নির্বাচন কমিশনের পদ্যতাগ দাবি বিএনপির

হালনাগাদ ভোটার তালিকায় ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের নাম অন্তর্ভূক্তির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি বলেছে, এটা ‘বেআইনি কার্মকাণ্ড’। বেআইনী কাজ করে শপথ ভঙ্গের কারণে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) স্বেচ্ছায় পদত্যাগের দাবিও করেছে দলটি। সেইসাথে নারী ভোটারের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। আজ সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন এ দাবি জানান।
ইসিকে ‘নির্লজ্জ, অযোগ্য ও দুষ্টের শিরোমণি’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু তারা নির্লজ্জ, তাই যদি তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করে তাহলে আমরা (বিএনপি) রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে তাদের অভিশংসনের (ইমপিচমেন্ট) দাবি করছি।
তিনি বলেন, আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, বর্তমান বিতর্কিত-আজ্ঞাবহ ও দুষ্টের শিরোমণি নির্বাচন কমিশন এ বছরের শেষের দিকে প্রায় তিনশ’ পৌরসভা নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সামনে রেখে ভোটার তালিকা হালনাগাদের একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এটি ইসির একটি রুটিন কাজ হলেও এই আজ্ঞাবহ, অযোগ্য ও ব্যর্থ ইসি ভোটার তথ্য হালনাগাদের কাজটি অতীতেও সুষ্ঠুভাবে করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, রেওয়াজ অনুযায়ী বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোটার তথ্য সংগ্রহ করার রীতি থাকলেও এ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সচেতনতা সৃষ্টির প্রচেষ্টায় যে প্রচারণা চালানোর ব্যবস্থা করা হয়, তা ইতোপূর্বে পরিলক্ষিত হয়নি। শাসকদলীয় কর্মীদের ভোটার তথ্য সংগ্রহ করার কাজে নিয়োজিত করায় ইতোপূর্বে এ কর্মসূচি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়িতে বাড়িতে ভোটার তথ্য সংগ্রহ করতে গড়িমসি করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা তাদের কর্তব্য পালন না করায় যোগ্য ও প্রাপ্ত ভোটারদের অনেকেই ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত হতে পারেননি।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে আগের তুলনায় ভোটার তালিকায় নারী ভোটারদের নিবন্ধনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন যার ইলেক্টরাল সিস্টেমের নিরীক্ষা অনুযায়ী, ২০০৮ সালে আট কোটি ১০ লাখ ৫৮ ভোটার ছিল। তখন পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার বেশি ছিল ১৪ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ জন। কিন্তু এরপর প্রতিবার ভোটার তথ্য হালনাগাদ করতে গিয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা ক্রমাগতভাবেই কমছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
আরো উদ্বেগের বিষয়, ২০১৩ সালে সর্বশেষ হালনাগাদে নারী ভোটারের চেয়ে উল্টো পুরুষ ভোটার বেড়েছে দুই লাখ ৯১ হাজার ৩৯৯ জন। নারী ভোটারের সংখ্যা কেন কমে যাচ্ছে- এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কোনো মাথাব্যথা নেই। দেশে ৯০ সালের পর থেকে ভোটদানে নারীদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ বরাবরই বেশি ছিল। অথচ গত কয়েক বছরে চিত্রটি বদলে যাওয়া, নারীর ক্ষমতায়ন ও রাজনীতিতে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি নেতিবাচক প্রতিফলন ছাড়া আর কিছুই নয়। এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি আছে কি না তাও আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।
বিএনপির এই নেতা অরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এ দেশের নারী সমাজ যতবার নির্বিঘ্নে ভয়-ভীতির পরিবেশ মুক্ত হয়ে অবাধে ভোট দিতে পেরেছেন, তাদের অধিকাংশই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে, তার দলকে, ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়েছেন। বিষয়টি অনুধাবন করে সম্ভবত আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন নারী ভোটারদের তথ্য সংগ্রহে খুব বেশি উৎসাহী নয় এবং এ হার কমে গেলেই বোধ হয় তারা খুশি হন। নারী ভোটার কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কোনো উদ্বেগ ও করণীয় না থাকায় আমাদের এ আশঙ্কা আরো জোরদার হয়েছে।
আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, আমরা গত সিটি নির্বাচনের ভোট জালিয়াতি ও সহিংস ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছিলাম। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী বিদেশী রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রধানরাও একই দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু আজ্ঞাবহ ইসি এ দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে প্রমাণ করেছে তাদের নিয়োগকারী শাসকগোষ্ঠীর মনোবাসনা পূরণ করাই একমাত্র ধ্যান ও জ্ঞান হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এ ধরনের বিতর্কিত নির্বাচন কমিশনকে বহাল রেখে ভবিষ্যতে কোনো স্থানীয় নির্বাচনে কোনো বিরোধী রাজনৈতিক দল অংশ নেবে কি না এ সংশয় থেকেই গেল। আমরা দাবি করছি, অনতিবিলম্বে এ ব্যর্থ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার সহযোগী কমিশনাররা সংবিধানবিরোধী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকায় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন।

No comments

Powered by Blogger.