উচ্চ প্রবৃদ্ধি না মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ- কোন দিকে এগোব? by ড. শামসুল আলম

একজন নাগরিকের জন্য প্রশ্নযুক্ত ওপরের শিরোনামের প্রত্যাশিত উত্তর হবে, উচ্চ প্রবৃদ্ধি চাই, সেই সঙ্গে কম মূল্যস্ফীতি কিংবা শূন্য মূল্যস্ফীতি। প্রশ্নটা যত সহজে করা যায়, কোনো অর্থনীতিবিদের পক্ষে উন্নয়নশীল দেশের বাস্তবতায় এর উত্তর দেওয়া মোটেই সহজ নয়।
কেননা উচ্চ প্রবৃদ্ধি প্রবণতার সঙ্গে মূল্যস্ফীতি অঙ্গাঙ্গীভাবে একই দিকে ধাবিত হয়। উচ্চ মূল্যস্ফীতি উচ্চ প্রবৃদ্ধির সহগামী, এ কারণেই আর্থিক বাস্তবতায় উচ্চ প্রবৃদ্ধি না মূল্য নিয়ন্ত্রণ, কোনটা চাইব- এ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়ে থাকে। সমস্যাটা হলো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি জোর দিলে (সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি) প্রবৃদ্ধির হার কমে আসে। এ সরকার চার বছর আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে, দারিদ্র্য নিরসনে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনই তাদের পরিকল্পনায় উন্নয়নের প্রধান কৌশল হিসেবে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গৃহীত হয়। স্বল্পোন্নত দেশে দারিদ্র্য নিরসনের জন্য প্রবৃদ্ধি অর্জন বড় নিয়ামক। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য। বাংলাদেশে মাথাপিছু ১ শতাংশ আয় বৃদ্ধি হওয়া মানে ০.৮৯ শতাংশ দারিদ্র্য কমে যাওয়া। এক শতাংশ দেশজ প্রবৃদ্ধি মানে দুই লাখ ৫০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়া। এসব বিবেচনায় (দ্রুত দারিদ্র্য নিরসন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি) ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যথাযথভাবেই উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা আরো এই কারণে যে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরে নিম্নমধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার রূপকল্প প্রণয়ন করেছে, যা বাংলাদেশের প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় (২০১০-২০২১) প্রতিফলিত হয়েছে। এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জোরদার প্রচেষ্টা, ২০১০ ও ২০১১ আর্থিক বছরে ব্যারেল প্রতি জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের সাধারণ মূল্যস্ফীতি ২০১১ আর্থিক বছরে দুই অঙ্কের ঘরে উন্নীত হয় (১২ দশমিক ৫১ শতাংশ)। ওই একই সময়ে ভারত-চীনসহ উন্নয়নশীল অনেক দেশেই মূল্যস্ফীতিও প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছে যায়। আর্থিক বছর ২০১২-এর শেষার্ধ থেকে অবশ্য মূল্যস্ফীতি কমতে থাকে, তবে বাংলাদেশে তখনো সাধারণ গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা ২০১০ অর্থবছরে ছিল ১০ দশমিক ১৭ শতাংশ। ২০১২ সালে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যদিও মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং চলতি বছর ৭ শতাংশ। তার মানে মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশার বাইরে এখনো রয়েছে। মূল্যস্ফীতির কশাঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিম্নবিত্ত দিনমজুর, শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষ, দোকান কর্মচারী ও নিম্ন আয়ের বেতনভুক কর্মচারীরা। নিম্নমধ্যবিত্তকে তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয় সংকুলান করতে হিমশিম খেতে হয়। এসব শ্রেণী প্রবৃদ্ধির মাহাত্ম্য বোঝে না, তবে মূল্যস্ফীতির জ্বালাটা অনুভব করে হাড়ে হাড়ে। সে কারণেই মূল্যস্ফীতি ইস্যু রাজনৈতিকভাবেও অনেক সংবেদনশীল। শুধু আমাদের দেশেই নয়, এটা সব দেশেই সত্য। এ কারণেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে নির্বাচন হলে, সাধারণত গদিনসীন (incumbent) কোনো সরকারই ক্ষমতায় ফিরে আসে না। কাজেই ২০১৩ সালের পর পরই বাংলাদেশেও নির্বাচন হবে আশা করা যায় এবং সে কারণেই ক্ষমতাসীন দলের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টি অবশ্যই সংবেদনশীল বিষয়। মূল্যস্ফীতি সাধারণভাবে কোনো জনকল্যাণকামী সরকারই চাইতে পারে না। আমাদের মূল প্রশ্নটির প্রাসঙ্গিকতা এখানেই। দ্রুত দারিদ্র্য নিরসন, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য ২০১৩ সালের ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া, না সামগ্রিক চাহিদা (aggregate demand) নিবৃত্ত করে সংকোচনমূলক মুদ্রা ও রাজস্বনীতি দ্বারা মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা নেব? আমরা কোনটা চাইব? এ বিষয়ে আমার নিজস্ব বিবেচনা থেকে ২০১৩ সালের জন্য সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কিছু মতামত রাখতে চাই। এটি এ সময়ে আরো প্রাসঙ্গিক এ কারণে যে বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি মাসের শেষদিকে তাদের ষান্মাসিক মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে। সামগ্রিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতির একটি কার্যকর ভূমিকা রয়েছে বিধায় এই আলোচনা সময়োপযোগী ভাবছি (এক সময় পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নিং বডির একজন সদস্য থাকতেন, জিইডির কার্যপরিধির মধ্যে এখনো তা উল্লেখ আছে, বাস্তবে রাখা হয়নি)। