সর্বগ্রাসী কালো টাকা এখন চালের বাজারে by ড. আর এম. দেবনাথ

'সরকার' বড় মজার জিনিস। এর এক জায়গায় রাগ সঙ্গীত বাজে তো আরেক জায়গায় হয় লালন সঙ্গীত। এক জায়গায় উচ্চ মার্গীয় চর্চা, তো আরেক জায়গায় মাটির সঙ্গে কথাবার্তা।
জিনিসপত্রের মূল্য বা মূল্যস্ফীতি নিয়ে এমনটাই ঘটছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বড় বড় প-িত কিভাবে সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদের হার কমানো যায় তার জন্য কাজ করছেন। যুক্তি মূল্যস্ফীতি (ইনফেগন) কম এবং কমছে। অর্থাৎ জিনিসপত্রের দাম কম। অপরদিকে দেখা যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয় উদ্বিগ্ন খাদ্যের দাম নিয়ে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি নিয়ে। বর্ধিষ্ণু চালের মূল্যের পরিপ্রেৰিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় 'ওপেন মার্কেট সেলস' (ওএমএস) শুরম্ন করে কিছুদিন আগে। এটা সব সময়ই করা হয়। যখনই খোলাবাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধি পায় তখনই সরকার অর্থাৎ খাদ্য মন্ত্রণালয় ওষুধ হিসেবে 'ওএমএস' চালু করে। শুরম্ন হয় খোলাবাজারে কম দামে চাল বিক্রি। এতে কখনও কখনও কাজ হয়। যেহেতু মোটা চালের ক্রেতাই বেশি তাই বাজারে যখন কম দামে সরকারী গুদাম থেকে চাল বিক্রি শুরম্ন হয় তখন তার ভাল প্রভাব দামের ওপরে পড়ে। আমাদের 'দেশপ্রেমিক' চাল ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখে। কিন্তু এবার ঘটছে উল্টোটি। কয়েকদিন আগে 'ওএমএস'-এ চাল বিক্রি শুরম্ন হলেও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এর ভাল প্রভাব খোলাবাজারে পড়েনি। এমতাবস্থায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের 'খাদ্য পরিকল্পনা এবং মনিটরিং' ইউনিটের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ। সভায় সভাপতিত্ব করেন খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। সভায় সিদ্ধানত্ম নেয়া হয় আরেকটি। সরকার 'ন্যায্যমূল্য কার্ড' প্রবর্তন করবে। এ কার্ড পাবে সারাদেশের অতিদরিদ্র ২৫ লাখ পরিবার। অতিদরিদ্র হচ্ছে এমন পরিবার যাদের কোন স্থায়ী আয় নেই, জমি নেই এবং যারা সামাজিক নিরাপত্তা জালের অধীনে কোন সুবিধা পাচ্ছে না। এরা প্রতিমাসে ন্যায্যমূল্যের কার্ডের অধীনে ২০ কেজি করে চাল পাবে। চালের দাম হবে কেজি প্রতি ২২ টাকা। এবং এসব পরিবার এ চাল পাবে তিন মাস ধরে। যে সমসত্ম পরিবার মহিলাদের দ্বারা চলে তারা এ কার্ড পাবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে। অবশ্য কার্ডের জন্য আবশ্যিকভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে। মহান ভাষা দিবস ২১ ফেব্রম্নয়ারি থেকে এ কর্মসূচী শুরম্ন হবে। প্রথমে 'ওপেন মার্কেট সেলস' এবং পরে ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রির সিদ্ধানত্ম থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, সরকারের তিনজন প্রভাবশালী মন্ত্রী অর্থাৎ সরকার চালের ক্রমবর্ধিষ্ণু মূল্য বা মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন যদিও কম মূল্যস্ফীতির কথা বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেরানী বাবুরা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার হ্রাসের উদ্দেশ্যে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সঞ্চয়পত্রের ৰেত্রে কী ঘটবে তা আপাতত আমার বিষয় নয়। আজকের বিষয় চালের মূল্য বা খাদ্য মূল্যস্ফীতি।
