ভূমিদস্যু এখন গ্রামে, রাতের ‍আঁধারে জমি দখলের চেষ্টা

এবার লোকালয়ে রাতের অন্ধকারে ভূমিদস্যুদের আগ্রাসী তৎপরতায় সশস্ত্র পাঁয়তারার অভিযোগ উঠেছে। বনদস্যুদের আদলে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার গাজীপুর ইউনিয়নের শৈলাট, গাজীপুর ও নয়াপাড়া গ্রামের ৮শ' বিঘা জমি অবৈধভাবে দখলে নেয়ার চেষ্টা চলছে।
ৰমতাসীন দলের পরিচয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও জামাই-শ্বশুরের 'মেসার্স গ্রীন কেয়ার রিসোর্সেস'র নজর পড়েছে গ্রামের সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বনের ওপর। জালজালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভুয়া দলিলপত্র দেখিয়ে পেশীশক্তির জোরেই ৰমতাধররা দখলদারিত্ব কায়েম করতে চাচ্ছে। ভূমিদসু্যদের অন্ধের মতো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় পুলিশের বড়কর্তা। 'মেসার্স গ্রীন কেয়ার রিসোর্সেস'র অভিযুক্তরা ভূমিদখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ক্রয়সূত্রে মালিকানাধীন জমি বুঝিয়ে না দিতেই একটি চিহ্নিত মহল ষড়যন্ত্র করছে করেছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাইফুল ইসলাম বাচ্চু। উপস্থিত ছিলেন এ্যাডভোকেট মমতাজুল ইসলাম, খোরশেদ আলমসহ অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী। সাধারণ গ্রামবাসী মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রেস কনফারেন্সের সময় এ দখলদারিত্বের প্রতিবাদ জানান।
তাঁরা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানানো হয়, ভূমি হারানোর ভয়ে শঙ্কিত সাধারণ মানুষের মামলা নিচ্ছে না স্থানীয় থানা পুলিশ। উল্টো ভূমিদসু্যদের বিভিন্ন মামলায় সাধারণ মানুষকে গ্রামছাড়া করছেন পুলিশের এ বড়কর্তা। ভূমিদসু্যদের আগ্রাসী তৎপরতা সফল করতেই স্থানীয় পুলিশের বড়কর্তা জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশও অমান্য করে চলেছেন। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশও মানছেন না শ্রীপুর থানার ওসি। এলাকায় কথিত আছে, শ্রীপুর থানার ওসি নিজেকে নাকি আইজিপির ভাতিজি জামাই হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং এ কারণে পুলিশ প্রশাসনের চেন অব কমান্ড তিনি থোড়াই কেয়ার করছেন। ভুক্তভোগী অর্ধশতাধিক কৃষক-শ্রমিক সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। তাঁরা সরকারের সবের্াচ্চ মহলে নিজেদের বেঁচে থাকার 'ঠাঁই'টুকু রৰার জন্য বিশেষ দৃষ্টি কামনা করেছেন। তবে 'গ্রীন কেয়ার রিসোর্সেস'র পৰ থেকে বলা হয়েছে, তারা কারও জমি দখল করেনি। বরং নিজেদের ক্রয়কৃত জমির দখল পাচ্ছে না।
লিখিত বক্তব্য ও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, শ্রীপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোসত্মাফিজুর রহমানের (বেনসন বুলবুল) জামাতা আলী হায়দার রতন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও দালালচক্রের মাধ্যমে জাল পর্চা তৈরি করে, ভুয়া ওয়ারিশ সাজিয়ে ভুয়া দলিল করে জমি দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করছে। সন্ত্রাসী ডাকাতদের বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে রেখে রাতের অাঁধারে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিচ্ছে। তাঁদের