বিসিবি বনাম ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস by আরিফুল ইসলাম

বিপিএল জাতীয় টুর্নামেন্টের একটি সাধারণ চরিত্র আছে। ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, কিন্তু ক্রিকেট এখানে পারিপার্শ্বিকতার আড়ালে চাপা পড়ে প্রায়শই। বিপিএলের প্রথম আসরই সেটার লাগসই প্রমাণ।
১৯ দিনের টুর্নামেন্ট বছরজুড়েই ক্রিকেটবিশ্বে আলোচনায় ছিল নেতিবাচক কারণে। গতবারের ‘ভুল শোধরানোর’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবার বিসিবি ও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। কিন্তু বাস্তবে পরিবর্তন যে সামান্যই হয়েছে, সেটার প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে। ক্রিকেটারদের টাকা পরিশোধ নিয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে বিসিবি ও ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস।
ক্রিকেটারদের পাওনা পরিশোধে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর গড়িমসি নিয়ে গতবারের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এবার নতুন ব্যবস্থা নিয়েছিল বিসিবি। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কাছ থেকে তিন কিস্তিতে টাকা নিয়ে বিসিবিরই পরিশোধ করার কথা ক্রিকেটারদের সম্মানী। সেটাই এখন যেন গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ঢাকার স্বত্বাধিকারী সেলিম চৌধুরীর দাবি, প্রথম কিস্তির ২৫ ভাগ টাকার পে-অর্ডার বিসিবির হাতে তুলে দেওয়া হলেও এখনো ক্রিকেটারদের টাকা দেয়নি বোর্ড। দলের ইংলিশ ব্যাটসম্যান ওয়াইস শাহ তাই হুমকি দিয়েছেন মাঠে না নামার। সেলিমের দাবি, ক্রিকেটারদের চুক্তিপত্রও বোর্ডের কাছে দেওয়া হয়েছে পাঁচ দফায়। কিন্তু বিপিএলের সদস্যসচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকের দাবি, চুক্তিপত্র দেওয়া হয়েছে মাত্রই গত পরশু। চুক্তিপত্র ছাড়া ক্রিকেটারদের পাওনা পরিশোধ সম্ভব নয়।
পরশু কয়েকটি বেসরকারি টিভির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ওয়াইস টাকা না পাওয়ায় কথা জানান। কাল এক হোটেলে ৭৫ হাজার ডলার ভিত্তিমূল্যে কেনা ব্যাটসম্যানের অসন্তুষ্টির কথা জানালেন সেলিম, ‘শুরুতে ওয়াইস বিপিএলে আসতেই চায়নি। পরে বিসিবি নিশ্চয়তা দেওয়ায় এসেছে। তখন ওকে বলা হয়েছিল, তিন-চার কর্মদিবসেই প্রথম কিস্তির টাকা ব্যাংক হিসেবে যাবে। কিন্তু কিছুদিন পর ওয়াইস আমাকে জানাল, সে এখনো টাকা পায়নি। তাকে নানাভাবে বোঝালাম যে পেয়ে যাবে। কিন্তু এর পরও না পাওয়ায় বিসিবির কাছে কারণ জানতে চাইলাম। তারা তখন বলে যে ক্রিকেটারদের চুক্তিপত্র কোথায়!’
প্রথম ম্যাচে ৮৪ করার পর টাকা না পাওয়াতে ইচ্ছে করেই খারাপ খেলছেন ওয়াইস, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন সেলিম। তাঁর দাবি, ক্রিকেটারদের চুক্তিপত্র তাঁরা বোর্ডকে আগেই দিয়েছেন (একবার বলেছেন তিনবার দিয়েছি, আরেকবার বলেছেন পাঁচবার)। কিন্তু এই দাবিকে সর্বৈব মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিলেন বিপিএল সদস্যসচিব, ‘তারা শুধু দেশি ক্রিকেটারদের চুক্তিপত্র দিয়েছে, বিদেশিদের দেয়নি। ওদের বলার পর অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করল। পরে আমরা আরও ঘাঁটাঘাঁটি করে তাদের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে জানলাম যে আসলেই বিদেশি ক্রিকেটারদের চুক্তিপত্র দেয়নি। তাঁকে আবার জানানোর পর তিনি তাঁর ম্যানেজারকে গালাগাল শুরু করলেন। শেষে কাল (পরশু) ১১টার সময় আমাকে অ্যাগ্রিমেন্ট এনে দিল। ওই লোক পুরোপুরি মিথ্যে কথা বলছেন। বিদেশি ক্রিকেটারদের অ্যাগ্রিমেন্ট ছাড়া এক টাকাও বিদেশে পাঠানো যায় না, বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমতি দেয় না। তিনি নাকি পাঁচবার চুক্তিপত্রের কপি দিয়েছেন, একটা কপি দেখাতে বলেন না! তাহলেই বোঝা যাবে কে মিথ্যে বলছে।’
প্রায় ৪০ মিনিটের আলোচনায় বারবারই বিসিবিকে অপেশাদার, অদক্ষ বলেছেন সেলিম, প্রশ্ন তুলেছেন এত বড় টুর্নামেন্ট আয়োজনের সামর্থ্য নিয়ে। তবে গতবার ফ্র্যাঞ্চাইজি সময়মতো টাকা না দেওয়াতেই আজ এই অবস্থা, সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চাইলেন সেলিম, ’বাসি ব্যাপারগুলো আর না টানাই ভালো।’
বিসিবি অবশ্য এই হম্বিতম্বিকে সহজভাবে নিচ্ছে না। মল্লিক শোনালেন সতর্কবাণী, ‘পরিষ্কার বলে দিচ্ছি, তিনি বা কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি যদি টাকা না দেয়, তাহলে আমরা একবার-দুবার সময় দেব। তিনবারেও যদি না দেয়, তাহলে স্ক্র্যাচ করে দেব। বিসিবি তখনই টাকা দেবে, যখন অন্য কেউ দিতে ব্যর্থ হবে। বিসিবিই যদি টাকা দিয়ে দেয়, তাঁরা দেবেন না, এটা কিছু হলো! ঢাকায় ফিরলে সব ফ্র্যাঞ্চাইজিকে আমরা সময় বেঁধে দেব, যদি টাকা না দেয়, কারও কোনো ছাড় নেই। মালিকানা কেড়ে নেব। সেটা এমনকি টুর্নামেন্ট চলার সময়ও হতে পারে।’

No comments

Powered by Blogger.