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা একটি সরকারি দলিল। এটির লক্ষ্য (goal), অভীষ্ট উদ্দেশ্য(target) বাস্তবায়িত হয়ে থাকে প্রথমত, বাজেট প্রণয়নের মধ্য দিয়ে। বাজেটের যে উন্নয়ন জানালা (development window), সেখানে গণ খাতে, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নে প্রকল্প প্রণীত হয়ে থাকে। সেই প্রকল্পগুলো পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে প্রণীত হচ্ছে কি না তা মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ করে থাকে পরিকল্পনা কমিশন। লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমুদয় ব্যয় বরাদ্দ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বণ্টিত হওয়ার কথা, মানে রাজস্বনীতি পরিচালিত হয়ে থাকে পরিকল্পনা অনুযায়ী। অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনা করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি-কাঠামোর প্রধান উপাদান হচ্ছে মুদ্রা সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, সুদের হার ও বিনিময় হার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জনের গতি, মূল্যস্ফীতি কোন পর্যায়ে থাকবে প্রধানত তা নির্ধারণ করা।
বাংলাদেশ ব্যাংক আসন্ন মুদ্রানীতি ঘোষণার প্রাক্কালে (৩০ জানুয়ারি ২০১৩ সালের ষান্মাসিক মুদ্রানীতি ঘোষণার কথা ছিল) দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, সাবেক ব্যাংক গভর্নর, ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, গবেষক, এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছিল। আলোচনার প্রধান সূচি ছিল আসন্ন মুদ্রানীতি বিন্যাসে সবার মতামত জানতে চাওয়া। পত্রিকায় আলোচনার বিষয় প্রকাশিত হয়েছে। প্রথমেই বলে নিই, এ ধরনের মতামত বিনিময়ের উদ্যোগ অত্যন্ত সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এখন আলোচনার বিষয় হলো, আসন্ন মুদ্রানীতি বিন্যাসে আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য কী? দুটি প্রধান লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে, যা মুদ্রানীতি দ্বারা প্রভাবিত করা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, প্রবৃদ্ধির হার চলতি অর্থবছরে অর্জিত হবে ৬.১ থেকে ৬.৪ শতাংশ। স্মরণীয় যে চলতি বছর পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। জানি না কী ভিত্তি ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক এই অতি নিম্নমুখী (drastically down) প্রবৃদ্ধি হারের প্রাক্কলন করেছে। গভর্নর মহোদয় অবশ্য বলেছেন, এটি বিগত এক দশকের গড় প্রবৃদ্ধি হারের মধ্যেই থাকছে। এটায় কোনো সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়া যায় না। গত দুই বছর বাদ দিলে বলা যায়, বাকিটা সময় ছিল (২০০১-২০০৯) পরিকল্পনাবিহীন। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ফিরে এসে এবং একটি ভালো পরিকল্পনা প্রণয়নের পরও যদি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির হার পরিকল্পনাবিহীন সময়ের সমান হয়, তাহলে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন-দক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। অনুরোধ করব, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবৃদ্ধির হার পুনর্নির্ধারণের আগে বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখবে। জানি, বিশ্বব্যাংকও চলতি বছরের জন্য ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হার অর্জনের প্রক্ষেপণ করেছে। এটি নিয়ে আমি উৎকণ্ঠিত নই এ কারণে যে গত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ বিষয়ে প্রবৃদ্ধি হারের প্রক্ষেপণ কোনোটাই বাস্তবে সঠিক হয়নি। এ কথাও সত্যি, ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সামষ্টিক বিনিয়োগ হওয়া প্রয়োজন অন্তত জিডিপির ২৮ শতাংশ। ২০১২ আর্থিক বছরে আমাদের সরকারি ও বেসরকারি মোট বিনিয়োগ ছিল ২৫ শতাংশের কিছু কম। কাজেই ঠিক পরের বছরেই (২০১৩) বিনিয়োগের হার ২৮ শতাংশে উন্নীত হবে, এটা হয়তো আশা করা যায় না। সে ক্ষেত্রে এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে। উজ্জীবিত