আবার বিদ্রোহ শিবিরে, এবারও মুজাহিদকে প্রতিরোধের ডাক

 গণপদত্যাগের মধ্যে গঠনতন্ত্র বাদ দিয়ে ইচ্ছেমতো কমিটি গঠনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিদ্রোহের মুখে পড়েছে শিবিরের নতুন সেক্রেটারিসহ কার্যকরী পরিষদ। কমিটিকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক অভিহিত করে তাকে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন বিদ্রোহীরা।
শিবিরের কর্মী, সমর্থক, সাথী ও সদস্যরা একই সঙ্গে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার দায়ে জামায়াত নেতা মুজাহিদ, রফিকুল ইসলাম খান, নুরম্নল ইসলাম বুলবুল এবং শিবির সভাপতি রেজাউল করিমকে দেশব্যাপী প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন। 'সেভ শিবির' ব্যানারে আন্দোলনরত এই বিদ্রোহীদের ঘোষণা, সারাদেশে নির্বাচনের নামে হয়েছে প্রহসন। রেজাউল করিমসহ পুরো পরিষদ বাতিল করে ভোটের মাধ্যমে নতুন সভাপতি ও সেক্রেটারি নির্বাচন করতে হবে। অন্যথায় প্রতিরোধ অনিবার্য। বিদ্রোহ সামাল দেয়ার আশায় তড়িঘড়ি করে শনিবার ছুটির দিনেই নতুন কার্যকরী পরিষদ গঠন করেছিল শিবির। পদত্যাগী নেতা ডা. আব্দুলস্নাহ আল মামুনকে বাদ দিয়ে ডা. ফখরম্নদ্দিন মানিককে করা হয়েছে নতুন সেক্রেটারি। বিদ্রোহে অংশ নেয়ার অভিযোগে বাদ দেয়া হয়েছে কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী ১০ শিবির নেতাকে। জানা গেছে, সমপ্রতি শিবিরের সেক্রেটারিসহ কার্যকরী পরিষদের ২৬ সদস্যের একযোগে পদত্যাগের পর জামায়েত নেতারা সঙ্কট সমাধানে দ্রম্নত কমিটি গোছানোর উদ্যোগ নেয়। জামায়েতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরম্নদ্ধে শিবিরে ব্যাপক ৰোভ ছড়িয়ে পড়ায় দফায় দফায় বৈঠক করেন জামায়েত আমির মতিউর রহমান নিজামী। কিন্তু শিবিরের বিদ্রোহের মধ্যেও নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চালিয়ে যান আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, জামায়েতের ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল নুরম্নল ইসলাম বুলবুল। এই অবস্থায় গত বৃহস্পতিবারই শিবিরের বিদ্রোহীরা মেইল ও ফ্যাক্স যোগে আশঙ্কা প্রকাশ করেন, দেশব্যাপী কোথায় কিভাবে নির্বাচন হয়েছে তার কোন খবর নেই। কারা ভোট দিয়েছে তারও কোন হদিস নেই। কিন্তু তার পরেও নতুন কার্যকরী পরিষদ গঠনের কাজ চলছে। বিদ্রোহীরা বলেন, সভাপতি হিসেবে জামায়েতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের আশীর্বাদপুষ্ট রেজাউল করিমকেই রাখা হবে। সারাদেশে কার্যকরী পরিষদ (কাপ) নির্বাচনে অংশ নেয়নি অধিকাংশ সদস্য। তার পরেও সভাপতি রেজাউল করিম তাঁর ইচ্ছেমতো কার্যকরী পরিষদ (কাপ) গঠন করতে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার ছুটির দিনেই প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেক্রেটারি হিসেবে শিবিরের ঢাকা মহানগর পূর্ব, পশ্চিম ও দৰিণের সভাপতি ডা. ফখরম্নদ্দিন মানিককে সেক্রেটারি করে নতুন কার্যকরী পরিষদ গঠনের কথা জানানো হয়। একই সঙ্গে ২০১০ কর্মকালের জন্য সংগঠনের ১১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েটও ঘোষণা করা হয়। শিবিরের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিকেলে কার্যকরী পরিষদ ঘোষণার আগে সকালেই কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত ১০ বিদ্রোহী নেতাকে সংগঠন থেকে অপসারণের সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়। পরিষদের সাধারণ অধিবেশনে নেয়া হয় এই সিদ্ধানত্ম। যদিও সদস্যরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে সংবিধান অনিুযায়ী কাউকে বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। শিবির সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরীর আমির রফিকুল ইসলাম খান ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। সূত্র জানিয়েছে অপসারিত নেতাদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন- জুবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, নাসির আহমেদ মোলস্না, নজরম্নল ইসলাম, আনিসুর রহমান, জাকির হোসাইন, আসাদ উদ্দিন, শাহরিয়ার আলম সিফাত, ডা. শহিদুলাহ শরিফ, শামসুদ্দিন। নির্বাচিত নেতাদের অপসারণের খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ভোট গণনা শেষ হলেও বিদ্রোহীরা অনেকে নির্বাচিত হয়ে আসায় ফল ঘোষণা করেনি সংগঠনটি। শিবিরের বিদ্রোহী নেতাদের ব্যাপারে সিদ্ধানত্ম নিতে বৃহস্পতিবার রাতেই রাজধানীর বড় মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সভায় মিলিত হয়েছিলেন জামায়াতের সর্বোচ্চ ফোরাম নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা। ঐ বৈঠক কোন সিদ্ধানত্ম ছাড়াই শেষ হয়। এরপর শুক্রবার পুনরায় বৈঠকে বসেন তাঁরা। বৈঠকে মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ নির্বাহী পরিষদের ১৬ সদস্যের অধিকাংশই উপস্থিত ছিলেন। ঐ সভার সিদ্ধানত্মের পর কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে শিবির। শিবিরের ১১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েট গঠন করেছে শিবির। এখানেও এসেছে জামায়েতের ৩ শীর্ষ নেতার আশীর্বাদপুষ্ট নেতারাই।
শনিবার শিবিরের নতুন সেক্রেটারিসহ পরিষদ ঘোষণার পর পরই পুরো বিষয়টি নিয়ে অসনত্মোষ ছড়িয়ে পড়েছে শিবিরের কর্মী, সমর্থক, সাথী ও সদস্যদের মাঝে।

No comments

Powered by Blogger.