মানুষের মন বুঝতে পারার সূত্র by নোমান

মানুষের ভাবাবেগ বা অনুভূতি প্রকাশের কি কোন রং আছে? হ্যা, আছে। মানুষের সুখানুভূতি বা বিষণ্নতা প্রকাশের বিভিন্ন রং রয়েছে। আপনি কি আজ ধূসর ভাবাবেগে রয়েছেন? নীল আতঙ্কই বা কেমন? আপনি সম্ভবত সবকিছু লাল দেখছেন।
কারণ প্রতিহিংসায় আপনি সবুজ হয়ে আছেন। মানুষের অনুভূতি প্রকাশ করতে যে রং ব্যবহৃত হয় তা আপনার জন্য ধারণাতীত প্রয়োজনীয় প্রতিপন্ন হতে পারে। এক নতুন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা বিষণ্নতা বা দুশ্চিনত্মায় ভোগেন তাঁরা বেশিরভাগই ধূসর রং দিয়ে তাঁদের মনের অবস্থা বুঝিয়ে থাকেন। অন্যদিকে সুখী মানুষ হলুদ রং বেশি পছন্দ করে থাকেন। এই গবেষণার ফল 'বিএমসি মেডিক্যাল রিসার্চ মেথডোলজি' সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। মৌখিকভাবে যাদের কাছ থেকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে সমস্যা হয়, বিশেষ করে শিশু ও বিশেষ ধরনের রোগীদের অবস্থা জানতে ডাক্তারদের জন্য এই রং পদ্ধতি সহায়ক হতে পারে। এ সংক্রানত্ম গবেষণার অন্যতম প্রণেতা ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ইউনিভার্সিটি হসপিটাল সাউথ ম্যানচেস্টারের পিটার হোরওয়েল লাইভ সায়েন্সকে বলেছেন, ভাষার ব্যবহার না করেই দুশ্চিনত্মা ও বিষণ্নতা পরিমাপ করার এটি এক পদ্ধতি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রশ্নের চাইতে এই পদ্ধতিতে সম্ভবত আরও ভালভাবে রোগীর অবস্থা বোঝা যায়।
হোরওয়েন এ সম্পর্কে বলেন, মানুষের মনের অবস্থা বোঝাতে রূপক অর্থে রং ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এর আগে কেউ রংয়ের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিয়ে নিয়মমাফিক গবেষণা করেননি। এ বিষয়ে গবেষণা চালাতে হোরওয়েল ও তাঁর সহকর্মীরা আটটি রং বেছে নেন। এগুলো হচ্ছে লাল, কমলা, সবুজ, বেগুনী, নীল, হলুদ, হাল্কা গোলাপী ও বাদামী। আবার প্রতি রংকে চারটি শেডে বিভক্ত করা হয়। পরে তাতে মেশানো হয় সাদা, কালো এবং ধূসর রংয়ের চারটি শেড খাতে মোট ৩৮টি অপশন থাকে। গবেষকরা এই রংসমূহ চক্রাকারে প্রদর্শনের সিদ্ধানত্ম নেন। পরবর্তীতে তাঁরা ১০৫ সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক, ১১০ দুশ্চিনত্মাগ্রসত্ম প্রাপ্তবয়স্ক এবং বিষণ্নতায় ভোগা ১০৮ প্রাপ্তবয়স্ককে বাছাই করে তাদের কাছে রংয়ের ঐ চক্রের প্রিন্টআউট পাঠান। প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার পছন্দের রং বাছাই করতে বলা হয়। সব শেষে তাদেরকে এমন একটি রং বাছাই করতে বলা হয়, যা দিয়ে গত কয়েক মাসে তাদের দৈনন্দিন অবস্থা প্রকাশ করা সম্ভব। ২০৪ সুস্থ স্বেচ্ছাসেবক অথবা নিরপে হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেন। এতে দেখা যায় বিষণ্ন, দুশ্চিনত্মাগ্রসত্ম বা সুস্থ লোকেরা নীল ও হলুদ রং পছন্দ করেছে। সুস্থ লোকদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় রং ছিল কালার হুইলের বস্নু টোয়েন্টি এইট বা ২৮ নং নীল রংটি। অন্যদিকে বস্নু টোয়েন্টি সেভেন বা ২৭ নং নীল রং (যা ২৮ নম্বর রংয়ের চাইতে সামান্য গাঢ়) পছন্দ করেছে দুশ্চিনত্মাগ্রসত্ম ও বিষণ্ন লোকেরা। ১৪ নং হলুদ রং সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো রং হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু মনের অবস্থা প্রকাশ করতে গেলে দেখা গেছে এ বিষয়ে বিসত্মর ব্যবধান রয়েছে। সুস্থ লোকদের মধ্যে শতকরা মাত্র ৩৯ ভাগ হলুদ রং বাছাই করেছেন। এদের মধ্যে ১৪ নং হলুদ রংটি ছিল সবচেয়ে পছন্দের। অন্যদিকে দুশ্চিনত্মাগ্রসত্ম লোকদের শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ ধূসর শেড পছন্দ করেছেন। আর বিষণ্নতায় ভোগা লোকদের অর্ধেকেরও বেশি পছন্দ করেছেন ধূসর শেড। অথচ সুস্থ স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে শতকরা প্রায় ১০ ভাগের পছন্দ ছিল ধূসর শেড।
গবেষকরা আরও দেখতে পান যে, মনের অবস্থা প্রকাশ করতে 'হাল্কা নীল' কোনমতেই খারাপ অবস্থা বোঝায় না, বরং এেেত্র গাঢ় নীল মনের খারাপ অবস্থার প্রকৃত পরিচয় বহন করে। হোরওয়েল এ সম্পর্কে বলেন, প্রকৃত রংয়ের চাইতে ঐ রংয়ের শেড এ েেত্র বেশি গুরম্নত্বপূর্ণ। হোরওয়েল এখন ইরিট্যাবল বাওয়েল সিনড্রোম-এ ভোগা রোগীদের ওপর এই কালার হুইল বা রং চক্রের প্রায়োগিক পরীা চালাচ্ছেন। তিনি আশা করছেন, রং পছন্দের মধ্য দিয়ে হিপনোসিস-এ ভোগা রোগীদের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা অনেক সহজ হবে। কারণ মানুষ গ্যাস্ট্রোএন্টারোজিক্যাল সিম্পটম নিয়ে বিব্রত থাকে। হোরওয়েল বলেন, রোগীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য কথোপকথনের চাইতে অনেক সময় বিকল্প পদ্ধতিই বেশি গ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, কালার হুইল নিয়ে আরও গবেষণা চালালে শিশু চিকিৎসা থেকে শুরম্ন করে শল্যচিকিৎসা পর্যনত্ম এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.