চালের মূল্য পেঁয়াজ, রসুন, ডাল ও তেল ইত্যাদির মতো নয়। পেঁয়াজ, রসুন, ডাল ও তেলের মূল্য বৃদ্ধি ঘটলে খবরের কাগজে হৈ চৈ হয়। মানুষ সমালোচনা মুখর হয়। আর চালের মূল্য বৃদ্ধি ঘটলে মানুষ অাঁৎকে ওঠে, আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বাঁচার প্রশ্নে সে মরিয়া হয়ে ওঠে। সরকারের গদি টলটলায়মান হয়। এমন একটি জিনিসের মূল্য নিয়ে মানুষ বছরখানেক স্বসত্মিতে ছিল। আর যাই হোক এ ৰেত্রে অনত্মত কারও কোন অভিযোগ ছিল না। কিন্তু বিগত বছরের শেষের দিক থেকেই চাল নিয়ে দুশ্চিনত্মা শুরম্ন হয়। চালের মূল্যের ওপরই আমাদের মূল্যস্ফীতির হিসাব নির্ভর করে। দেখা যাচ্ছে, অক্টোবর ও নবেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঘটে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ করে। ইতোমধ্যেই ডিসেম্বর মাস অতিবাহিত হয়েছে, গেছে জানুয়ারি মাসও। এখন আছি ফেব্রম্নয়ারিতে। নিশ্চিতভাবেই এ দুই/আড়াই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও অনেক বেড়েছে। বেড়েছে তার প্রমাণ_ বাজার। প্রতিদিন খবরের কাগজে চালের ওপর স্টোরি ছাপা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে গত তিন চার মাসে গড়ে চালের মূল্য ত্রিশ-তেত্রিশ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্ধিষ্ণু এ প্রবণতা অব্যাহত আছে। সরকারী কোন পদৰেপই ভাল প্রভাব বিসত্মার করতে পারছে না। চালের মূল্যের উর্ধগতির সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। যার প্রতিফলন ঘটছে মূল্যস্ফীতির হিসাবে। এখন চালের মূল্য বাড়ার কী যুক্তি তা কিন্তু পরিষ্কার নয়। কিছু লোক ভারতের যুক্তি দেয়। তারা বলে, ভারতে ফলন কম হয়েছে। তারা চাল আমদানি করবে। কিন্তু সর্বশেষ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ভারত চাল আমদানি করবে না। তারা যে 'টেন্ডার' ডেকেছিল সে টেন্ডার ইতোমধ্যেই বাতিল করেছে। তাদের স্টকে প্রয়োজনীয় চাল আছে। এমতাবস্থায় ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইআরআরআই)-এর অর্থনীতিবিদ মি. মোহানত্মি বলেছেন, চালের মূল্য আনত্মর্জাতিকভাবে স্থিতিশীল থাকবে। এই মুহূর্তে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার কোন কারণ নেই। ২০০৭-০৮ সালে টনপ্রতি চালের মূল্য উঠেছিল ১০০০ ডলারে। বর্তমানে এর মূল্য আছে ৬০০ ডলারের মতো। মোহানত্মি মনে করেন, অদূর ভবিষ্যতে বর্ধিত চাহিদার কারণে চালের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার কোন কারণ নেই। এই হচ্ছে আনত্মর্জাতিক পরিস্থিতি। দেশের ভেতরেও উৎপাদন পরিস্থিতি খারাপ নয়। আমন ফসল খুবই ভাল হয়েছে। সামনে বোরো ফসল। সরকার বোরোর উৎপাদন বাড়াতে সকল পদৰেপ গ্রহণ করে চলেছে। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, বোরো ফসলও প্রত্যাশিত পর্যায়ে থাকবে। এদিকে সরকারের গুদামে প্রচুর চাল মজুদ আছে। ফেব্রম্নয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের হিসাবেই সরকারের গুদামে চালের স্টকের পরিমাণ প্রায় ৯ লাখ টন। এটা যে কোন হিসাবে পর্যাপ্ত। তাহলে দেখা যাচ্ছে, আনত্মর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল, দেশীয় উৎপাদন পরিস্থিতি সনত্মোষজনক এবং সরকারের চালের স্টকও পর্যাপ্ত। এতদসত্ত্বেও অভ্যনত্মরীণ বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ কী? এটা কি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কেউ করছে? অতি মুনাফার লোভে ব্যবসায়ী-মিলাররা চালের দাম বাড়াচ্ছে? এর পেছনে কি রাজনৈতিক কোন মদদ আছে?
