আজ থেকে নামবে ঢল, পর্নোগ্রাফির স্টল! একাডেমীর লজ্জা- বইমেলা প্রতিদিন

 অন্যান্য বছর এ সময়ে দু'-এক দিন বৃষ্টি হয়ে যায়। এবার এখনও তা হয়নি। তবে মাঝে মধ্যেই সূর্য মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে। মনে হয় মেলা শেষ হওয়ার আগে বৃষ্টি আসবে।
কারণ এখন দিন দিনই মেলায় ভিড় বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ধুলাবালি। মেলা প্রাঙ্গণে পানি ছিটানো হচ্ছে, কিন্তু লোক সমাগম বেশি হওয়ায় তাতে কুলোচ্ছে না। তার ওপর আজ শুক্রবার থেকে শুরম্ন হয়ে গেছে লম্বা ছুটি। কাল শনিবার, আর পরশু একুশে ফেব্রম্নয়ারি। টানা এই ছুটিতে বাঙালীর ঢল নামবে যে তা আর বলার অপেৰা রাখে না। তখন যে কি হবে, তা সহজেই অনুমেয়। তার ওপর আজ আবার শিশু ও মহিলা প্রহর। আজ থেকেই নামবে মানুষের ঢল। এই দিকটিতে নজর দিতে হবে একাডেমীকে। এদিন একাডেমীর ইতিহাসে লজ্জা শব্দটি যুক্ত হলো। কারণ তাদের হাত দিয়েই একাডেমীর মূল চত্বরে স্টল পেয়েছে পর্নোগ্রাফির সাপস্নাইয়ার যৌবনযাত্রা। যা সচেতন মহলের অনুভূতিতে বেশ আঘাত করেছে। তবে একাডেমীর কাছ থেকে স্বচ্ছ কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভাষার মাস একুশ। এই পবিত্র মাসে বাঙালীর গর্বের ও অহঙ্কারের অনুভূতিতে আবারও আঘাত হানল জামায়াত-শিবিরের অঙ্গ সংগঠন যৌবনযাত্রা ফোরাম। তারা পর্নোগ্রাফির স্টল দিয়ে বসেছে অমর একুশের বইমেলায়। বাংলা একাডেমীর চার দেয়ালের ভেতরেই তারা স্টল বরাদ্দ পেয়েছে। যৌবনযাত্রা শিরোনামে ৩০৬ নম্বর স্টলটি থেকে তারা পর্নোগ্রাফির সিডি বিক্রি করছে। 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই' এই শিরোনাম ব্যবহার করে তারা টিনএজ সদস্য সংগ্রহ করছে, যৌবনযাত্রার ওয়েব সাইট নম্বরটি দিয়ে দিচ্ছে। যৌবনযাত্রার ওয়েব সাইটে ঢুকে দেখা গেছে বাঙালী টিনএজ ও তরম্নণী মেয়েদের নগ্ন ও অর্ধনগ্ন হাজার হাজার স্টিল ছবি এবং কুরম্নচিপূর্ণ মনত্মব্যে ঠাসা। দেশের কোটি কোটি মানুষ ও বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এই অনুভূতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তারা হাজার হাজার যুবকের জীবনবৃত্তানত্ম সংগ্রহ করেছে। যুব সমাজের ধ্বংস তো অবশ্যই, এ ছাড়া আর কি কি উদ্দেশ্যে তারা এ কাজটি করছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। বাঙালীর মেধা ও মননের প্রতীক বাংলা একাডেমী কিভাবে জামায়াতী এই সংগঠনকে স্টল বরাদ্দ দিল, তা নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেরই ধারণা বাংলা একাডেমীর ভেতরেই ঘাপটি মেরে আছে জামায়াতী লোকজন। এ বিষয়ে একাডেমীর মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বিষয়টি তেমনভাবে আমলে না নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, টাস্কফোর্সকে বলে দিয়েছি তারা ব্যবস্থা নেবে। তবে রাত অবধি স্টলটি বিষয়ে টাস্কফোর্স বা একাডেমী কেউই কোন ডিসিশন নেয়নি।

