মশার মানুষের রক্ত খাওয়ার রহস্য by মইনুল ইসলাম

মানুষের রক্ত খাওয়ার জন্য মশা কেন এত বেপরোয়া বিজ্ঞানীরা তার কারণ খুঁজে পেয়েছেন। এ সংক্রানত্ম বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে 'লাইভ সায়েন্স'-এ প্রকাশিত হয়েছে।
মশাদের আকৃষ্ট করার মতো প্রাকৃতিক ঘ্রাণ মানুষের দেহে তৈরি হয় কিনা তা পরীৰা করার উদ্যোগ নেয়া হয়। কেমিক্যাল ইকেলেজিস্ট (রাসায়নিক প্রতিবেশবিদ) ওয়ালটার লিলের ওপর বিষয় পরীৰা করার দায়িত্ব পড়ে। লিল নিজেই স্বেচ্ছাসেবক হয়ে এ বিষয়ে পরীৰা চালান। বিজ্ঞানীরা কেবল ঐ পদার্থ খুঁজছিলেন। যেটা মশাকে আকৃষ্ট করে এর নাম ননএ্যানাল। মানুষ ও পাখির দেহে এই শক্তিশালী ঘ্রাণ সৃষ্টি হয় যার আকর্ষণ কিউলেক্স মশা কিছুতেই এড়াতে পারে না।
লিলের সহকমর্ীরা তার ত্বকের সামনে একটি সিরিঞ্জের মতো যন্ত্র স্থাপন করেন এবং পরে তার বাহু এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দ্বারা মুড়ে দেন যাতে পরিবেশটা আবদ্ধ থাকে। এক ঘণ্টা পর সিরিঞ্জের মাথা একটি বিশেষ মেশিনে ঢুকানো হয়। এতে ননএ্যামাল লেগেছে কিনা দেখতে এবং লেগে থাকলে তার দেহে কতটা এ পদার্থ তৈরি হয়_ এটা বের করা হলে দেখা যায়, প্রচুর পরিমাণে এই পদার্থ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি এক ঘণ্টায় আমার দেহ থেকে ২০ ন্যানোগ্রাম পদার্থ নিঃসৃত হয়েছে।
এই আবিষ্কার থেকে বোঝা যায়, দুই বছর আগে মেক্সিকোতে পোকামাকড় শিকার করতে গেলে ব্যাপক পূর্বসতর্কতায় থাকা সত্ত্বেও মশা তাকে এক ধরনের প্রতিশোধ স্পৃহা নিয়ে কামড়েছে।
লিলের সেদিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, এত মশা ছিল যে, আমি ধারণা করতে পারছিলাম না। আমি সব জায়গায় 'ডিট' স্প্রে করেছি কিন্তু পরদিন এরা আমার মোজার মধ্যে পর্যনত্ম ঢুকে পাগলের মতো কামড়েছে। অথচ আমার পায়ে ছিল সুরম্ন মোজা। আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট স্থানের কথা ভুলে যান, মশারা ঐ স্থানটিই খুঁজে বের করবে। তারা যে কোন স্থানে ঢুকে পড়বে, এমনকি জিনসের মধ্যে পর্যনত্ম। যতৰণ পর্যনত্ম তারা জানবে অপর প্রানত্মে রক্ত কণিকা আছে ততৰণ তারা হামলে পড়বে। তারা উত্তাপ অনুভব করতে পারে। অধিকাংশ মানুষ কীটপতঙ্গ বিশেষ করে তাদের কামড় এড়াতে চাইলেও লিল (বব) ও ডেভিসের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির এক কীটতত্ত্ববিদ বেশ উৎসাহ নিয়ে তাদের খোঁজেন।
তিনি বলেন, কীটপতঙ্গের বৈচিত্র্য ও শারীরবৃত্ত এত উলেস্নখযোগ্য যে, একটি আরেকটি থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। এটাই তাদের এত আকর্ষণীয় করেছে। লিল কীটপতঙ্গের সেক্স ফেরোমোন (রাসায়নিক বার্তাবাহক) ও মেমিক্যাল ইকোলজি (রাসায়নিক প্রতিবেশ) এবং কীটপতঙ্গের যোগাযোগের ওপর গবেষণা কর্মের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিতি অর্জন করেন। এর সবকিছুই কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তিনি রহস্য উদ্ঘাটন করেন কেন মশা 'ডিট' প্রয়োগ করলে চলে যায়। মশারা এর ঘ্রাণ সহ্য করতে পারে না। এছাড়া স্কারাব বিটলস, ট্রু বাগস, লংহর্ন বিটলস মথ নেভাল অরেঞ্জওয়ার্স নামক বিভিন্ন কীটপতঙ্গ এবং তেলা পোকার জটিল ফেরোমোন শনাক্ত করেন এবং বিশেস্নষণ করেন।

No comments

Powered by Blogger.