উপরের যে প্রশ্নগুলো উত্থাপন করলাম তার কারণ আছে। গত কয়েক দিনের মধ্যে চালের মূল্যের ওপর অনত্মত দুটো 'স্টোরি' আমার নজরে এসেছে। এর মধ্যে একটি ছাপা হয়েছে বাংলা দৈনিকে এবং অন্যটি ছাপা হয়েছে ইংরেজী দৈনিকে। দুটো কাগজের মধ্যে ঘটনাক্রমে একটি সরকার সমর্থক এবং অন্যটি বিরোধী গোত্রীয় বলে বাজারের খবর। তা সত্ত্বেও চালের খবরটির মূলকথা প্রায় এক। দুটো কাগজেই বলা হচ্ছে, কালো টাকা চালের বাজারকে অস্থিতিশীল করছে। 'মিলাররা' কালো টাকার মদদে চাল স্টক করছে। বাজারে নানা গুজব ছড়াচ্ছে। তারা 'সিন্ডিকেট' গঠন করে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রচুর পরিমাণ চাল বাজারে থাকা সত্ত্বেও 'মিলাররা' কালো টাকার সঙ্গে অাঁতাত করে বাজারে কম করে চাল ছাড়ছে। 'স্টক' ধরে রাখছে। সময়ে সময়ে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এ ধরনের খবর শুধু দুটো দৈনিকই দিচ্ছে না; দেশের প্রায় সব খবরের কাগজের প্রতিবেদনেই এসব আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা হরদম এসব অভিযোগ করে যাচ্ছে। সাধারণভাবে এসব অভিযোগ অসত্য_ তাও মনে হয় না। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, উত্তরবঙ্গের মিলারদের 'স্টক' ধরে রাখার ৰমতা এখন অপরিসীম। এরা কুৎসিতভাবে ধনী। প্রচুর চাল তারা 'সিন্ডিকেট' করে ধরে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। দ্বিতীয়ত, তাদের শক্তিকে বৃদ্ধি করছে কালো টাকার মালিকরা। এরা প্রচুর অর্থ চালের বাজারে ঢোচ্ছে। তৃতীয়ত, এদের ধরে রাখার ৰমতা বৃদ্ধি করছে ব্যাংক ফিন্যান্স। ব্যাংকের হাতে এখন অনেক টাকা। ঋণ দেয়ার মতো তারা কোন জায়গা পাচ্ছে না। তারা শুধু মিলারদেরকেই টাকা দিচ্ছে না, তারা খুচরা ও পাইকারি চাল বিক্রেতাদেরকেও টাকা দিচ্ছে বলে বাজারে খবর পাওয়া যাচ্ছে। শুধু কালো টাকা, ব্যাংক ফিন্যান্সই নয়, প্রচুর 'অপ্রদর্শিত' টাকাও চালের বাজারে বিনিয়োজিত হচ্ছে। বাজারের লোকজনের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যাবে চালের বাজার এখন যেমন কালো টাকার মালিকদের নিয়ন্ত্রণে, তেমনি নিয়ন্ত্রণে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য জিনিসপত্রের বাজারও।
বস্তুত কালো টাকার থাবা এখন সর্বত্র বিসত্মৃত। এ ধরনের টাকা অর্থনীতির সর্বত্র বিনিয়োজিত। শেয়ারবাজার, জমিজমা, ফ্যাট ইত্যাদির বাজার এ কালো টাকার মালিকদের নিয়ন্ত্রণে। শেয়ারবাজারে ইদানীং কিছু সাধারণ বিনিয়োগকারী যাচ্ছে। তাও প্রলোভনে। এ বাজারে কালো টাকার প্রবেশ ঘটেছে সরকারী অনুমতি নিয়েই। শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ করলে কোন প্রশ্ন করা হয় না, ট্যাক্সের কোন বালাই নেই। সরকারী আমলা, সামরিক-বেসামরিক আমলাদের টাকা, অপ্রদর্শিত টাকা, কালো টাকা সবকিছুরই গনত্মব্যস্থল এখন শেয়ারবাজার। তাদের কারসাজিতে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য এখন অতিমূল্যায়িত হয়ে আছে। শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ পরিস্থিতিতে বার বার হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছে। অবস্থা এমন হয়েছে, স্বাভাবিক ও সুস্থ বিনিয়োগকারীদের পৰে শেয়ারবাজারে টাকা বিনিয়োগের কোন ব্যবস্থাই নেই।
