বায়ান্ন বাজার ॥ by তিপ্পান্ন গলি

 শীত ফুরিয়ে বসন্ত এসে গেছে। কিন্তু মহানগরীতে এর কোন চিহ্ন নেই। পলাশ তো নিশ্চিহ্ন, শিমুলও সহসা চোখে পড়ে না। কাজেই বসনত্মের রক্তিম উচ্ছ্বাস নগরবাসীর দৃষ্টির অগোচরেই রয়ে গেছে বলা চলে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গেলে কিছুটা অনুভব করা যায় যে এখন বসনত্মকাল। এখানকার সড়ক দিয়ে চলাচল করলে বা সোহরাওয়াদর্ী উদ্যান ও রমনা পার্কে গেলে, গাছের নিচে শুকনো পাতা দেখে বোঝা যায় বসনত্ম এসেছে। গাছ নব যৌবন প্রাপ্ত হয়েছে, পুরনো পাতা ঝড়িয়ে গজিয়েছে নতুন পাতা। বসনত্ম আসাতে অবশ্য এখন একটু করে বিকেল পাওয়া যায়। কিনত্মু কিছু দিন আগেও যখন শীত চলছিল দিনের মধ্যে বিকেল বেলার অসত্মিত্ব আর আলাদা করে টের পাওয়া যেত না, সূর্য কুয়াশার মোড়ক থেকে বের হলেই দেখা যেত মধ্য গগনে, অর্থাৎ বেলা দুপুর। তারপর পশ্চিমে সে ঝুঁকে পড়ল কি পড়শ না, অমনি আবার কুয়াশা গ্রাস করল সূর্যকে, আর দিগনত্ম মলিন করে নেমে এলো সন্ধ্যা। বসনত্ম আসায় এখন আবার অবস্থা পাল্টে যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে। সূর্য অসত্মাচলে গিয়েও যেন কিসের দ্বিধাদ্বন্দ্বে অপো করছে খানিকটা সময়। মন্থর হয়ে আসছে তার গতি। এখন বৃষ্টি না হলেও পশ্চিম আকাশে মাঝে মধ্যেই মেঘে মেঘে ছড়িয়ে দিচ্ছে অবির রঙের রেণু। উঁচু বাড়িগুলোর মাথায় গাছের শাখায়-পাতায় বুলিয়ে দিচ্ছে সোনালি রঙের পরশ। দিনের এই অনত্মিম মুহূর্তগুলো বড়ই মনোরম। আর এমনই মনোরম পরিবেশে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে মানুষ। ঘুরছে অমর একুশে বইমেলায়। যাচ্ছে এখানে সেখানে।
গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারের বইমেলা নগরবাসীর কাছে একটি আলাদা মাত্রা পেয়েছে। কারণ এখন রাষ্ট্র মতায় নেই জামায়াত মদদপুষ্ট সরকার, প্রগতিশীল চিনত্মায় ও সত্য কথা বলায় নেই কোন বাঁধা। বাঁধাহীন অবস্থায় পারছে মুক্তভাবে কথা বলতে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে। তাই এবার মেলায়ও অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি বই। তাঁর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের বই, যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে লেখা বইয়ের সংখ্যাও কম নয়। এ প্রসঙ্গে শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক কামাল লোহানী বই মেলায় বলেছিলেন, বিগত জোট সরকারের সময় অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের কথা, তাদের (জোট সরকার) নির্যাতনের কথা এমন কি যুদ্ধাপরাধীদের কথা বলতে পারেনি, তাঁরা এখন তা-ই লিখিতাকারে প্রকাশ করছে এই মেলায়। কারণ এখন মমতায় অছে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার।
নগরীতে এখন শীত আর তেমন অনুভূত হয়না। যতই দিন যাচ্ছে, বাড়ছে গরমের মাত্রা। আর সেই সঙ্গে শুরম্ন হয়ে গেছে নগরবাসীর সেই পুরনো যন্ত্রণা। এখনই নগরীর অধিকাংশ এলাকায় ওযাসার পানিতে আসতে শুরম্ন করেছে। ময়লা, আর দুর্গন্ধ তো রয়েছেই। মশার উৎপাতও বাড়ছে দিন দিন। লোডশেডিং শুরম্ন হয়ে গেছে। প্রতিদিন এলাকা ওয়াইজ দুই থেকে তিন ঘণ্টা, কোথাও আরও বেশি লোডশেডিং দিচ্ছে, ডেসা। তাই ভুক্তভোগী নগরবাসীর আশঙ্কা এখনই যদি এ অবস্থা হয় তাহলে এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাইয়ের দিকে কি হবে? তা বেভেই অনেকে অাঁতকে উঠছেন।
তা ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দাম দিন দিন বেড়ে চলেছে। চালের বাজার তো রীতিমতো অস্থিতিশীল। প্রতিদিনই বাড়ছে মোটা ও চিকন চালের দাম। যেভাবে পণ্যের দাম বাড়ছে, এতে মানুষের পকেট ফাঁকা হচ্ছে প্রতিনিয়তই। তাই নগরবাসীর সরকারের কাছে আবেদন, মূল্য স্থির রাখতে এখনই লাগসই ব্যবস্থা গ্রহণ করম্নন।

No comments

Powered by Blogger.