চুল থেকে পাওয়া যাবে মানুষের পূর্ব পুরুষের পরিচয়

ভাবলে অবাকই হতে হয়, চুল থেকে সম্পূর্ণ দেহ সম্পর্কে তথ্য বের করেছেন বিজ্ঞানীরা। চুলের ডিএনএ বিশেস্নষণ করে বিজ্ঞানীরা আমাদের পূর্বপুরম্নষ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবেন।
তাঁরা আমাদের পূর্বপুরম্নষের প্রকৃত পরিচয়, তাদের চালচলন, জীবন বৈচিত্র্য সম্পর্কে বিসত্মারিত তথ্য সংগ্রহ করবেন। চুলের ডিএনএ বিশেস্নষণ করে প্রাচীন মানবের পরিচয় মিলেছে। গ্রীনল্যান্ডে সংরৰিত এই চুলের ডিএনএ পরীৰা করেন বিজ্ঞারা। এর মালিকের পরিচয় সম্পর্কে কু পেয়েছেন। নেচার সাময়িকীতে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, এই ব্যক্তির জিনোমই হচ্ছে আধুনিক মানুষের সবচেয়ে প্রাচীন পূর্বপুরম্নষ।
গবেষকরা বলছেন, ৪ হাজার বছর আগের এই লোকটির চোখের রং ছিল বাদামী। চুল ছিল ঘন। যদিও তার মাথায় টাকের প্রবণতা ছিল।
তাঁরা বলেন, জিনোম থেকে প্রমাণিত হয় যে লোকটির পূর্বপুরম্নষরা সাইবেরিয়া থেকে অভিপ্রয়াণ করেছে। লোকটির নামকরণ করা হয়েছে ইনুক। গ্রীনল্যান্ডের ভাষায় যার অর্থ 'মানব।' অন্যতম গবেষক কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ইস্কে উইলারসেস্নভ বলেন, আমরা একথা স্বীকার করতে চেয়েছি যে, তিনি গ্রীনল্যান্ডের অধিবাসী। যদিও তিনি আধুনিক গ্রীনল্যান্ডবাসীদের প্রত্যৰ পূর্বপুরম্নষ নন। গবেষকরা বলেন, এক জিনোম বিশেস্নষণে জানা গেছে, ইনুক ছিলেন সাক্কাক সংস্কৃতির লোক।
গবেষকরা এখন ইনুকের বিপাকক্রিয়া ও বডিমাস থেকে জিনগত তথ্যপ্রমাণ পেয়ে গেছেন যে তার দেহ শীতল জলবায়ুতে বসবাস করার উপযোগী ছিল।
সাক্কাকরা সীলমাছ ও সামুদ্রিক পাখি শিকার করত। তাদের অধিকাংশ খাদ্যের জন্যই তারা নির্ভর করত সমুদ্রের ওপর। প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন থেকে প্রমাণিত হয় যে, তারা শীতকালে ছোট ছোট তাঁবুতে বাস করত। প্রফেসর উইলারসেস্নভ এ সম্পর্কে বলেন, ঐ সময় পরিবেশ ছিল ভীষণ প্রতিকূল, আমি আসলেই বিস্মিত যে লোকেরা সেখানে কিভাবে বসবাস করেছে। গবেষকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ইনুকের সামনের দাঁত ছিল বেলচা আকৃতির। তার ইয়ার ওয়াক্স ছিল শুষ্ক। যার ফলে তার কানের সংক্রমণের ঝুঁকি ছিল অনেক বেশি।
যৌবনেই তার মৃতু্য হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তার জিনে টাক পড়ার প্রবণতা পাওয়া গেলেও তার কয়েক গুচ্ছ ঘন চুল পাওয়া গেছে।
জিনগত এই বিশেস্নষণে এক বছর লেগেছে। জিনোম থেকে জানা গেছে, সাক্কাকের ঘনিষ্ঠতম জীবিত স্বজনরা ছিল উত্তর-পূর্ব সাইবেরিয়ার। যেমন চাকচিম ও কোরিয়াক সম্প্রদায়। বিজ্ঞানীরা বলেন, সাক্কাকরা সম্ভবত সমসাময়িক ইনুইট বা আদি আমেরিকান জনগোষ্ঠীর কেউ নয়। প্রফেসর উইলারসেস্নভ ব্যাখ্যা করে বলেন, সাইবেরিয়া পার হয়ে গ্রীনল্যান্ড ও আলাস্কার লোকজন কিভাবে এসেছে তা জানা যায়নি। তিনি বলেন, ঐ সময় সাইবেরিয়া ও আলাস্কার মধ্যে কোন সেতু ছিল না। অতএব তারা অবশ্যই নৌকায় পার হয়েছে কিংবা শীতকালে বরফের ওপর দিয়ে এসেছে।
প্রফেসর উইলারসেস্নভ বলেন, সাক্কাক জাতির কি হয়েছে এবং কিভাবে তারা এই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তা রীতিমতো রহস্যই রয়ে গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কি এমন অবস্থা হয়েছে না অন্যকোন উন্নত সংস্কৃতির মানব গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে তারা এই ধরাধাম ত্যাগ করেছে? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই।
নতুন কোন গবেষণায় হয়ত এই রহস্য উন্মোচিত হবে। আমরা তার প্রতীৰায় রইলাম।
ম মইনুল ইসলাম

No comments

Powered by Blogger.