এদিকে জায়গা-জমি, ফ্যাট ও বাড়ি ইত্যাদির বাজার আসমানে গিয়ে উঠেছে। এসবের মূল্য বাড়ছে তো বাড়ছেই। রোজগারের টাকা দিয়ে, ব্যাংক লোন করে ফ্যাট কেনা বা জায়গা কেনা এখন আর সম্ভব নয়। এ বাজারে এখন কালো টাকার মালিকদের দৌরাত্ম্য। সোনার দাম দেখলে আরেকটু পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায়। ভাবা যায়, এক ভরি সোনার দাম ত্রিশ-চলিস্নশ হাজার টাকা! অথচ কোন দোকানেই জায়গা নেই। যে কোন সোনার দোকানে পাওয়া যাক, সেখানেই একশ্রেণীর লোকের ভিড়। সোনাদানার এই ক্রেতাদের ক'জন বৈধ টাকার মালিক? মুশকিল হচ্ছে, কালো টাকার মালিকরা শিল্পে যাচ্ছে না। তারা ট্রেড, শেয়ার ব্যবসা ও জমির ব্যবসা ছাড়া আর কিছুতেই টাকা বিনিয়োগ করছে না। বাজারের খবর আরও আশঙ্কাজনক। ব্যাংকের প্রজেক্ট ফিন্যান্সিং-এর টাকা, ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের টাকাও যাচ্ছে জমির ব্যবসায়, শেয়ারের ব্যবসায়। ব্যাংকগুলো তাদের কাস্টমারদের প্রজেক্ট ফিন্যান্সিং এবং ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ফিন্যান্সিং-এর সময় অতিরিক্ত টাকা মঞ্জুর করে। সিকিউরিটির মূল্য বেশি ধরে। প্রজেক্টের কস্ট বাড়িয়ে দেখায়। জমির মূল্য বেশি দেখায়। পুরনো মালকে নতুন হিসেবে দেখায়। অহেতুকভাবে ঋণের সিলিং বাড়ায়। অথচ তার পাশাপাশি সিকিউরিটির কভারেজ রাখে না। এভাবে প্রদত্ত বিপুল পরিমাণ ব্যাংক-ফান্ড শেষ পর্যনত্ম ডাইভার্ট হয়ে গিয়ে হাজির হচ্ছে শেয়ার বাজারে, জমিজমা ক্রয়ে। যার ফলে এসবের বাজার এখন সাধারণের নাগালের বাইরে। শেয়ারবাজার বুঝলাম; ফ্যাটবাড়ি, জায়গা-জমির ব্যবসার কথাও বুঝলাম; বুঝতে পারছি না_ কেন এই টাকা ইদানীং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজারে ঢুকছে! নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজারে কালো টাকা আগে বিনিয়োজিত ছিল না_ এ কথা আমি দাবি করব না। আগেও এসব ব্যবসায় কালো টাকা বিনিয়োজিত ছিল। কিন্তু ইদানীং মনে হচ্ছে, পরিকল্পিত উপায়ে এ বাজারে ঢুকছে কালো টাকার মালিকরা। এখানে শুধু অতি মুনাফার লোভই অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে না, এখানে কেন জানি মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক একটা উদ্দেশ্য কাজ করছে। এ কথা পাঠকরা হয়ত জানেন, দেশের কালো টাকার বিরাট একটা অংশের মালিক হচ্ছে এমন লোকজন যারা ধমর্ীয় উত্তেজনা সৃষ্টিতে উদ্যত। ধর্মের নামে এরা আসলে ব্যবসাবাণিজ্য করছে। সাধারণ কিছু ব্যবসায়ীর যোগসাজশে এই কালো টাকার মালিকরা এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে হাজার হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে লুটে নিচ্ছে। খবরের কাগজের প্রতিবেদনকে যদি বিশ্বাস করতে হয়, তাহলে সর্বশেষ তারা লেগেছে চালের পেছনে। তারা বিনা কারণে চালের বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি করতে পারলে কিন্তু সর্বনাশ! কারণ চাল কিন্তু ডাল নয়; চাল সয়াবিন তেলের মতোও নয়; নয় চিনিও। অন্য সব দ্রব্যের উচ্চমূল্য হৈ চৈ করে মেনে নেয়া যায়। চালের মূল্যস্ফীতি এমন ঘটনা নয়। চাল বাঁচা-মরার সঙ্গে জড়িত। চাল সরকারের অসত্মিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অতএব সরকারের উচিত সর্বৰণিকভাবে চালের বাজারের ওপর নজর রাখা। প্রশাসনিক, ব্যবসায়িক, আর্থিকসহ যত পদৰেপ আছে সব পদৰেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে এ ৰেত্রে প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ দৃশ্যত মনে হচ্ছে, চাল নিয়ে খেলা শুরম্ন করেছে একটি মহল।
লেখক : অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার
ঊ-সধরষ : ৎধহধফবনহধঃয@সংহ.পড়স

No comments

Powered by Blogger.