বেসরকারি খাত ও অধিক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন সফলতায় প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ শতাংশ কিংবা এর কিছু ওপরে অর্জন খুব কঠিন হবে, এটা মনে করি না। এ লক্ষ্যেই বরং মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন এবং আরো প্রয়োজন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অন্তত ৯৫ শতাংশের বেশি বাস্তবায়ন। যেহেতু মূল্যস্ফীতি বাড়তে দেওয়া যাবে না, মুদ্রানীতি কিছুটা হলেও সংকোচনমূলক হতে হবে। মানে মুদ্রা সরবরাহ (এম-২) সীমিত থাকবে সর্বোচ্চ ১৬-১৭ শতাংশের মধ্যে। যেহেতু অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যকেও সমর্থন দিতে হবে, তাই বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমানো যাবে না; বরং ঋণপ্রবাহের বৃদ্ধি ১৭-১৯ শতাংশ পর্যন্ত করা যেতে পারে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প ও কৃষি খাতে অবশ্যই ঋণের প্রবাহ কমানো যাবে না। অধিক ব্যাংক রিজার্ভ থেকেও দেশে মূল্যস্ফীতির কারণ ঘটতে পারে। সে কারণে বৈদেশিক রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগ আয় বাড়ানোর চেষ্টা নিতে হবে। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী- অনেকে অবশ্য বলেছেন, মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক নয়; বরং হবে পরিস্থিতি অনুযায়ী (accommodative) সমন্বয় ধরনের। তাই যদি হবে, তবে মুদ্রানীতি ঘোষণা করার যৌক্তিকতা কোথায়? যা-ই হোক, গত এক বছরের ঘোষিত মুদ্রানীতি আমাদের মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনায় কার্যকর হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের সংযত রাজস্বনীতিও (সরকারের ঘোষিত সীমার বাইরে ব্যাংক ঋণ না নেওয়া ও বাজেট ঘাটতি লক্ষ্য ছাড়িয়ে না যাওয়া) মুদ্রানীতিকে সফল করতে সমর্থন জুগিয়েছে। আসলে রাজস্ব ও মুদ্রানীতি কার্যকরভাবে সমন্বিত না থাকলে, মুদ্রানীতিতে সফলতা অর্জন প্রায় অসম্ভব। মুদ্রানীতি বিষয়ে সর্বশেষ যে কথা বলব তা হলো, আমাদের রপ্তানি খাত উজ্জীবিত রাখতে (উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে), অধিক রেমিট্যান্সপ্রাপ্তির প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে রপ্তানিমূল্য প্রতিযোগিতায় ভারতের সঙ্গে যেন পিছিয়ে না পড়ি, সে কারণে টাকার মূল্য (appreciation) বৃদ্ধি পেতে দেওয়া ঠিক হবে না। অন্তত স্থিতিশীল মুদ্রাহার (ডলারে ৮০-৮১ টাকা) যেন বজায় থাকে, এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্বার্থে আর যে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে তা হলো, বিনিয়োগের সুদের হার কমিয়ে আনার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিনিয়োগে সুদের হারের চেয়ে আমাদের দেশে অত্যধিক। গত ডিসেম্বরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। এই মূল্যস্ফীতির হারে বিনিয়োগে ব্যাংক সুদের হার ১৬-১৮ শতাংশ হতে পারে না। বিনিয়োগে এই উচ্চ সুদের হার উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির (cost push) এও অন্যতম কারণ। সঞ্চয়ে সুদের হার ও বিনিয়োগে সুদের হারের বিস্তৃতি ৪ থেকে ৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। আমাদের দেশে এটা সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ। এ ব্যাপারেও বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করব। সুদের হার না কমালে সামগ্রিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি আশা করা যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংক আগের মতোই অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণ কমিয়ে আনা ও বিলাসীপণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখবে, এটাই কাম্য। আমরা চাই, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের সব প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এবং সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি যেন অন্তত ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে না যায়, সে বিষয়ে মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি বাস্তবায়ন ও পরিচালনা করা হবে। প্রবৃদ্ধির জন্যই অভ্যন্তরীণ অর্থবাজারে যেন তারল্য সংকট সৃষ্টি না হয়, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বাস্তবায়নকালে সেটিও লক্ষ রাখতে হবে। আসলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরম দক্ষতাই হলো ভারসাম্য রক্ষায় নিপুণ পারদর্শিতা (act of balancing)।
লেখক : অর্থনীতিবিদ ও সদস্য, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি), পরিকল্পনা কমিশন

No comments

Powered by Blogger.