এ দখলের হাত থেকে গোরসত্মান, মাদ্রাসা, স্কুল, বাজারের জমি পর্যনত্ম রৰা পাচ্ছে না। এ অবস্থায় গত ১৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি গাজীপুরের পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলেন। এসপি ওসিকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেন। ওসি অভিযুক্তদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। ওসির সঙ্গে দাগী সন্ত্রাসী ও ডাকাতদের দেখে গ্রামবাসী তাদের গ্রেফতারের দাবি জানালেও ওসি সে দাবি অগ্রাহ্য করেন। গত ২৪ জানুয়ারি রতনের বেতনভুক্ত কর্মচারী সহযোগী ডাকাত আবুল কালাম (৩০) ও হাবিবকে (৪০) দু'টি বিদেশী রিভলবারসহ গ্রেফতার করে। ওসি ভূমিদসু্যদের বিরম্নদ্ধে কোন মামলা না নিয়ে উল্টো সাধারণ মানুষের বিরম্নদ্ধে মামলা দিয়ে তাঁদের হয়রানি করছে। খোরশেদ আলম নামের ব্যবসায়ী ব্যবসায়িক কাজে বিদেশে থাকা এবং শারীরিক অসুস্থ থাকার পরও তাঁকেসহ তাঁর তিন ভাইয়ের বিরম্নদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। রাতের অাঁধারে ভূমিদসু্যরা যাতে পিলার গেড়ে ভূমিদখলে নিতে না পারে সেজন্য মাইকিং করে গ্রামবাসী জড়ো হলে স্থানীয় থানা পুলিশ তাঁদের অবস্থান করতে দেয়নি। অন্যদিকে ভূমিদসু্যদের পোষ্য সন্ত্রাসীকে ছুরি-রামদাসহ আটক করে পুলিশের হাতে জনতা হসত্মানত্মর করলেও পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। পুলিশের এ ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন।
এদিকে 'মেসার্স গ্রীন কেয়ার রিসোর্সেস' লিমিটেডের মালিক আলী হায়দার রতনের শ্বশুর শ্রীপুর থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোসত্মাফিজুর রহমান (বেনসন বুলবুল) এ প্রতিবেদকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাঁরা ভূমিদসু্য নয়। এ এলাকায় তাঁর জামাই প্রায় দু'শ' একর জমি ক্রয় করেছে। যার দলিলপত্র রয়েছে। দলিলমূলের বিক্রেতারা জমি বুঝিয়ে না দেয়ার কারণেই তারা আমাদের এখন ভূমিদসু্য হিসেবে চিহ্নিত করছে। আপনারা সরেজমিনে এসে দেখে যান।
আলী হায়দার রতন বলেন, তিনি ২০০১ সাল থেকে এ এলাকায় জমি কিনছেন। যাঁরা সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন তাঁদের মধ্যে খোর্শেদের পরিবারের কাছ থেকে তিনি মোট ১৮ বিঘা জমি কিনেছেন। অন্যদিকে এ্যাডভোকেট মমতাজের কাছ থেকে কিনেছেন ৫৫/৬০ একর। তাঁরা জমি বুঝিয়ে না দিয়ে এখন আন্দোলন করে আমাদের ভূমিদসু্য বানানোর চেষ্টা করছে। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে খোরশেদ আলম বলেন, আমাদের কাছ থেকে জমি কিনেছে চার বিঘা কিন্তু রেজিস্ট্রি করে নিয়েছে ৩০ বিঘা এবং আমাদের আপত্তি এবং আন্দোলন এ বিষয়টি নিয়েই।
স্থানীয় ওসি নাজমুল হোসেন ভূইয়া বলেন, 'মেসার্স গ্রীন কেয়ার রিসোর্সেস' ব্যবস্থাপনা দুর্বল হওয়ার কারণে তাঁরা জমি কিনলেও দখল নিতে পারেননি। দখলদারদের পৰে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। গ্রামবাসীকে হয়রানি কিংবা মামলা না নেয়ার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। একই সঙ্গে নিজেকে আইজিপির ভাতিজি জামাই পরিচয় দিয়ে দাপট খাটানোর বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

No comments

Powered by Blogger.