এক শ’ বস্তা চাল আজ কক্সবাজারে মঞ্চায়ন

জাতিকে তৈরি করতে শিক্ষা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ‘এক শ’ বস্তা চাল’ মঞ্চ নাটকে তা স্পষ্ট। শিক্ষাকে সাধারণ মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও ঢাকার জাপান দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে ২০০৬ সালে এ নাটকের প্রযোজনাটি মঞ্চে আসে।
আজ বৃহস্পতিবার এবং আগামীকাল শুক্রবার কক্সবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে সন্ধ্যায় নাটকটির ৫৮ ও ৫৯ তম প্রদর্শনী মঞ্চস্থ হবে। শিক্ষার প্রয়োজন ও গুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে ১৫০ বছর আগে জাপানের বাস্তব সমস্যাকে নিয়ে, আধুনিক জাপানের উন্নয়ের নেপথ্যে এই নাটকটি উল্লেখযোগ্য দলিল হিসেবে মনে করা হয়। বাংলাদেশে সম্প্রতি মঞ্চ নাটকের একটি প্রবাহ গড়ে উঠেছে। দেশের নাট্যদলগুলোও নতুন আঙ্গিকে নাটক নির্মাণসহ মঞ্চ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। মঞ্চ নাটকের প্রতি দর্শকেরও যে একটা আকর্ষণ বেড়েছে এটা শিল্পকলা একাডেমীতে সান্ধ্যকালীন অধিবেশনে লক্ষ্য করা যায়। যে কয়টি নাটকের দল তাদের নাটক মঞ্চায়নে দর্শক নন্দিত হয়েছে বা হচ্ছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর নাট্যদল তার মধ্যে অন্যতম। দলটি ‘এক শ’ বস্তা চাল’ নাটকটি নিয়ে দেশে এবং বিদেশে আলোচনায় এসেছে। নাট্যমহলে নাটকটি নিয়ে চলছে অনেক গবেষণা। নাটকটি ২০০৮ সালে ইন্টারন্যশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আই.টি.আই) থেকে ‘উচিমুরা’ এবং ২০১১ সালে জাপানের ‘কোমে হিয়াপ্পিও’ পুরস্কারে ভূষিত হয়। এ পর্যন্ত ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর, ফেনী এবং চট্টগামে ‘এক শ’ বস্তা চাল’ নাটকটির মোট ৫৬টি প্রদর্শনী হয়েছে। গত ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সন্ধ্যায় নাটকটির ৫৭তম প্রদর্শনী হয়। জাপানী নাট্যকার ইয়াজো ইয়ামামতোর রচনায় নাটকটি অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক আব্দুস সেলিম এবং নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক গোলাম সারোয়ার। নাটকটির কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্বে আছেন ড. আইরিন পারভীন লোপা।
নাটকটি সম্পর্কে নির্দেশক গোলাম সারোয়ার বলেন, এ নাটকের কাহিনী গড়ে উঠেছে ১৮৬০ সালে জাপানের একটি বিপ্লবকে কেন্দ্র করে। এ বিপ্লবের আগে জাপানের একটি অঞ্চলে সিবুনদের রাজত্ব ছিল। পরে সেখানে মেইজি শাসন শুরু হয়। জাপান কোন এক সময়ে খুব অনুন্নত দেশ ছিল। তার প্রধান কারণ ছিল শিক্ষা। দেশে সবসময় মারামারি, কাটাকাটি ও হানাহানি লেগে থাকত। সে দেশে নাগাওকা নামে একটি শহর ছিল। শহরের মানুষ ছিল খুবই দরিদ্র ও অশিক্ষিত। এই দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলের মানুষের জন্য পার্শ্ববর্তী অঞ্চল মিনিআমা থেকে এক শ’ বস্তা চাল পাঠানো হয়। কিন্তু শহরের মেয়র ওই এক শ’ বস্তা চাল মানুষদের মধ্যে বিতরণ না করে বিক্রি করে যে টাকা পান তা দিয়ে একটি স্কুল তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শহরের সামুরাইরা অর্থাৎ দরিদ্র মানুষেরা এতে বাদ সাধেন। তাদের দাবি ছিল ‘আমরা না খেয়ে মরে যাচ্ছি, আর এ টাকা দিয়ে স্কুল বানানো হচ্ছে এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না’। শহরের মেয়র তার পরিকল্পনায় অটুট ছিলেন এবং তিনি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছিলেন যে স্কুল তৈরি করবেনই। তার মতে কোন জাতিকে উন্নতির শিক্ষরে উঠতে গেলে আগে প্রয়োজন শিক্ষা। আগে লেখাপড়া শিক্ষতে হবে তাহলে আর তারা দরিদ্র থাকবে না। এ জন্যই তিনি চাল বিক্রির টাকা দিয়ে স্কুল বানাতে বদ্ধপরিকর। এভাবেই নাটকের কাহিনী গড়ে উঠেছে। আমার কথা হলো সেই দীক্ষায় জাপান আজ এই পর্যায়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। এখন সে দেশ শিক্ষায়-দীক্ষায় এত উন্নতি করেছে তাদের দরিদ্রতা বলতে কিছু নেই। আমাদের ছোট্ট একটি ভূখ-। এখানে মানুষের বসবাস অনেক বেশি। আমাদের মতো দরিদ্র একটি দেশে এই ধরনের শিক্ষা নেওয়া উচিত যাতে আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। শুধুমাত্র পরমুখাপেক্ষি হয়ে বসে থাকলে আমাদের দেশ কখনই উন্নতি করতে পারবে না। শিক্ষায়-দীক্ষায় আমাদের আরও বেশি অগ্রসর হতে হবে তাহলে হয়ত আমার একদিন জাপানের চেয়েও একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে পারব। এই বিষয়কে ধারণ করে আমি নাটকটি তৈরি করতে প্রয়াস পেয়েছি। জাতি এ নাটক থেকে দেশ উন্নয়নের একটি আলোকবর্তিকা খুঁজে পাবে।
নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফয়েজ জহির, জুনায়েদ ইউসুফ, খুরশিদ, গোলাম শফিক, আবুল কালাম আজাদ সেতু, নুরুজ্জামান রাজা, সিক্ত, জয়িতা, পিয়া, তন্ময়, সুকর্ণ, তাওহীদ ও আজাদ।
গৌতম পা-ে

No comments

Powered by Blogger.