লেখকের কথা
এখন প্রায় প্রতি দিনই কবি-সাহিত্যিক ও বিশিষ্টজনেরা মেলায় আসছেন। বসছেন বিভিন্ন স্টলে। দিচ্ছেন পাঠকদের তাঁর কেনা বইয়ে অটোগ্রাফ। এদিন মেলায় দেখা গেছে ইমদাদুল হক মিলন, কামাল লোহানীসহ আরও অনেকে। এদিন নিজের বই প্রসঙ্গে কামাল লোহানী বলেন, দু'-চার দিনের মধ্যে এবারের মেলায় আসবে দু'টি বই। তার একটি নাচের ওপর, আর অন্যটি রাজনৈতিক। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের রাজনৈতিক হালচালই উঠে এসেছে রাজনীতি বিষয়ক বইটিতে। মেলায় দিন দিন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলা একাডেমীকে মেলার জায়গা অবশ্যই বাড়াতে হবে। তা না হলে মেলাকে এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এখন এত লোক আসছে যে, কারও ইচ্ছে থাকলেও ভিড়ের কারণে বই না কিনেই চলে যাচ্ছে। মেলার এই ঢল আমাদের ধরে রাখতে হবে। কারণ এ মেলাই ভবিষ্যতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে রাখবে।

মোড়ক উন্মোচন
এখন মেলায় প্রতি দিনই নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবারও প্রায় দু'ডজন বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়। এদিন উলেস্নখযোগ্যের মধ্যে কামাল লোহানী 'একুশের গান' বইয়ের ও সিডির মোড়ক উন্মোচন করেন। কবি মোহন রায়হানের কবিতার বই কবি কাপুরম্নষ হলে পৃথিবীতে নামে অন্ধকার-এর মোড়ক উন্মোচন করেন কবি নূরম্নল হুদা। আজহার সরকারের হৃৎপি-ে অন্ধকার ও ৰুধিত পাষাণ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন ডা. হারম্নন রশীদ ও অসীম সাহা। প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী সঞ্জীব চৌধুরীর গানের খাতা-এর মোড়ক উন্মোচন করেন শিল্পী বাপ্পা মজুমদার। মোহন খানের মেঘ বালিকার প্রশ্ন বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান।

নতুন বই
এদিনও মেলায় নতুন বই এসেছে শতাধিক, ১১৪টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কবিতার বই, ৩৪টি। উপন্যাস ১৯টি, গল্প ১২টি, প্রবন্ধ ৯টি এবং বাকিগুলো অন্যান্য বই। এদিনের উলেস্নখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ড. হারম্নন-অর-রশীদের ভদ্রপাড়ায় থাকে না ঈশ্বর রবীন্দ্রকাব্যে সাধারণ মানুষ, তারেক শামসুর রেহমানের বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর ও বাংলাদেশের পূর্বাপর পররাষ্ট্রনীতি এনেছে শোভা প্রকাশ। অনিন্দ্য এনেছে বেবী মওদুদ সম্পাদিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবার এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বই দু'টি। ড. ইসরাইল খানের নজরম্নলের ঢাকার দাঙ্গা ও মুক্তবুদ্ধির লেখকদের দুষ্প্রাপ্য রচনাবলী এনেছে কাঁশবন। তানভীর আলাদিন ও কাজী ফয়সালের মুজিব মানে বাংলাদেশ এনেছে সাহিত্যদেশ। ফজল এ খোদার জাগল বাঙালী জাগল এনেছে জ্যোতি প্রকাশ। আবুল হাসানের অপ্রকাশিত কবিতা এনেছে বিভাস। হুমায়ূন আহমেদের নলিনী বাবু বিএসসি এনেছে কাকলী। ড. রহমান হাবিবের প্রাচ্যতত্ত্ববাদীদের জবাবে ইসলাম এনেছে সূচীপত্র। ড. মাজরম্নহা হোসেন সেঁজুতির নজরম্নল সঙ্গীতের সৌন্র্দযতত্ত্ব এনেছে তরফদার। নবরাগ এনেছে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের মরমী কবি হাছন রাজা। শেখ নওশের আলী হিরার একজন যুদ্ধাপরাধীর জবানবন্দী এনেছে নিউ শিখা প্রকাশনী। শ্রাবণ এনেছে চৌধুরী লেনিন মোজাম্মেলের পত্রকাব্য, এই বইটিতে লেখক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ছাত্রাবস্থার নানা স্মৃতি কবিতায় তুলে এনেছেন। ভাষা আন্দোলনের ঘটনাবলীর আলোকচিত্রের এ্যালবাম এনেছে পপুলার গ্রম্নপ এবং কবি আসাদ চৌধুরীর ভ্রমণ কাহিনী এ ভ্রমণ আর কিছু নয় এনেছে উৎস।

No comments

Powered by Blogger.