কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বছর সরকারকে ১৮১৭ কোটি টাকা মুনাফা দেবে- লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০৯.৩১ শতাংশ বেশি ॥ বার্ষিক হিসাব স্থিতি প্রকাশ by শাহ আলম খান

এ বছর সরকারের অনুকূলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় এক হাজার ৮১৭ কোটি টাকা বেশি মুনাফা হস্তান্তর করবে। হস্তান্তরিত এ অর্থ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০৯.৩১ শতাংশ বেশি। বিগত অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল এক হাজার ৬৬৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
জানা গেছে, এ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ২ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লভ্যাংশ হিসেবে প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। তবে হিসাব চূড়ান্ত হওয়ার পর এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৮১ কোটি ৮ হাজার টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪৮১.০৮ কোটি টাকা বা ৭৪.০৫ শতাংশ বেশি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর ড. এসকে সুর চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, এ বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালন আয় বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে নিট মুনাফার পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব স্বচ্ছতার সঙ্গে পালন করতে সক্ষম হওয়াতেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালন আয় ও নিট মুনাফা বাড়লেও সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয়ও। দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম রেগুলেটর হিসেবে আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ব্যাপক সংস্কার ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কারণেই গত অর্থবছরের তুলনায় এ বছর ব্যয় সামান্য বেড়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে দাবি করা হয়েছে, ইতোমধ্যে বিভিন্ন শাখার বাস্তবায়িত প্রকল্প সুফল দিতে শুরু করেছে। এ কারণে বছরান্তের নিরীক্ষায় দেখা গেছে, সার্বিক আয়-ব্যয়ের সমন্বয় শেষে ২০১১-১২ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট মুনাফার পরিমাণ গত অর্থবছরের চেয়ে ১২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে নিট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৬৮ টাকা।
বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ বার্ষিক হিসাব স্থিতি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, গত ২৮ আগস্ট, গবর্নর ড. আতিউর রহমান এই হিসাব স্থিতিতে স্বাক্ষর করেন।
গবর্নর স্বাক্ষরিত ওই স্থিতিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালন আয় হয়েছে ৫ কোটি ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৩৮৮ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ১১৩ টাকা। এই হিসাবে গত অর্থবছরে পরিচালন আয় বেড়েছে আড়াই কোটি টাকার বেশি।
তবে পরিচালন আয় বেশি হলেও ব্যয় বাড়ায় এ সময়ে পরিচালন মুনাফা কমেছে ২০ দশিক ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১০-১১ অর্থবছরের চেয়ে পরিচালন মুনাফা কমেছে ১ কেটি ৮১ লাখ টাকার কিছু বেশি। এ সত্ত্বে¡ও বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক হিসাব স্থিতি অনুযায়ী সার্বিক আয়-ব্যয়ের সমন্বয় শেষে নিট পরিচালন মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ব্যাপকহারে বেড়েছে।
হিসাব স্থিতি পর্যালোচনায় জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদায়ী হিসাব বছরে মোট আয় ধরা হয়েছিল ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার ২০০ টাকা। তবে বছর শেষে এ আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দাঁড়ায় ৮ কোটি ৬৭ লাখ ৮০ হাজার ৪৬৪ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৯.৬ শতাংশ বেশি।
অপরদিকে ব্যয়ের বাজেট ধরা হয়েছিল ১ কোটি ৪২ লাখ ২৪ হাজার ১০০ টাকা। তবে বছরান্তে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার ৯৯৬ টাকা। এছাড়া বৈদেশিক উৎস থেকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের আয় বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে বৈদেশিক উৎস থেকে আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৩.২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ ১৯ হাজার ১৫৭ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৯৬ লাখ ৪১ হাজার ৮৭৬ টাকা।
আর অভ্যন্তরীণ উৎসের অন্যতম খাত থেকে সরকারের লেনদেন হিসাব পরিচালনা থেকে আয় হয়েছে ২ কোটি ৯৯ লাখ ১ হাজার ৭২৭ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ১৪৭.৮৯ শতাংশ বেশি। এর বাইরে অভ্যন্তরীণ উৎসের অন্যান্য খাত থেকে আয় এসেছে ১ কোটি ৪২ লাখ ২৮ হাজার ৫০৪ টাকা। এ ক্ষেত্রেও প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ৮৩.১৯ শতাংশ। ওদিকে স্বর্ণ ও রৌপ্য থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আয় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডেপুটি গবর্নর ড. এসকে সুর চৌধুরী বলেন, বিগত বছরের ন্যায় ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড ও ইন্টারন্যাশনাল এ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে এই আর্থিক প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও বহির্নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগী নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
তিনি জানান, এ অর্থবছরে ব্যাংকের মোট আয় ৫৫০৪.৯৪ কোটি, মোট ব্যয় ১৬৪৬.৩০ কোটি এবং নিট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮৫৮.৬৪ কোটি টাকা, যা বিগত বছরের তুলনায় প্রায় ১০৪.৬৫ শতাংশ বেশি ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে আর্থ-ব্যবস্থাপনাসহ দেশের ব্যাংকিং খাত ও আর্থিক খাতের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি ও উন্নয়ন, সার্বিক লেনদেন ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু পরিচালনা, নোট ইস্যুকরণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ এবং সরকারের যাবতীয় লেনদেন ছাড়াও দেশের মুদ্রা ও ঋণনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করে থাকে। এসব কর্মকা-ের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা। গবর্নরসহ ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা পর্ষদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক কর্মকা- পরিচালনা করে থাকে।

No comments

Powered by Blogger.