়ে রেহাই পেতে হবে। হলোও তাই। প্রথম শো শেষ হতেই ওয়াহিদুল হক ভাই মঞ্চের পর্দা তুলে সামনে দাঁড়িয়ে বলে ফেললেন, 'বাইরের আক্রমণের আশঙ্কায় দ্বিতীয় শো করা সম্ভব হচ্ছে না বলে আমরা দুঃখিত।' করজোড়ে দর্শকদের উদ্দেশে কথাগুলো বলে আশ্বাস দিলেন।
আমরা ভাবছি, এখন তাড়াতাড়ি সবার নিরাপদে বাড়ি ফেরা প্রয়োজন। মেয়েদের বাফার মাইক্রোবাসে উঠিয়ে বাফার এক ছাত্রকে বলে দেওয়া হলো, এদের ঠিকমতো বাড়ি পেঁৗছানোর দায়িত্ব তোমার। ওদের গাড়িতে উঠিয়ে আমরা কোন দিকে যাব, এটা ঠিক করতে করতে মঞ্চে ফিরে এলাম। আমি, ওয়াহিদ ভাই, মিসেস হাজেরা মাহমুদ, মাহমুদ, নূরুল হুদা ও সৈয়দ আহমদ হোসেন ওখানে ছিলেন। হুদা ভাই আর আহমদ হোসেন চলে গেলেন, তখন আমাদের উদ্ধারকর্তা হিসেবে হাজির হলেন রেজা আলী (এখন আওয়ামী লীগের এমপি), তার ফোর ডোর ফক্সওয়াগন গাড়িটি নিয়ে।
এসেই বললেন, 'জলদি চলুন। মোনেম খাঁর গুণ্ডারা এখুনি হামলা করতে আসছে।' শুনে শঙ্কিত হলাম বটে, কিন্তু এ হামলার আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল বলে তেমন ঘাবড়ালাম না। শুধু রেজা আলীকে বললাম_ 'এসব যন্ত্রপাতি, নৃত্যনাট্য আয়োজনের সাজ-সরঞ্জামগুলোর কী হবে?' রেজা বললেন, 'আগে জান বাঁচান ফরজ। তারপর ওগুলো নিয়ে ভাবা যাবে।' কথোপকথনে সময় বয়ে যাচ্ছে বলে ছাত্রনেতা রেজা আলী জলদি করার জন্য তাগিদ দিলেন। আমরা তখন তিনজন_ হাজেরা আপা, ওয়াহিদুল ভাই এবং আমি।
রেজা আলী ইনস্টিটিউশন থেকে বেশ খানিকটা দূরে (এখন যেখানটায় 'শিখা চিরন্তন' সেখানটায়) গাড়ি রেখে গিয়েছিল। আমরা সেখানে গিয়ে উঠলাম। প্রথমে হাজেরা মাহমুদকে ধানমণ্ডি ৮নং ব্রিজ পেরিয়ে ডানদিকের একটি বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে কোনদিকে যাবে জানতে চাইলে ওয়াহিদুল ভাই বললেন, চলো প্রেস ক্লাবে যাই। চা খেয়ে না হয় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে যাওয়া যাবে পরিণতি দেখতে। তা-ই হলো। চা-পান শেষে ইনস্টিটিউশনের মীর্জা হলে গিয়ে যে তাণ্ডবদৃশ্য দেখতে পেলাম, চোখে জল এসে গেল।
বুঝলাম, আমাদের না পেয়ে ক্রোধটা মিটিয়েছে মিলনায়তনের আসন আর মঞ্চের ওপর রেখে যাওয়া যন্ত্রগুলোর ওপর দিয়ে। এমনই হৃদয়হীন, নৃশংস, সংস্কৃতিবিরোধী সন্ত্রাস চলত তখন।
কিন্তু সাহসের সঙ্গে আমরা জনগণকে নিয়ে এসব স্বেচ্ছাচারিতার নির্মম তাণ্ডবলীলাকেও মোকাবেলা করে নিজেদের উত্তরাধিকার এবং ইতিহাসের ধারাবাহিকতাকে সমুন্নত রেখেছিলাম। কবিগুরু তাই আমাদের অস্তিত্ব, সংগ্রামের সারথি, ইতিহাস-প্রণেতা। আজ তাই সেদিনের বাধা অতিক্রম করে কবিগুরু বাংলার সকল মানুষের। তারই রচিত 'সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি' গানটি ব্রিটিশ মতলবে পরিকল্পিত বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে রচিত হয়েও আজ খণ্ডিত বাংলা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। গোটা জাতি গাইছে এই পরিচিতি সঙ্গীত। কবিগুরুই বোধহয় সারা পৃথিবীতে একমাত্র কবি-সাহিত্যিক, যার দুটি গান দুটি রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত। এ কী দুর্লভ সম্মান!
এতক্ষণ যে বাধা প্রতিবন্ধকতার কথা বলছিলাম, সেসব পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা কবিগুরুকেই অনুসরণ করেছি। তারই নির্দেশ_ 'বাধা দিলে বাধবে লড়াই' মেনে নিয়েছি এবং অমিত তেজে বলতে শিখেছি_ 'এ লড়াই জিততে হবে।' সেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মোৎসব এ বছর। তাই দেশে দেশে ধুম পড়ে গেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত আর ব্রিটেনে। ঢাকা, দিলি্ল আর কলকাতায় তো কর্মসূচি আর অনুষ্ঠানের শেষ নেই। সরকারে-সরকারে যৌথ কিংবা স্বতন্ত্র অনুষ্ঠান আয়োজন ছাড়াও বেসরকারি উদ্যোগে কত যে আয়োজন চলছে, তার ইয়ত্তা নেই। এত বছর পরও সেই রবীন্দ্রনাথ, তার লেখা_ সকল কর্মই কতটা যে প্রাসঙ্গিক, তা ভাবা যায় না।
তিনিই আমাদের_ মানুষের, সকলের মনে আজও সমুপস্থিত সমানভাবে, তালে, ছন্দে, কথায়, কল্পনাতে, সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে, অর্থনীতি এমনকি রাজনীতিতেও। তারই তো নির্দেশ ছিল, 'মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ।' আমরাও তো বিশ্বাস হারাইনি তার এবং তার মানুষের ওপর থেকে।

কামাল লোহানী :সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
 

No comments

Powered by Blogger.