শিবিরের অস্ত্র গোলা বারুদ কোথায় গেল?

আবাসিক হলগুলোতে তাণ্ডব, ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক খুন ও অর্ধশত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে কুপিয়ে জখমের পর ক্যাম্পাসে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ ও বোমাবাজিতে ব্যবহৃত শিবিরের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদগুলো গেল কোথায়? এ প্রশ্ন এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক, শিার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সংলগ্ন এলাকার মানুষের।
তারা তা-বে অংশ নেয়া শিবির ক্যাডারদের গ্রেফতারের পাশাপাশি তাদের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। কারণ ওইসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার না হলে সেগুলো বার বার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং এতদঞ্চলের শিা প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত করতে ব্যবহার করা হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাজোট সরকার মতাসীন হওয়ার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে সংলগ্ন এলাকায় জামায়াত-শিবিরের প্রায় ২০ বছরের একক আধিপত্য কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে জামায়াত-শিবির তাদের ঘাঁটিগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব, উত্তর ও পশ্চিমে অনত্মত ১৫/২০ কিলোমিটার দূরে, ত্রেবিশেষে আরও নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় জামায়াত-শিবির পরিচালিত মেসগুলো আগের অবস্থানেই রয়েছে। নির্দিষ্ট মেসগুলো এখনও পরিচালিত হচ্ছে শিবিরের একক নিয়ন্ত্রণে। শিবির কর্মীরা কোন কারণে আবাসিক হলে অবস্থান করতে না পারলে যাতে ওইসব মেসে অবস্থান করতে পারে। প্রয়োজনে সংপ্তি সময়ের মধ্যে বাইরে থেকে আগত শিবির কর্মীরা সেখানে আশ্রয় নিয়ে পরিকল্পিতভাবে ক্যাম্পাসে আক্রমণ করতে পারে।
একটি অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী শহর ও সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকায় করণীয় নিয়ে বুধবার রাতে শিবির ক্যাডাররা নিরাপদ দূরত্বে স্থাপিত আসত্মানায় গোপন বৈঠক করেছে। ওই বৈঠককে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যনত্ম শিবির কর্মীদের নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। তবে কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে বৈঠক ও স্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি শিবির নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
ওয়াকিফহাল সূত্রগুলো বলছে, গত সোমবার রাত ৯টার পর দূরের ঘাঁটিগুলো থেকে শিবির কর্মীরা দলে দলে ওইসব মেস ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল। সুযোগ বুঝে তারা গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে হামলা তা-ব শেষে নিরাপদে পালিয়ে গিয়ে পুলিশ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে অবগত হয়ে পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করলেও পুলিশ কর্মকর্তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই শিবির কর্মীরা দলবেঁধে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তা-ব চালিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারম্নদ নিয়ে রাতের অাঁধার কাটার আগেই নিরাপদে ফিরে গেছে।
সূত্র জানায়, গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে শিবির ক্যাডাররা সংলগ্ন এলাকা শিবিরের মেস এবং মেহেরচ-ী পূর্বপাড়ার একটি আমবাগানে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের সঙ্গে শিবির পরিচালিত মেসের তত্ত্বাবধায়ক চকপাড়ার রবিউল এবং মেহেরচন্ডী পূর্বপাড়ার শাহীনকে দেখা গেছে। এছাড়া এক সময়ের দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সালেকীন, জাফর বাবুসহ বেশ কয়েকজনের নেতৃত্বে ঘটনার রাতে প্রায় দু'শ' শিবির ক্যাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে মেহেরচ-ী আমবাগান, শহীদ শামসুজ্জোহা হল সংলগ্ন বধ্যভূমি, মেহেরচ-ী চারম্নকলা ও সৈয়দ আমীর আলী হলের পিছন থেকে আবাসিক হলগুলোতে হামলা চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেিণ কাজলা, বিনোদপুর ও ধরমপুর, দাসমারী ও খোঁজাপুরের বিশেষ কিছু জামায়াতের অনুসারী শিক-কর্মকর্তা, কর্মচারীর বাসভবন ও মেস ব্যতীত শিবিরের পালানোর আসত্মানা হাতছাড়া হয়ে গেছে। ফলে অপারেশন শেষে পালিয়ে যাবার সুবিধার্থে শিবির কর্মীরা উত্তরপূর্ব বুধপাড়া, পবার দারম্নসা, পারিলা, নারিকেলবাড়িয়া, নগরীর নওদাপাড়া, পূর্বে চৌদ্দপায়া, কাটাখালি, মাসকাটাদীঘি, হরিয়ান, কাপাসিয়া প্রভৃতি এলাকায় জামায়াত-শিবিরের আসত্মানা ও মেসগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এসব এলাকায় শিবির কর্মীরা বিয়ে, টিউশনি, জায়গীর থাকার সুযোগে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবির যখন অন্য ছাত্র সংগঠনের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখন ওই শিবির কর্মীরা এসে অপারেশনে অংশ নেয়। এতে ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে শিবিরের অপারেশন জোরদার হয়। এসব বিষয়ে মতামতের জন্য শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.