দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই- ধর্ষণ বন্ধের জন্য সর্বপ্রথম যে কাজ জরুরী সেটি হচ্ছে অতিদ্রুত ধর্ষককে সোপর্দ করতে হবে আইনের হাতে

২৪ জানুয়ারি মানিকগঞ্জে চলন্ত বাসে নারী নির্যাতনের যে জঘন্য ঘটনাটি ঘটেছে সেটার খবর শুনে দেশবাসী স্তম্ভিত, মর্মাহত। এক গার্মেন্টস কর্মীকে চলন্ত বাসে নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটিয়েছে বাসটির চালক ও হেলপার।
বাসটি থেকে যাত্রীদের কৌশলে নামিয়ে দিয়ে তারা ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধটি ঘটিয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা দেশে নতুন নয়। বহুদিন ধরে নারীদের ওপর এই বর্বরতম নির্যাতনটি চালাচ্ছে এক শ্রেণীর দুর্বৃত্ত। মাঝে মাঝেই ধর্ষণের খবর পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়। এই অল্প কয়েক দিন আগে রাজধানীর মিরপুরে এক শিশু বালিকা ধর্ষিত হয়। কয়েকজন ধর্ষণ করে মেয়েটিকে। সম্প্রতি দিনাজপুরেও ঘটে এমনি এক ঘটনা। একই সঙ্গে টাঙ্গাইলেও কয়েকজন দুর্বৃত্ত এমনই ঘটনা ঘটায়। সম্প্রতি ধর্ষিত হয়েছে বেশ কয়েকজন নারী।
ধর্ষণ কি বাড়ছে? নানা সংস্থা বা সংগঠনের তথ্যে ধর্ষণের হিসাব পাওয়া যায়। মোটামুটি ধর্ষণের যেসব ঘটনার খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয় মূলত সেগুলোরই হিসাব পাওয়া যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। কিন্তু কথা হচ্ছে, যেসব ঘটনার খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয় বা যেগুলোর জন্য থানায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়, সেগুলোর বাইরেও অনেক ঘটনা ঘটে যেগুলো খবর থানা পর্যন্ত যায় না বা পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত হয় না। অনেক নারীই সামাজিক লজ্জা বা সম্মানহানির আশঙ্কায় এই তথ্য প্রকাশই করেন না বা পুলিশে অভিযোগ করেন না। তাছাড়া এমন অনেক অসহায় দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ধর্ষিত হলে প্রবল প্রতাপশালী দুর্বৃত্তের হুমকির ভয়ে বাইরে কোন কিছু প্রকাশ করে না। অল্প কিছু দিন আগে রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় এক মেয়ে শিশুর লাশ পাওয়া যায় এক অফিসের বাথরুম থেকে। ধারণা করা হয়, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হয়েছে। ধর্ষণ শেষে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে রেখে পালিয়ে যায়। কী হচ্ছে সমাজে! সমাজটা কি দিন দিন নারীদের জন্য শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্যের মতো হয়ে উঠছে? এখানে টিজিং, ওখানে অপমান, কোথাও ধর্ষণ, কোন স্থানে যৌতুকের জন্য নির্যাতন। এ জন্য কাউকে পুড়িয়ে মারা বা মারার চেষ্টা, কাউকে বিয়ে করতে চাইলে সে নারী তাতে রাজি না হলে এ্যাসিড নিক্ষেপ, ইত্যাকার ঘটনা মাঝেমধ্যেই বললে সঠিক বলা হবে না, প্রায়ই ঘটছে। মাঝখানে নারী নির্যাতনের ঘটনা খানিকটা কমে এলেও এখন বাড়ছে কিনা সেই প্রশ্নই সামনে এসে যায়।
সব ধরনের নারী নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি বিশেষ জরুরী। তবে সে সচেতনতা যে অনেকখানি রয়েছে তা বোঝা যায় সামাজিক নানা প্রতিবাদ থেকে। ধর্ষিত নারীর পক্ষে দাঁড়িয়ে ধর্ষক দুর্বৃত্তের ফাঁসি দাবি তোলা হয় মানববন্ধনে। মানুষ চায় দ্রুত ধর্ষণের বিচার হোক, অপরাধ প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক ধর্ষকের। নারী নির্যাতন বিশেষ করে ধর্ষণ বন্ধের জন্য সর্বপ্রথম যে কাজ জরুরী সেটি হচ্ছে অতিদ্রুত ধর্ষককে সোপর্দ করতে হবে আইনের হাতে। তার দ্রুত বিচার যাতে হতে পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের রয়েছে বিরাট ভূমিকা।
অপরাধীর কঠোর আইনগত শাস্তিই ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের ঘটনা কমাতে পারে। দুর্বৃত্তদের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে পারেÑমানুষ এটাই মনে করে।

No comments

Powered by Blogger.