রশি টানুন

আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ঐতিহ্যবাহী দু’টি সংগঠন। বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করার কোন সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল।
ছাত্রলীগও এদেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা পালন করে। প্রাচীনতম সক্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ তার উজ্জ্বল ইতিহাস ও কৃতিত্বের ধারা অব্যাহত রেখে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে জনগণের সেবা করে চলছে। কিন্তু ঐতিহ্যমণ্ডিত এই দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নানান কারণে আজ ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়েছে। একশ্রেণীর অর্থ-স্বার্থলোভী, মতলববাজ তথাকথিত নেতাকর্মীর কারণে এই সংকট। বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান সময়ে সংঘাত-সংঘর্ষ যেন লেগেই আছে। হানাহানি, রক্তারক্তি, খুন-জখমের ঘটনাও ঘটছে মাঝেমধ্যে। সব সন্ত্রাস-সহিংসতা যে ছাত্রলীগ করছে, তা নয়। অনেকক্ষেত্রে শিবিরসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনও নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এসব অপকর্মের সঙ্গে যখন ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয় তখন বিষয়টি একদিকে যেমন ছাত্রলীগের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস ও ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করে তেমনি ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেও বিব্রত করে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার যখন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থাসহ আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করে চলেছে, সেই সময় শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস-হানাহানির ঘটনা সার্বিক অগ্রযাত্রার সঙ্গে একেবারেই বেমানান। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও নামীদামী পত্র-পত্রিকা সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রশংসা করছে; তারা তা করছে বাস্তব অবস্থা বিচার-বিশ্লেষণ করেই। এসব ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য খুবই প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে সংঘর্ষ-সন্ত্রাস, বিশেষ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত শনিবার ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং সে সময় স্থানীয় এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সরকারের বহুমুখী অর্জনকে ম্লান করছে। এই সন্ত্রাসীরা সুযোগসন্ধানী, অর্থবিত্তলোভী কিংবা অনুপ্রবেশকারী ছাত্রলীগকর্মী বা অন্য যে কোন পরিচয়ে। তারা যত খুঁটির জোরেই সংগঠনের ভেতরে-বাইরে ঘাপটি মেরে থাকুক না কেন; তাদের শনাক্ত করা এবং কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দায়িত্ব সরকারের। আর সরকারকে সে দায়িত্ব পালন করতে হবে অবিলম্বে।
সুযোগসন্ধানীরা সব সময় ক্ষমতাসীন সরকারের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করে এবং নানা কৌশলে তারা সে সুযোগ করেও নেয়। এদের মধ্যে যে কোন ছাত্র সংগঠনের কর্মী কিংবা অন্যরাও থাকতে পারে। তারা সেই সুযোগের অপব্যবহার করে টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তার ইত্যাদি অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। আর তখনই সৃষ্টি হয় নৈরাজ্য, রক্তারক্তি। ছাত্র সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করে, বিশেষ করে ছাত্রলীগের পরিচয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড এখনই কঠোরভাবে দমন করা জরুরী। তাদের লোভ আর স্বার্থের রশি এতটা প্রলম্বিত হয়ে গেছে যে, সেই রশি অবিলম্বে টেনে না ধরলে সরকারের ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

No comments

Powered by Blogger.